জুটি: কুটিনহোর সঙ্গে বোঝাপড়া জমছে মুলারের (ডান দিকে)। ফাইল চিত্র
শালকের ঘরের মাঠ ভেলটিস এরিনার নীল সমুদ্রে লাল ঝড়ের অন্যতম কারিগর তিনি। বুন্দেশলিগার প্রথম ম্যাচে হেরথা বার্লিনের বিরুদ্ধে ড্রয়ের ধাক্কা কাটিয়ে বায়ার্ন মিউনিখ জয়ের সরণিতে ফিরেছে তাঁর সৌজন্যেই। তাই নিজে গোল না পেলেও আক্ষেপ নেই থোমাস মুলারের। তিনি উচ্ছ্বসিত সতীর্থ রবার্ট লেয়নডস্কির দুর্দান্ত হ্যাটট্রিক ও বায়ার্নের জয় নিয়ে। ম্যাচের পরে মিক্সড জ়োনে ভারতীয় সাংবাদিকদের সামনে খোলামেলা মেজাজে থোমাস মুলার।
এই মরসুমের পরিকল্পনা: বুন্দেশলিগায় শুরুটা দুর্দান্ত করলেও প্রথম ম্যাচে হেরথা বার্লিনের বিরুদ্ধে দুর্ভাগ্যবশত জিততে পারিনি। ২-২ হয়েছিল ফল। শালকের বিরুদ্ধে জয়টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ওদের ঘরের মাঠে খেলা সব সময়ই কঠিন। সব বাধা অতিক্রম করে আমরা ম্যাচটা ৩-০ জিতেছি। পঞ্চাশ হাজার শালকে সমর্থকদের সামনে এই জয়ের আনন্দই আলাদা। আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য এফএসবি মেইনজ়ের বিরুদ্ধে পরের ম্যাচেও জয়ের ধারা বজায় রাখা। তার পরে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের খেলা রয়েছে।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ: গত মরসুমের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ব্যর্থতার যন্ত্রণা এখনও ভুলতে পারিনি। লিভারপুলের কাছে হেরে ছিটকে গিয়েছিলাম। এই মরসুমে আমাদের পাখির চোখ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল খেলা। এর জন্য মার্চ-এপ্রিল থেকে আমরা প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছি। আমরা মাঠে নামার জন্য মুখিয়ে রয়েছি।
গোলমেশিন লেয়নডস্কি: রবার্ট অসাধারণ। প্রথম ম্যাচেও জোড়া গোল করেছিল। শালকের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক করল। বিশেষ করে ফ্রি-কিকের গোলটা তো অবিশ্বাস্য। প্রত্যেক ম্যাচেই নিজেকে ছাপিয়ে যাচ্ছে রবার্ট। ও আমাদের গর্ব।
ভারতে খেলার অভিজ্ঞতা: ভারত সফর দারুণ উপভোগ করেছিলাম। প্রচুর দর্শক এসেছিলেন খেলা দেখতে। সেই স্মৃতি এখনও মনের মধ্যে উজ্জ্বল। তবে এই মুহূর্তে কোনও ভারতীয় ফুটবলারের নাম পড়ছে না, যাদের বিরুদ্ধে খেলেছিলাম। এর জন্য দুঃখিত।
ভারতের ফুটবলপ্রেমীদের বার্তা: ভারতে খেলতে গিয়ে দারুণ সমর্থন পেয়েছিলাম। আশা করব, ভারতীয় সমর্থকেরা একই রকম ভাবে আমাদের পাশে থাকবেন। গত মরসুমে আমরা ডাবল করেছি (বুন্দেশলিগা ও জার্মান কাপ)। যদিও চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে খেলার স্বপ্ন পূরণ হয়নি। এই মরসুমে ভারতে আমাদের যাঁরা সমর্থক রয়েছেন, তাঁদের খুশি করতে পারব বলেই আমাদের আশা।
জার্মানিতে ফুটবল নিয়ে উন্মাদনা: ভারতে যেমন ক্রিকেট নিয়ে সাধারণ মানুষের উন্মাদনা রয়েছে, তেমনই জার্মানিতেও ফুটবল নিয়ে সবার প্রবল আগ্রহ। মরসুম শুরু হওয়ার পরে ওঁদের আলোচনার একমাত্র বিষয় ফুটবল। জার্মানিতে ফুটবল সব সময়ই দারুণ জনপ্রিয়। সপ্তাহের শেষে সাধারণ মানুষ ফুটবল ম্যাচ দেখতে স্টেডিয়ামে হাজির হন। এই আবেগের কোনও ব্যাখ্যা হয় না। জার্মান ফুটবলে দলগুলোর মধ্যে ফারাক বেশি নয়। কোনও দলই দুর্বল নয়। সবাই সবাইকে হারাতে পারে।
ইউরো কাপ: ইউরো কাপ তো পরের বছর। এখনও অনেক সময় রয়েছে। এই মুহূর্তে আমি শুধু বায়ার্নকে নিয়েই ভাবতে চাই।
আরয়েন রবেন ও ফ্র্যাঙ্ক রিবেরির অবসর: বায়ার্ন মিউনিখ ও রবেন-রিবেরি সমার্থক হয়ে উঠেছিল। গত দশ-এগারো বছর আমরা একসঙ্গে কাটিয়েছি। ওদের না থাকাটা ব্যক্তিগত ভাবে আমার কাছে বড় ধাক্কা। কিন্তু বাস্তবকে মেনে নিতেই হবে। কোনও কিছুই চিরকালীন নয়। আশা করছি, রবেন-রিবেরির অভাব পূরণ করতে সফল হবে আমাদের তরুণ ফুটবলারেরা।
রবেন-রিবেরির বিকল্প: বায়ার্নের এই দলটায় অনেকেরই রবেন-রিবেরি বিকল্প হয়ে ওঠার যোগ্যতা রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম রবার্ট লেয়নডস্কি। এ ছাড়া কিংসলে কোমানও আছে।
ফিলিপে কুটিনহোকে নিয়ে উদ্বেগ: একেবারেই না। কুটিনহো ও আমার খেলার ধরন সম্পূর্ণ আলাদা ও সব সময় পাশে কাউকে চায় পাস দেওয়ার জন্য। কুটিনহো আসায় আমি চিন্তিত বা উদ্বিগ্ন কোনওটাই নই। আমরা খুব ভাল বন্ধু। অল্প দিনের মধ্যেই আমাদের মধ্যে দুর্দান্ত বোঝাপড়া গড়ে উঠেছে।
পেরিসিচ সম্পদ: অসাধারণ ফুটবলার। দলের প্রয়োজনে যে কোনও জায়গায় খেলতে পারে ইভান পেরিসিচ। ডর্টমুন্ডের হয়ে এর আগে বুন্দেশলিগায় খেলেছে। তার পরে জুভেন্তাসের হয়ে দীর্ঘ দিন ইটালিতেও খেলেছে। ও আসায় নিঃসন্দেহে আমাদের দলের শক্তি বেড়েছে। বায়ার্নের সম্পদ হয়ে ওঠার যোগ্যতা রয়েছে পেরিসিচের।
ক্রিকেট-প্রেম: বিশ্বকাপ ক্রিকেট দারুণ উপভোগ করেছি। তবে সেরা ভারতীয় ক্রিকেটারের নাম এই মুহূর্তে নাম বলতে পারব না। সারা বছর ক্রিকেট দেখার সময় পাই না যে।