MS Dhoni

শুরু আর শেষে অদ্ভুত মিল, ধোনির ১৫ বছরের কেরিয়ার মিশে গেল একই বিন্দুতে

চট্টগ্রাম আর ম্যাঞ্চেস্টারের মধ্যে বিস্তর দূরত্ব। দুই দেশের দুই মাঠে ধোনির খেলা ইনিংসের প্রেক্ষিতও ভিন্ন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ অগস্ট ২০২০ ১৫:২৫
Share:

দুনিয়ার সেরা ফিনিশার ধোনি। —ফাইল চিত্র।

জীবনের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচে রান আউট। শেষ ম্যাচেও তাই। শুরু আর শেষ এসে মিলে গেল একই বিন্দুতে।

Advertisement

শনিবার স্বাধীনতা দিবসের দিন সন্ধে ৭টা ২৯ মিনিটে দীর্ঘ ১৫ বছরের ক্রিকেট পরিক্রমায় ইতি টেনে দিয়েছেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। আর তার পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরপাক খাচ্ছে দুটো ছবি। ধোনির প্রথম ম্যাচে রান আউটের মুহূর্ত এবং শেষ ম্যাচের সেই হৃদয়বিদারক আউট। যা ধোনি তো বটেই গোটা ভারতের মন ভেঙে দিয়েছিল। আর দুটো আউটের মুহূর্ত কোথায় যেন মিলিয়ে দিচ্ছে শুরু আর শেষের ধোনিকে।

ধোনিকে নিয়ে সব সময়ে চর্চা। তাঁকে নিয়ে জনমানসে অনন্ত কৌতূহল। তাঁর জীবন তাঁর ক্রিকেটের মতোই চমকপ্রদ। খড়্গপুর স্টেশনের সামান্য টিকিট পরীক্ষক থেকে বিশ্বজয়ী অধিনায়ক। আবার দেশের জার্সিতে জীবনের প্রথম ও শেষ ম্যাচে আউটও একই ভাবে। এমন অদ্ভুত সমাপতন বেশির ভাগ ক্রিকেটারের জীবনেই যে হয় না। কিন্তু ধোনি তো সবার থেকেই আলাদা।

Advertisement

আরও পড়ুন: ধোনি ভয়ঙ্কর ক্ষিপ্র, ও দ্বিতীয় হতে আসেনি, বলছেন গুণমুগ্ধ শাস্ত্রী

২৩ ডিসেম্বর, ২০০৪। চট্টগ্রামে রান আউট হয়ে ফেরেন মাহি। সেটাই ছিল তাঁর জীবনের প্রথম আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ম্যাচ।

কাট টু ১০ জুলাই, ২০১৯। ম্যাঞ্চেস্টারে মার্টিন গাপ্তিলের অসাধারণ থ্রোয়ে আর ক্রিজে ফেরা হল না মাহির। বাইশ গজে তাঁর গতি প্রশ্নাতীত। রান জাজ করার ক্ষেত্রে যাঁর মুন্সিয়ানা বারবার প্রমাণিত, সেই ধোনিই কিনা ফিরতে পারলেন না ক্রিজে। গাপ্তিলের সেই থ্রো ভেঙে দিল উইকেট। তার পরের দৃশ্য হৃদয় ভাঙার, রক্তাক্ত হওয়ার। যন্ত্রণাকাতর ধোনি কাঁদছেন। হাত থেকে বেরিয়ে গেল বিশ্বকাপ ফাইনালে পৌঁছনোর গেট পাস। মাথা নিচু করে ছাড়ছেন মাঠ। সেই ম্যাচটাই যে তাঁর জীবনের শেষ ম্যাচ হয়ে দাঁড়াবে, তখন কি আর কেউ ভেবেছিলেন!

(বাঁ দিকে) চট্টগ্রামের সেই রান আউট। গাপ্তিলের রকেট থ্রোয়ে রান আউট ধোনি।

এক বছরেরও বেশি সময় নিজেকে ধরাছোঁয়ার বাইরে রেখে নানা কৌতূহলের জন্ম দিয়েছেন ভারতের অন্যতম সফল অধিনায়ক। এই এক বছরে তাঁর অবসর নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। তাঁকে নিয়ে চলেছে গবেষণা। কিন্তু তিনি এক বারের জন্যও মুখ খোলেননি। ভারতীয় ক্রিকেট মহলে ধোনি প্রসঙ্গে অনেকেই বলে থাকেন, ‘‘ও তো নিজের চিত্রনাট্য নিজেই লেখে।’’

সেই মতোই নিজের অবসরের সময় নিজেই বেছে নেন দেশের অন্যতম সফল অধিনায়ক। আর তার পরেই ফ্ল্যাশব্যাকে উঠে আসছে পৃথিবীর দুই প্রান্তের দুটো মাঠে রান আউট হওয়ার ছবি। ওই দুটো আউটের মধ্যে ব্যবধান ১৫ বছরের।

ম্যাঞ্চেস্টারে প্রায় হেরে বসা একটা ম্যাচ শুধু তাঁর জন্যই শেষের দিকে জীবন্ত হয়ে উঠেছিল। গাপ্তিল যখন ধোনির উইকেট ভাঙলেন, তখনও ক্রিজে পৌঁছতে পাঁচ সেন্টিমিটারের মতো বাকি ছিল ধোনির।
অবিকল একই দৃশ্য ছিল ১৫ বছর আগের সেই ম্যাচে।

বাংলাদেশের ক্রিকেটার তাপস বৈশ্যর ছোড়া বল উইকেটকিপার খালেদ মাসুদের হাতে পড়তেই উইকেট ভেঙে দেন তিনি। ক্রিজে আর ফেরা হয়নি মাহির। তাঁকে রান আউট করার মুহূর্তটা একসময়ে ভুলেই গিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রাক্তন অধিনায়ক খালেদ মাসুদ। ধোনির বায়োপিক দেখার পরে সব ঘটনা মনে পড়ে যায় তাঁর।

পুরনো স্মৃতি প্রসঙ্গে আনন্দবাজারকে মাসুদ বলেন, ‘‘অনেক দিন আগের ঘটনা। ভুলেই গিয়েছিলাম। ধোনির বায়োপিকে রান আউটের মুহূর্তটা দেখানো হয়েছে। ছবিটা দেখার পরে পুরনো কথা মনে পড়ে যায়। রফিকের বল স্কোয়ার লেগে ঠেলে রান নেওয়ার জন্য দৌড়েছিল ধোনি। নন স্ট্রাইক প্রান্তে দাঁড়ানো কাইফ ফিরিয়ে দেয় ওকে। তত ক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। তাপস বলটা ধরেই আমাকে ছুড়ে দেয়। বল হাতে পেয়ে সঙ্গে সঙ্গেই উইকেট ভেঙে দিই আমি। ধোনির আর ক্রিজে ফেরা হয়নি।’’

আরও পড়ুন: ছক্কা প্রতি পুরস্কার ৫০ টাকা, রাঁচীর যুবকের হেয়ারস্টাইল, বাইকপ্রেমের নেপথ্যে বলি নায়ক

চট্টগ্রাম আর ম্যাঞ্চেস্টারের মধ্যে বিস্তর দূরত্ব। দুই দেশের দুই মাঠে ধোনির খেলা ইনিংসের প্রেক্ষিতও ভিন্ন। প্রথম আউটটা অনেক দিন আগের বলে ভুলে গিয়েছিলেন মাসুদ। পরে ধোনির বায়োপিক দেখে তা ফুটে ওঠে চোখের সামনে। আর ম্যাঞ্চেস্টারের রান আউটটা তো মাত্র বছর খানেক আগের। খালেদ মাসুদ বলছিলেন, ‘‘ধোনির জন্য খুব খারাপ লাগছিল। অল্পের জন্য ক্রিজে পৌঁছতে পারেনি। বিশ্বক্রিকেটে যে ক’জন ক্রিকেটার মস্তিষ্ক ব্যবহার করত, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ধোনি। উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়ে গোটা ম্যাচটা দারুণ বিশ্লেষণ করত। কোন ব্যাটসম্যানকে কোন জায়গায় বল ফেলতে হবে, সেটা ধোনিই বোলারদের বলে দিত। আসলে কী জানেন, বোলার যখন বল করার জন্য দৌড়ন, তখন ক্যামেরা বোলারকেই ধরে। বাকিদের আমরা আর দেখতে পাই না। তাই ধোনি থেকে যেত অদৃশ্য। কিন্তু, ওই তো দলের আসল মস্তিষ্ক।’’

সেই মস্তিষ্কই তো গতকাল জানিয়ে দিলেন, অনেক হয়েছে আর নয়। দুনিয়ার সেরা ফিনিশারের ছেড়ে যাওয়া জুতোয় পা গলাবেন কে? খালেদ মাসুদ বলছেন, ‘‘ওর শূন্যস্থান পূরণ করার মতো কাউকে এই মুহূর্তে তো দেখছি না।’’ ধোনি অবসর নেওয়ায় যে শূন্যস্থান তৈরি হল, তা কখন, কী ভাবে পূরণ হয়, সেটাই দেখার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement