লড়াকু: প্রতিকূলতা জয় করেই উত্তরণ আশালতার । ফাইল চিত্র
এশিয়ার বর্ষসেরা মহিলা ফুটবলারের খেতাবি দৌড়ে ভারতের একমাত্র প্রতিনিধি তিনি। সেই আশালতা দেবীর ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন শৈশবেই শেষ হয়ে যেতে বসেছিল মায়ের আপত্তিতে।
পূর্ব মণিপুরের এক কৃষক পরিবারের জন্ম আশালতার। বাবা ইয়াইমা সিংহের ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয়নি। তাই তিনি সন্তানদের ফুটবলার বানাতে চাইতেন। কিন্তু পাঁচ মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে একমাত্র আশালতারই উৎসাহ ছিল ফুটবল খেলার প্রতি। যা নিয়ে প্রবল আপত্তি ছিল মা যমুনা দেবীর। ফুটবল খেলার জন্য শৈশবে মায়ের হাতে প্রচুর মারও খেয়েছেন ভারতীয় মহিলা ফুটবল দলের অধিনায়ক। বেঙ্গালুরু থেকে ফোনে আনন্দবাজারকে আশালতা বলছিলেন, ‘‘ভাবতেই পারছি না, এশিয়ার বর্ষসেরা মহিলা ফুটবলার পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছি। দারুণ আনন্দ হচ্ছে। মনে পড়ে যাচ্ছে শৈশবের অনেক স্মৃতি।’’ কী রকম? ভারতীয় দলের অধিনায়ক বললেন, ‘‘স্থানীয় ক্লাবে ছেলেদের সঙ্গে খেলতাম। মা প্রচণ্ড রেগে যেতেন। বলতেন, ফুটবলে মেয়েদের কোনও ভবিষ্যৎ নেই। লেখাপড়া করো। কিন্তু আমাকে, ফুটবলারই হতে হবে। তাই মাকে লুকিয়েই অনুশীলন করতে যেতাম।’’
কী ভাবে? আশালতা শোনালেন চমকপ্রদ কাহিনি, ‘‘আমাদের বাড়ির পিছন দিকে একটা রাস্তা ছিল। মাকে লুকিয়ে সেই পথেই অনুশীলন করতে যেতাম। কারণ, সামনে দিয়ে বেরোতে গিয়ে অনেক বার ধরা পড়েছি। মা আমাকে মারতে মারতে একটা ঘরে বন্ধ করে রাখতেন।’’ হাসতে হাসতে তিনি যোগ করলেন, ‘‘অনুশীলন করে বাড়িতে ফেরার পরে মারের মাত্রা কয়েকগুণ বেড়ে যেত।’’ বাবা কিছু বলতেন না? ‘‘মায়ের সামনে কিছু বলার সাহস ছিল না বাবার। মা যখন থাকতেন না, তখন বলতেন, অনুশীলন চালিয়ে যাও। তোমাকে সফল হতেই হবে,’’ বলছিলেন আশালতা।
ভারতীয় দলের রক্ষণের স্তম্ভ আশালতার বাবা অবশ্য মেয়েকে গোলরক্ষক বানাতে চেয়েছিলেন। বলছিলেন, ‘‘বাবা গোলরক্ষক ছিলেন। কিন্তু আমি ভয় পেতাম গোল পোস্টের নীচে দাঁড়াতে। তাই মাঝমাঠে খেলতে শুরু করি। ক্লাস নাইনে পড়ার সময়ে ক্রিপসা এফসি-তে সই করি। কোচ চাওবা দেবীর পরামর্শে রক্ষণে খেলা শুরু করি।’’ ২০০৮ সালে মায়ের আপত্তি উপেক্ষা করে ক্রিপসা এফসি-তে যোগ দেওয়ার পরেই বদলে যেতে শুরু করে আশালতার জীবন। সে বছর অনূর্ধ্ব-১৭ জাতীয় দলে নির্বাচিত হন। দু’বছর পরে ডাক পান অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় দলে। সিনিয়র দলের ট্রায়ালেও নেমেছিলেন আশালতা। কিন্তু নির্বাচিত হননি। আশালতা বলছিলেন, ‘‘বেশ কয়েক বার ট্রায়ালে নেমেও সিনিয়র দলে সুযোগ না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। ২০১১-তে নির্বাচিত হই। কিন্তু আনন্দ দীর্ঘ স্থায়ী হয়নি।’’ কেন? ধরা গলায় আশালতা বললেন, ‘‘প্রস্তুতি সফর শেষ করে বাহরিন থেকে ২০১১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেলে মণিপুরে ফিরেছিলাম। পরের দিন সকালেই বাবা মারা যান।’’
এশীয় সেরা হওয়ার দৌড়ে আশালতার লড়াই চিনের লি ইং ও জাপানের সাকি কুমাগাইয়ের সঙ্গে। ভারতীয় দলের অধিনায়ক অবশ্য খেতাব নিয়ে ভাবছেন না। তাঁর পাখির চোখ ২০২৩ সালের বিশ্বকাপের মূল পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করা।