Sambaran Banerjee

অস্ট্রেলিয়ার দুর্গ ব্রিসবেন, তবে এই ভারতও অদম্য

মঙ্গলবার এই লেখা পড়ার সময় পাঠক আন্দাজ পেয়ে যাবেন, শেষ টেস্ট কোন দিকে যাচ্ছে।

Advertisement

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২১ ০৩:১৬
Share:

—ছবি টুইটার

জশ হেজ্‌লউডের শটটা যখন থার্ডম্যান বাউন্ডারিতে শার্দূল ঠাকুর ধরে নিল, সোমবার ভারতীয় সময় তখন সকাল ১১.৫০। যার পরে অঙ্কটা দাঁড়ায় সিরিজ জিততে গেলে ভারতকে করতে হবে ৩২৮। চতুর্থ দিনের শেষে স্কোর বিনা উইকেটে চার রান।

Advertisement

মঙ্গলবার এই লেখা পড়ার সময় পাঠক আন্দাজ পেয়ে যাবেন, শেষ টেস্ট কোন দিকে যাচ্ছে। স্বাভাবিক ভাবেই দিনের প্রথম দু’ঘণ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। রোহিত শর্মা আর শুভমন গিল যদি নতুন বলটা সামলে দিতে পারে, তা হলে কিন্তু ভারত ভাল জায়গায় থাকবে।

ব্রিসবেন হল অস্ট্রেলিয়ার দুর্গ। এখানে শেষ বার অস্ট্রেলিয়া হেরেছিল ১৯৮৮ সালে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে। গ্যাবায় চতুর্থ ইনিংসে সব চেয়ে বেশি রান করে জিতেছিল অস্ট্রেলিয়াই। ১৯৫১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সাত উইকেটে ২৩৬ রান তুলে জিতেছিল তারা। পরিসংখ্যান বোঝাচ্ছে, ভারতের কাজটা কত কঠিন। কিন্তু স্রেফ শুকনো পরিসংখ্যান দিয়ে ভারতের এই দলটাকে মাপার কোনও জায়গা নেই। প্রথম একাদশের সাত-আটটা ক্রিকেটার নেই। বোলারদের মধ্যে সব চেয়ে বেশি টেস্ট খেলেছে মহম্মদ সিরাজ। তিনটে! কিন্তু এই দল নিয়েও ব্রিসবেনে শেষ দিন নামার আগে জয়ের স্বপ্ন দেখছে ভারত।

Advertisement

ব্রিসবেন টেস্ট যদি ড্র করে ফেরে ভারত, তা হলে সেটা আমার কাছে জয়েরই সমান হবে। সে ক্ষেত্রে বর্ডার-গাওস্কর ট্রফিও ঘরে নিয়ে আসতে পারবে অজিঙ্ক রাহানেরা। আর যদি হেরেও যায়, তা হলেও ভেঙে পড়ার কিছু নেই। এই সিরিজ থেকে আমাদের প্রাপ্তির সংখ্যা কিন্তু কম হল না।

প্রথমেই দুই পেসারের কথা বলতে হবে। সিরাজ এবং শার্দূল ঠাকুর। এই সিরিজের সেরা আবিষ্কার নিঃসন্দেহে সিরাজ। সফরের মধ্যেই বাবাকে হারিয়েছে ও। তার পরেও খেলে গিয়েছে। এবং, জীবনের তৃতীয় টেস্টেই তুলে নিল পাঁচ উইকেট। সিরাজের হাতে খুব ভাল ইনসুইং আছে। গতিটাও খারাপ নয়। সব চেয়ে বড় কথা হল, দ্বিতীয় বা তৃতীয় স্পেলেও একই রকম গতিতে বল করতে পারে। সিরাজ যদি আউটসুইংটা তৈরি করে নিতে পারে, অনেক দূর যাবে।

শার্দূল এর আগে একটা টেস্ট খেলেছিল ঠিকই, কিন্তু চোটের জন্য ১০ বলের বেশি খেলতে পারেনি। সে দিক দিয়ে দেখতে গেলে এটাই ওর আসল টেস্ট অভিষেক বলা যেতে পারে। আর কী খেলাটাই না খেলল। প্রথম ইনিংসে তিন উইকেটের পরে দ্বিতীয় ইনিংসে চার। ব্যাট হাতে প্রথম ইনিংসে লড়াকু হাফসেঞ্চুরি। একটা পরিসংখ্যানে চোখ পড়ল। এর আগে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্টে সাত উইকেট আর হাফসেঞ্চুরি করেছিল এক জন। তার নাম ডেল স্টেন। সেই স্টেনকে ছুঁয়ে ফেলল শার্দূল। মুম্বইয়ের এই পেসারের হাতে যেমন একটা ভাল আউটসুইং আছে, তেমনই বাউন্সারটাও ভাল দিতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার ওপেনার মার্কাস হ্যারিসকে তো ও রকম একটা শর্ট বলেই ফিরিয়ে দিল।

ভারতের রিজার্ভ বেঞ্চ যে ক্রিকেট দুনিয়ার অন্যতম শক্তিশালী, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। আগে বলা হত, অস্ট্রেলিয়ার ‘বি’ দলও যে কাউকে হারিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। সেটা ছিল ম্যাথু হেডেন, অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, জাস্টিন ল্যাঙ্গার, মাক এবং স্টিভ ওয়, গ্লেন ম্যাকগ্রা, শেন ওয়ার্নের জমানা। এখন দলটায় স্টিভ স্মিথ, ডেভিড ওয়ার্নার, মার্নাস লাবুশেন ছাড়া ব্যাটিংয়ে কেউ নেই। কিছুটা নজর কাড়ল ক্যামেরন গ্রিন। ও লম্বা দৌড়ের ঘোড়া। এখন ভারত সম্পর্কে বলা যায়, আমাদের ‘বি’ দলও যে কাউকে হারানোর ক্ষমতা রাখে। এর কারণ, অবশ্যই দারুণ বোলিং আক্রমণ। প্রথম দলের এক জন পেসারও খেলছে না। স্পিনার ওয়াশিংটন সুন্দর খেলছে জীবনের প্রথম টেস্ট। তা সত্ত্বেও অস্ট্রেলিয়াকে দু’বারই অল আউট করে দিল। এবং, এমন কিছু বেশি রানে নয়। দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া শেষ হয়ে যায় ২৯৪ রানে। এই ভারতীয় তরুণদের সব চেয়ে বড় সম্পদ হল, হার-না-মানা মনোভাব। সেটা টি নটরাজন থেকে শুভমন গিল, সবার মধ্যেই আছে।

অতিরিক্ত চোট আঘাতের জন্য আইপিএলের দিকে আঙুল তুলতে পারে অস্ট্রেলিয়ার কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গার, কিন্তু ঘটনা হল এই সাদা বলের প্রতিযোগিতাই ভারতীয় ক্রিকেটকে সম্বৃদ্ধ করছে। যেটা এই ভারতীয় দলটার উপরে চোখ রাখলেই বোঝা যায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement