মর্মান্তিক: রবিবার বর্ধমানের পালসিটের কাছে এই গাড়ি দুর্ঘটনাতেই গুরুতর আহত বাংলার তিন মহিলা নির্বাচক। নিজস্ব চিত্র
পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হলেন বাংলার মহিলা ক্রিকেট দলের তিন নির্বাচক তথা প্রাক্তন ক্রিকেটার। জখম হয়েছেন গাড়ির চালকও। হাসপাতাল ও সিএবি সূত্রে জানা গিয়েছে, আপাতত তাঁদের প্রত্যেকের অবস্থা স্থিতিশীল। আজ সোমবার দুপুরে, কলকাতায় চিকিৎসার জন্য আনা হচ্ছে চার জনকেই।
রবিবার সকালে ২ নম্বর জাতীয় সড়কে পূর্ব বর্ধমানের পালসিটের কাছে দুর্ঘটনাটি ঘটে। বর্ধমানেই একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় আহতদের। রবিবার রাতে সেখানেই ভর্তি ছিলেন তিন নির্বাচক ও গাড়ির চালক। দুপুরেই আহতদের দেখতে কলকাতা থেকে ছুটে যান সিএবি সচিব অভিষেক ডালমিয়া, যুগ্ম সচিব দেবব্রত দাস। রাতে সেখান থেকেই সিএবি সচিব বললেন, ‘‘চিকিৎসক ও আহতদের পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছে। সোমবার দুপুরে দুর্ঘটনায় জখম তিন মহিলা নির্বাচক ও চালককে কলকাতা নিয়ে যাব পরবর্তী চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচারের জন্য।’’ সিএবি সূত্রে জানা গিয়েছে, বাংলার মহিলা দলের তিন নির্বাচক পূর্ণিমা চৌধুরী, শ্যামা দে ও চন্দনা মুখোপাধ্যায় এ দিন গাড়িতে কলকাতা থেকে সিউড়ির বড়গুনসিমাতে অনূর্ধ্ব-২৩ ক্রিকেটারদের একটি প্রতিভা অন্বেষণ শিবিরে যাচ্ছিলেন। পালসিটের কাছে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রাকের পিছনে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ধাক্কা মারে গাড়িটি।
দূর্ঘটনার খবর প্রথমে পাননি সিএবি কর্তারা। সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ এই খবর প্রথমে পান বাংলার প্রাক্তন ক্রিকেটার ও রাজ্যের বর্তমান ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী লক্ষ্মীরতন শুক্ল। তিনিই পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ সুপারকে ফোন করে উদ্ধারকার্যে তদারকি করেন। লক্ষ্মীরতনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বললেন, ‘‘সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ খবরটা পেয়েই দ্রুত পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ সুপারকে ফোন করি। যোগাযোগ করি সিএবি কর্তাদের সঙ্গেও। পুলিশ গিয়ে গাড়ির দরজা ভেঙে বার করে আনেন মহিলা ক্রিকেট দলের তিন নির্বাচক-সহ চালক বিশ্বজিৎ পারিদাকে। তিন নির্বাচক এবং গাড়ির চালককে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করান পালসিট ক্যাম্পের পুলিশকর্মীরা।’’ যোগ করেন, ‘‘দেরি হলে আহতদের শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হতে পারত। সকলের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।’’
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, জখম ব্যক্তিদের প্রত্যেকেই মাথায় চোট পেয়েছেন। সঙ্গে কারও থুতনিতে চোট রয়েছে। কারও পা ভেঙেছে। কেউ নাকে-মুখেও চোট পেয়েছেন। শরীরে একাধিক জায়গায় হাড় ভেঙেছে চার জনেরই। হাসপাতালে আনার সময়ে পূর্ণিমা দেবীর জ্ঞান থাকলেও বাকিরা অচৈতন্য অবস্থায় ছিলেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা বলেন, ‘‘পূর্ণিমা দেবী ব্যক্তিগত কেবিনে থাকলেও বাকিদের আইসিইউ-তে রাখা হয়েছে। ভর্তি করার সময়ে চন্দনাদেবীর কান দিয়ে রক্তপাত হচ্ছিল। তাঁর পা-ও ভেঙেছে।’’ তবে রাতে হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার আদিত্যপ্রসাদ রায় বলেন, ‘‘চিকিৎসা চলছে। আপাতত প্রত্যেকেই স্থিতিশীল।’’
সিএবি সচিবও ধন্যবাদ জানিয়েছেন লক্ষ্মীরতন ও বর্ধমানের প্রশাসনকে। চিকিৎসার বিষয়ে সিএবি সব রকম সহযোগিতা করবে বলেও আশ্বাস দেন সচিব। ঘটনাটি নিয়ে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। রাস্তার পাশে ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জাতীয় সড়ক ধরে যাতায়াতকারী নানা গাড়ির চালক ও যাত্রীদের অনেকেও। পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দুর্ঘটনার কথা জেনে ট্র্যাফিক পুলিশের কর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’