দলে নেই সচিন তেন্ডুলকর, রোহিত শর্মা, যুবরাজ সিংহ এমনকি কপিল দেবও। দলে ঠাঁই হয়নি ম্যাথু হেডেন, স্টিভ ওয়, শেন ওয়ার্নের। ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারদের নিয়ে ৫০ ওভারের ফরম্যাটের জন্য গড়া দল নিয়ে তাই শুরু হয়েছে বিতর্ক। এই দল গড়েছেন অস্ট্রেলিয়ার ওয়ানডে ফরম্যাটের অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ। তাঁর দলে এমন কয়েক জন ক্রিকেটার রয়েছেন, যাঁদের দলে থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা।
ফিঞ্চের দলে ওপেন করবেন বীরেন্দ্র সহবাগ। কেন বীরু, ফিঞ্চের ব্যাখ্যা, “সহবাগ আমার এক নম্বর পছন্দ। ও এত দাপুটে। রোহিত শর্মাকে খেলাতাম, ওর রেকর্ড তো অবিশ্বাস্য। কিন্তু, আমি চাই অ্যাডাম গিলক্রিস্ট ওপেন করুক সহবাগের সঙ্গে।” রোহিত তো বটেই, সচিন তেন্ডুলকরের কথাও ভাবেননি ফিঞ্চ। যা নিয়ে অবাক ক্রিকেটপ্রেমীরা।
ফিঞ্চের দলে সহবাগের সঙ্গে ওপেন করবেন অ্যাডাম গিলক্রিস্ট। বাঁহাতি এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান ঝড় তুলতে পারেন অনায়াসে। কিন্তু, তার পরও ক্রিকেটপ্রেমীরা বলছেন, ম্যাথু হেডেন বা ডেভিড ওয়ার্নারের কথা। বাঁ-হাতি, ডানহাতি কম্বিনেশন রাখার জন্য হেডেন বা ওয়ার্নারকেও খেলানো যেত। আর দুই ডানহাতিকে খেলালে রোহিত বা সচিনকে রাখাই যেত।
তিনে ফিঞ্চের দলে নামবেন রিকি পন্টিং। অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কের জায়গা নিয়ে ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে সংশয় নেই। ২০০৩ বিশ্বকাপ ফাইনালে ১৪০ করে সেরার সম্মান পেয়েছিলেন পন্টিং। এই ফরম্যাটে ৩০ সেঞ্চুরি সহ ১৩৭০৪ রান রয়েছে তাঁর। খেলেছেন ৩৭৫ ম্যাচ। সেই অভিজ্ঞতাও কাজে আসবে।
চারে নম্বরে আসবেন বিরাট কোহালি। ভারতের হয়ে যদিও তিনে নামেন তিনি। কিন্তু পন্টিং থাকায় ‘চেজমাস্টার’ নামবেন পিছিয়ে। আর চারে নামার অভিজ্ঞতাও রয়েছে কোহালির। এই ফরম্যাটে ২৪৮ ম্যাচে ৪৩ সেঞ্চুরি সহ ১১৮৬৭ রান করে ফেলেছেন তিনি। গড় ৫৯.৩৩। ক্রিকেটীয় শটে ভরসা রেখেই স্ট্রাইক রেট ৯৩.২৫।
পাঁচে ফিঞ্চ রেখেছেন অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসকে। যা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। ক্রিকেটপ্রেমীদের কেউ কেউ স্টিভ ওয়র কথা বলছেন। কঠিন পরিস্থিতিতে দলকে টানার ক্ষেত্রে যাঁর দক্ষতা প্রশ্নাতীত। সাইমন্ডসের থেকে যাঁর পরিসংখ্যানও অনেক বেশি ঝলমলে। স্টিভ স্মিথ, মাইকেল ক্লার্ক, শন ওয়াটসন, মাইকেল বিভানের নামও উঠছে মিডল অর্ডারে।
ছয়ে আরও এক অবাক করা নির্বাচন। ফিঞ্চ বেছেছেন হার্দিক পাণ্ড্যকে। যেখানে যুবরাজ সিংকে নেওয়াই উচিত হত বলে মনে করছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। ২০১১ বিশ্বকাপের সেরা ক্রিকেটার হয়েছিলেন যুবরাজ। যদি বল করার দক্ষতাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়, তা হলেও যুবির বাঁহাতি স্পিন দলে বৈচিত্র বাড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে। আর কপিল দেবকেই বা ভোলা যায় কী ভাবে!
সাতে ফিঞ্চের পছন্দ মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। তাঁর যুক্তি, “চাপের মুখেও মাথা ঠান্ডা রাখে ধোনি। আইপিএল হোক বা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট, অধিনায়ক হিসেবে ঠিক পরিস্থিতি সামলে দেয়। তা ছাড়া ১০ রানে তিন উইকেট পড়ে গেলে ও ক্রিজে গিয়ে রান করতে পারে। আবার রান তাড়াতেও দক্ষ।” শুধু অধিনায়কত্ব নয়, উইকেটকিপারের দায়িত্বও সামলাবেন এমএসডি।
এ বার তিন পেসার। ফিঞ্চের প্রথম পছন্দ গ্লেন ম্যাকগ্রা। ২৫০ এক দিনের ম্যাচে ৩৮১ উইকেট নিয়েছেন ডানহাতি পেসার। গড় ২১.৬৪, ইকনমি রেট ৩.৮৮, স্ট্রাইক রেট ৩৪। সাত বার এই ফরম্যাটে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন। বড় আসরে জ্বলে ওঠার সহজাত দক্ষতা রয়েছেন ম্যাকগ্রার।
ফিঞ্চের দ্বিতীয় পছন্দের পেসার ব্রেট লি। ২২১ এক দিনের ম্যাচে ৩৮০ উইকেট নিয়েছেন এক্সপ্রেস গতির এই পেসার। গড় ২৩.৩৬, ইকনমি রেট ৪.৭৬, স্ট্রাইক রেট ২৯.৪। এই ফরম্যাটে নয় বার পাঁচ উইকেট নিয়েছেন তিনি।
তৃতীয় পেসার হিসেবে ফিঞ্চের পছন্দ জশপ্রীত বুমরা। ২৬ বছর বয়সি এখনও পর্যন্ত ৬৪ এক দিনের ম্যাচ খেলেছেন। নিয়েছেন ১০৪ উইকেট। গড় ২৪.৪৩, ইকনমি রেট ৪.৫৫, স্ট্রাইক রেট ৩২.১। মাত্র এক বারই তিনি পাঁচ উইকেট নিয়েছেন। তবে ডেথ ওভারে নিয়মিত ইয়র্কার ও বৈচিত্রের কারণে তিনি যে কোনও দলের সম্পদ।
বিশেষজ্ঞ স্পিনার হিসেবে কে খেলবেন, সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি ফিঞ্চ। তাঁর মাথায় অজি স্পিনার হিসেবে রয়েছে ব্র্যাড হগের নাম। চায়নাম্যান হগ ১২৩ এক দিনের ম্যাচে নিয়েছেন ১৫৬ উইকেট। গড় ২৬.৮৪, ইকনমি রেট ৪.৫১, স্ট্রাইক রেট ৩৫.৬। পাঁচ উইকেট নিয়েছেন দু’বার। ক্রিকেটপ্রেমীরা বিস্মিত, শেন ওয়ার্নের কথা কী ভাবে ভুলে গেলেন ফিঞ্চ!
ফিঞ্চের দলে একমাত্র স্পিনার হিসেবে হগের সঙ্গে দলে আসার লড়াইয়ে আছেন হরভজন সিংহ। ২৩৬ এক দিনের ম্যাচে ২৬৯ উইকেট আছে তাঁর। গড় ৩৩.৩৫, ইকনমি রেট ৪.৩১, স্ট্রাইক রেট ৪৬.৩। তিন বার নিয়েছেন পাঁচ উইকেট। রবীন্দ্র জাডেজার নামও ঘুরছে ফিঞ্চের মাথায়। ক্রিকেটপ্রেমীরা আবার তুলছেন অনিল কুম্বলে, রবিচন্দ্রন অশ্বিনের নাম।