ছবি এএফপি।
যত বার ভাবা হয়েছে, রোলঁ গ্যারোজে আর বোধহয় পারবে না রাফায়েল নাদাল। ঠিক তত বারই ও অন্যদের ভুল প্রমাণ করে নিজের খেলাকে নিয়ে গিয়েছে অবিশ্বাস্য উচ্চতায়। দেখে মনে হয়েছে, রাফা আক্ষরিক ‘সুপার হিরো’। এখনও আগের মতোই মহাশক্তিধর। একই সঙ্গে অপরাজেয়ও বটে।
এই নিয়ে বারো বার দেখলাম, প্যারিসে লেখা হল সেই একই চিত্রনাট্য। আর রবিবার ফাইনালে দমিনিক থিমের বিরুদ্ধে যে টেনিসটা ও খেলে গেল, তা এক কথায় অসাধারণ। বলছি না থিম খারাপ খেলেছে। কিন্তু যখনই থিমের খেলায় উন্নতি হয়েছে, তখনই যেন একেবারে চ্যালেঞ্জ নেওয়া মতো নিজের খেলা আরও আরও ভাল করে ওকে ছাপিয়ে গিয়েছে রাফা।
মেয়েদের টেনিসে অ্যাশলে বার্টি অবশ্যই আবিষ্কার। এত কাল বলা হত, নিজের সেরা দিনে ও যে কাউকে হারাতে পারে। কিন্তু প্যারিসে আরও অনেক কিছু বুঝিয়ে গেল। অথচ কতই বা বয়স অস্ট্রেলিয়ার মেয়েটার। মেরেকেটে বাইশ-তেইশ হবে। কিন্তু এই বয়সেই বোঝাল, ওর টেনিস কতটা ধারাল। সবচেয়ে বড় কথা, যে খেলাটা খেলল তা অনেকটাই আমাদের সময়ের সেই পুরনো ঘরানার। তাও এমন একজনের বিরুদ্ধে যে পরের পর মাথা খারাপ করে দেওয়া গ্রাউন্ডস্ট্রোক মেরে যায় বেসলাইন থেকে।
বার্টি সেখানেও বারবার নেটে ছুটে এসেছে। ব্যাকহ্যান্ডে অসাধারণ সব ড্রপ শট দেখিয়েছে। এবং সব বাধা অতিক্রম করে খেলাটাকে ছড়িয়ে দিয়েছে কোর্টের প্রান্ত থেকে প্রান্তে। এবং এখানেই শেষ নয়। অস্ট্রেলিয়ার মেয়েটা বুদ্ধি করে খেলার গতিও বাড়িয়েছে-কমিয়েছে। যে কারণে একটা সময় কী দাঁড়াল? মার্কেতো ভন্ড্রোসোভা কাহিল হয়ে পড়ল। আমার কিন্তু অসম্ভব ভাল লেগেছে বার্টিকে। নিশ্চিত ভাবেই ট্রফির আরও শক্তিশালী দাবিদার হয়ে ও উইম্বলডনে খেলতে যাবে।
পুরুষ-মহিলা দু’বিভাগের ফাইনালই হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার মতো। একই সঙ্গে কিন্তু মনে আসছে, অনেক প্রশ্ন। পুরুষ বিভাগের কথা প্রথমে বলা যাক। আর কবে আমরা এমন একজন চ্যাম্পিয়ন দেখব যার বয়স তিরিশের কম। শুধুমাত্র তিন জনের দ্বারা পুরুষদের টেনিস নিয়ন্ত্রিত হওয়ার ব্যাপারটা অসাধারণ। কিন্তু একই সঙ্গে এটাও প্রমাণিত, তরুণ প্রজন্ম এখনও রজার ফেডেরার, নাদাল আর নোভাক জোকোভিচের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার মতো উপযুক্ত হয়ে ওঠেনি। তবু বলব, থিমের গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। প্যারিসে সেটা ও নোভাক আর রাফার বিরুদ্ধে বুঝিয়েছে। মনে হচ্ছে ক্লে কোর্টে অন্তত থিমই নাদালের উত্তরসূরি। কিন্তু কবে সেটা সত্যি হবে তা আমি অন্তত বাজি ধরে বলতে পারব না।
নোভাককে দেখেছি বারবার ফাইনালের আগে কঠিন ম্যাচের সামনে পড়ে। তবে থিমের বিরুদ্ধে ও যেন খারাপ আবহাওয়া নিয়ে একটু বেশি ভেবে ফেলেছিল। আমার মনে হয়, এই ভাবনাটা ওর খেলায় যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে। নোভাক যেন থিম নয়, প্যারিসের প্রকৃতির বিরুদ্ধে খেলতে নেমেছিল। সে যাই হোক, এই গ্র্যান্ড স্ল্যামের সবচেয়ে বড় ঘটনা অবশ্যই নাদালের জয়। যে এই টুর্নামেন্টটা বারো বার জিতেছে, টানা শেষ তিন বার— তার বিরুদ্ধে নতুনরা আজও কতটা তৈরি তা অবশ্যই প্রশ্ন।
সবশেষে মেয়েদের নিয়ে আরও সামান্য কিছু কথা। ওদের যা খেলা দেখলাম, তাতে একটা জিনিসেরই অভাব। ধারাবাহিকতা। ভেবেছিলাম সিমোনা হালেপের খেলায় সেটা পাব। কিন্তু প্যারিসে আবার মেয়েটা পারল না। পারল না কিংবদন্তি সেরিনা উইলিয়ামসও। মনে হচ্ছে, চোট নিয়ে এখনও সেরিনা ভুগছে। মনে হচ্ছে, ওর স্বপ্নের চব্বিশ নম্বর গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের কাজটা ক্রমশ কঠিন হচ্ছে।