এই ব্যানার দেখা গিয়েছে যুবভারতীতেও।
পঁচিশ বছর আগের লিভারপুলের একটি ঘটনা হঠাত্ হাজির যুবভারতীতে!
ইন্ডিয়ান সুপার লিগের উদ্বোধনী ম্যাচে আটলেটিকোর লাল-সাদা রং-এ রঙিন ছিল গ্যালারি। সেখানে ঝুলছিল কিছু ব্যানারও। কিছু থেলে-মেয়ে নিয়ে এসেছিলেন- “লেটস ফুটবল” লেখা ব্যানার। আবার কয়েক জন সমর্থকের ওড়াচ্ছিলেন “কাম অন আটলেটিকো”। ঠিক সেই সময়ই দেখা গেল বাইপাসের দিকের একটা গ্যালারিতে লম্বা সাদা মতো একটা ব্যানার। তাতে ইংরেজিতে লেখা ‘বিচার চাই সেই ৯৬ জনের মত্যুর।’
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের নামী ক্লাব লিভারপুলের ইতিহাসে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিল ওই ব্যানার। যুবভারতীতে তাঁরা আটলেটিকো সমর্থক হলেও, ‘হিলসবোরোর মর্মান্তিক’ সেই ঘটনার কথা ভোলোননি। লুই গার্সিয়া, হোজে রে-র উদ্দেশ্যেই যা ‘উত্সর্গ’। কারণ কলকাতার এই দুই ফুটবলারই লিভারপুলে খেলেছেন একসময়। লুই গার্সিয়া যে ক্লাবের হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে এফএ কাপ সব কিছুই জিতেছিলেন। কয়েক দিন আগেও গার্সিয়া বলেছিলেন, “আমি সারা জীবন লিভারপুল সমর্থক হয়েই থাকব।” এমনকী কলকাতার আটলেটিকোর সঙ্গে যোগ দেওয়ার আগেও ৯৬ জনের স্মৃতিতে অ্যানফিল্ডে প্রদর্শনী ম্যাচ খেলেছিলেন গার্সিয়া। আজ আটলেটিকোর প্রথম ম্যাচে হঠাত্-ই লিভারপুলের ইতিহাসে ঘটা সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনার প্রতিবাদ মঞ্চ হয়ে উঠল যুবভারতী। যার বিচার আজও ঝুলে আছে আদালতে। তদন্তে এখনও বেরিয়ে আসেনি সেই ঘটনার আসল কারণ। যে মর্মান্তিক ঘটনার প্রেক্ষাপট ছিল লিভারপুল বনাম নটিংহ্যাম ফরেস্টের এফএ কাপ সেমিফাইনাল ম্যাচ। খেলাটি হয়েছিল হিলসবোরো স্টেডিয়ামে। গ্যালারিতে বাড়তি দর্শক ঢোকায় স্টেডিয়ামের গ্যালারি ভেঙে পড়েছিল। তাতে প্রাণ হারান ৯৬ জন। আহত হন আরও ৭৬৬ জন দর্শক। দর্শকদের জন্যই এই দুর্ঘটনা হয়েছিল, জানিয়েছিল ব্রিটিশ পুলিশ। তা নিয়ে মামলা চলছে।
ম্যাচ জিতে রীতিমতো উচ্ছ্বসিত হয়ে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলছিলেন গার্সিয়া। কিন্তু টিমবাসে ওঠার আগে হিলসবোরো ঘটনার ব্যানারের কথা শুনেই তাঁর মুখ থেকে হাসি উধাও। ৩-০ জিতেও যেন তাঁর মধ্যে লুকিয়ে ছিল তাঁর প্রিয় ক্লাবে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনার বেদনা। জানালেন, এই প্রসঙ্গে কোনও কথা বলবেন না। “প্লিজ, কোনও কথা বলতে চাই না এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা নিয়ে।” মাঠে যত বার পাসিংয়ে মুগ্ধ করছিলেন গার্সিয়া, হিলসবোরোর ব্যানার দেওয়া গ্যালারি থেকে ফেটে পড়ছিল ‘গার্সিয়া গার্সিয়া’ চিত্কার। অনেক আটলেটিকো সমর্থক আশি মিনিটের পর মাঠ ছাড়তে থাকলেও, পুরো নব্বই মিনিট জুড়ে সেই ব্যানার দেখা গেল মাঠে।
তবে দলের পারফরম্যান্সে কিছুটা হলেও সেই দুঃখ কাটিয়ে উঠেছেন বিশ্বকাপার গার্সিয়া। বললেন, “যুবভারতীতে খেলে আমার দারুণ লাগল। সব সমর্থক পাশে থাকায় আজ আলাদা ভাবে উদ্দীপ্ত হয়েছি। প্রথম ম্যাচ জেতা সব সময় জরুরি।” প্রথমার্ধে ভাল খেলাটাই আমাদের জেতার পথ মসৃণ করে দিয়েছিল। স্প্যানিশ বিশ্বকাপার বললেন, “প্রথমার্ধটা ভাল খেলায় আত্মবিশ্বাস বেড়ে গিয়েছিল আমাদের। ওটাই অন্যতম কারণ হয়ে থাকল ম্যাচ জেতার।” সঙ্গে তিনি যোগ করেন, “ফিকরু, বোরহার মতো ফুটবলাররা খুব ভাল খেলেছে। আমি খুশি।”