অস্ট্রেলিয়ার অফস্পিনার নেথান লায়ন।
বড় দিনের সকালে অভিনব মহড়া চলল ভারতীয় শিবিরের। মেলবোর্নে বক্সিং ডে টেস্টের জন্য হনুমা বিহারীরা পিচে ‘রাফ’ তৈরি করে নিয়ে ব্যাটিং অনুশীলন করলেন। বুঝতে বাকি থাকার কথা নয় যে, অস্ট্রেলিয়ার অফস্পিনার নেথান লায়নের জন্যই এই বিশেষ অনুশীলন।
এমনিতে বড় দিনেও ভারতীয় দলের কেউ কেউ মাঠে এলেন। বিরাট কোহালি এসে প্রেস কনফারেন্স করে গেলেন। তবে ভারত অধিনায়ক আর নেটে ব্যাট করতে নামেননি এ দিন। তেমনই দেখা যায়নি প্রথম একাদশের অনেককে। তবে হনুমা বিহারীকে দেখা গেল এসেই প্যাড পরে নেটের মধ্যে ঢুকে পড়েছেন। শুরুতে জোরে বোলারদের খেলার জন্য থ্রোডাউন নিলেও পরে চলে গেলেন স্পিনারদের নেটে। আর সেখানেই বোলারদের বুটের স্পাইক ঘষে ঘষে অফস্পিনারের গুডলেংথ স্পটে ক্ষত তৈরি করা হল। তার পর বিহারী ব্যাট করা শুরু করলেন। আম্পায়ারের জায়গা থেকে দেখতে থাকলেন কোচ রবি শাস্ত্রী। অন্যান্য আরও কয়েক জন ভারতীয় ব্যাটসম্যানও ‘রাফ’ তৈরি করা পিচে একই রকম অনুশীলন করে গেলেন।
চার বছর আগে নেথান লায়ন ভারতের বিরুদ্ধে সিরিজে নিয়েছিলেন ২৩ উইকেট। সেটাই ভারতের বিরুদ্ধে নিজেদের দেশের মাঠে কোনও স্পিনারের নেওয়া সিরিজে সব চেয়ে বেশি উইকেট। এ বারে দু’টো টেস্টে লায়নের ইতিমধ্যেই ১৬ শিকার হয়ে গিয়েছে। তাঁকে আলাদা গুরুত্ব দেওয়ার তাই যথেষ্টই কারণ রয়েছে। বিহারীকে এমনিতে ছয় নম্বর থেকে উঠে এসে মেলবোর্নে নতুন বল খেলতে হবে। সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে তবেই লায়নের মুখে পড়বেন। কিন্তু বড়দিনের উৎসবের মেজাজের মধ্যেও অনুশীলনে এসে তিনি বুঝিয়ে দিলেন, প্রস্তুতিতে কোনও ফাঁক রাখতে চান না। দ্বিতীয়ত, অস্ট্রেলিয়ার সব রকম অস্ত্রের মোকাবিলায় তৈরি থাকছেন।
মনে করা হচ্ছে, মেলবোর্ন এবং সিডনিতে আরও বেশি সাহায্য থাকতে পারে লায়নের জন্য। এমসিজি-র পিচ নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে। গত বছর অ্যাশেজের ম্যাচে নিষ্প্রাণ পিচকে আইসিসি ‘পুয়োর’ রেটিং দিয়েছিল। তার পরে নতুন কিউরেটর আনা হয়েছে। নতুন টিম নিয়ে নতুন করে পিচকে ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করেছেন তিনি। তাতেও কতটা কী উন্নতি হয়েছে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে অনেকের। কিউরেটর ম্যাট পেজ বক্সিং ডে টেস্টের জন্য ঘাস ছেড়েছেন পিচে। তাতে শুরুর দিকে সতেজ ভাব আসবে না কি পরের দিকে গিয়ে পিচ ভাঙবে, তা নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। যদিও ‘ড্রপ-ইন’ পিচ শেষের দিকে গিয়ে ভাঙারই কথা। অ্যাডিলেড এবং পার্থে লায়নের ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা দেখেই সম্ভবত বিশেষ প্রস্তুতি সেরে রাখলেন বিহারীরা।
এমনকি, অশ্বিনকেও দেখা গেল বোলিং করছেন। একশো শতাংশ ফিট হননি বলে মেলবোর্নে খেলানো হচ্ছে না অশ্বিনকে। কিন্তু বড় দিনে প্র্যাক্টিসে এসে তিনি ব্যাটিং-বোলিং সবই করলেন। যদিও টিম ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে জানানো হল, অশ্বিন একশো শতাংশ ফিট নন। আশা করা যায়, সিডনিতে শেষ টেস্টের আগে সুস্থ হয়ে উঠবেন। প্র্যাক্টিস শেষে অশ্বিনকে দেখা গেল বিহারীকে নিয়ে মেলবোর্নের বাইশ গজ দেখতে গেলেন।
বিহারীরা যখন পিচে ক্ষত তৈরি করে ব্যাটিং প্র্যাক্টিস করছিলেন, তার পাশেই তখন অনুশীলন করছিল অস্ট্রেলিয়া দল। তাঁদেরও সকলে আসেননি। টিম পেনকে দেখা গেল বাঁ হাতি স্পিনের বিরুদ্ধে ব্যাটিং প্র্যাক্টিস করছেন। বোঝাই গেল, তত ক্ষণে তাঁরাও জেনে গিয়েছেন, ভারত অশ্বিনকে পাচ্ছে না। রবীন্দ্র জাডেজার বাঁ হাতি স্পিনই তাই খেলতে হবে।
দুপুর থেকে যাবতীয় আলোচনা অবশ্য ঘুরে গেল ভারতীয় ওপেনিং জুটি নিয়ে। বলাবলি শুরু হয়ে গেল যে, অত্যন্ত সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কোহালিরা। তবে ভারতীয় শিবিরের মনোভাব যা আঁচ পাওয়া গেল, দুই ওপেনার একেবারেই ভাল শুরু করতে পারছেন না। মুরলী বিজয় দুই টেস্টের চার ইনিংসে করেছেন ৪৯। গড় ১২.২৫। কে এল রাহুলের চার ইনিংসে সংগ্রহ ৪৮। গড় ১২। ধরেই নেওয়া হচ্ছে, নতুন বলে ভারত দুই উইকেটে ১০ হয়ে যাবে আর তার পরে চেতেশ্বর পূজারা এবং বিরাট কোহালি যদি দাঁড়াতে পারেন, বড় স্কোর করার সম্ভাবনা থাকবে। তাই মনে করা হচ্ছে, বিজয়-রাহুলের ব্যর্থ জুটি টেনে লাভ কী হবে? তার চেয়ে নতুন কম্বিনেশন চেষ্টা করাই ভাল।
এর সঙ্গে থাকছে ওপেনিং নিয়ে আতঙ্কের সব পরিসংখ্যান। বীরেন্দ্র সহবাগ ও গৌতম গম্ভীরের বিদায়ের পর থেকে অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা বা ইংল্যান্ডে শোচনীয় ফর্ম চলছে ওপেনিং জুটির। ২০১৪ ইংল্যান্ডে ওপেনিং জুটির গড় ছিল ২২ মতো। কাছাকাছি সময়ে অস্ট্রেলিয়া সফরে গড় ছিল প্রায় ৩২। চলতি বছরে দক্ষিণ আফ্রিকায় ছয় ইনিংসে ওপেনিং জুটির গড় ছিল ১৮। ইংল্যান্ডে দশ ইনিংসে গড় ছিল ২৩। অস্ট্রেলিয়ায় এই সিরিজে এখনও পর্যন্ত দুই টেস্টের চার ইনিংসে ওপেনারদের গড় ১৮।
অর্থাৎ, দু’টো-একটা সিরিজে নয়, দীর্ঘ দিন ধরে ব্যর্থতা চলছিল। যা ইঙ্গিত, বাদ পড়া দুই ওপেনার খুব তাড়াতাড়ি ফিরলে অবাক হতে হবে!