পুনর্মিলন: ইডেনে ভারতীয় ক্রিকেটের চার মহারথী লক্ষ্মণ, হরভজন, কুম্বলে ও সচিন। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
ভারতীয় ক্রিকেটের অবিস্মরণীয় নায়ক তাঁরা। ঐতিহাসিক দিনরাতের টেস্ট উপলক্ষে ইডেনে যাঁদের খেলোয়াড় জীবনের মধুর স্মৃতিরোমন্থন করতে দেখা গেল শুক্রবার। তাঁরা— সচিন তেন্ডুলকর, অনিল কুম্বলে, ভি ভি এস লক্ষ্মণ এবং হরভজন সিংহ।
দিনরাতের টেস্টের প্রথম দিন মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে মাঠেই একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে তাঁদের আলোচনায় উঠে এল ১৯৯৩ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে হিরো কাপ ফাইনাল, ২০০১ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্টে রুদ্ধশ্বাস জয়ের সেই সোনার অক্ষরে লেখা ইতিহাস। সকলেই ধন্যবাদ জানালেন তাঁদের প্রাক্তন অধিনায়ক এবং বর্তমানে ভারতীয় বোর্ডের প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে একসঙ্গে কথা বলার সুযোগ দেওয়ার জন্য। ৪০ মিনিটের এই অনুষ্ঠানে সৌরভেরও থাকার কথা ছিল। কিন্তু প্রশাসনিক কাজের ব্যস্ততায় তিনি থাকতে পারেননি। ‘‘সেই খেলোয়াড় জীবনের পরে এ রকম এক সঙ্গে মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ এর আগে আমরা পাইনি। এটা বিশেষ একটা দিন। এই ঐতিহাসিক টেস্ট ম্যাচের আয়োজন করার জন্য ইডেনই আদর্শ,’’ বলেন কুম্বলে। যাঁর ১২ রানে ছয় উইকেটের দুরন্ত বোলিং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ২৬ বছর আগে ভারতকে স্মরণীয় জয় এনে দেওয়ার নেপথ্যে বড় ভূমিকা নিয়েছিল।
গ্যালারি থেকে কলকাতার ক্রিকেট ভক্তদের ক্রমাগত ‘সচিন, সচিন’ চিৎকার মাস্টার-ব্লাস্টারকে যেন নিজের খেলোয়াড় জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। ২০০১ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সেই টেস্টে লক্ষ্মণ ও রাহুল দ্রাবিড় ৩৭৬ রানের ম্যাচ জেতানো পার্টনারশিপ গড়ার পরে হরভজন এবং সচিন বল হাতে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের চাপে ফেলে দিয়েছিলেন। হরভজন তো হ্যাটট্রিকও করেছিলেন সেই টেস্টে। দুই ইনিংস মিলিয়ে হরভজন নিয়েছিলেন ১৩ উইকেট। ‘‘ওই হ্যাটট্রিকের জন্য ম্যাচের রঙ দ্রুত পাল্টে গিয়েছিল। আমরা ওই ভাবে সেই টেস্টে জেতার পরে ভারতীয় দলের একটা নতুন পর্ব শুরু হয়ে গিয়েছিল। ভাজ্জি অসাধারণ বোলিং করেছিল। রিকি পন্টিংকে আউট করেছিল, ড্রেসিংরুমে আত্মবিশ্বাসটা ফিরিয়ে এনেছিল লক্ষ্মণ আর দ্রাবিড়ের জুটি,’’ বলেন সচিন।
হরভজনও যেন পুরনো দিনে ফিরে যাচ্ছিলেন শুক্রবার ইডেনের পরিবেশ দেখে। ‘‘এখানে এসে মনে হচ্ছে যেন ১৫ বছর আগের দিনগুলোয় ফিরে গিয়েছি। তখন টেস্ট ক্রিকেট অন্য ব্যাপার ছিল। বিশেষ একটা অনুভূতি হত টেস্ট খেলতে নামলে। যত বারই ইডেনে আসি, এখানকার মানুষের ভালবাসা অনুভব করতে পারি। সৌরভকে ধন্যবাদ এ সব আয়োজন করার জন্য। একশো জন অধিনায়কের অধীনে খেললেও আমার আধিনায়ক সব সময়ই সৌরভই থাকবে,’’ বলেন হরভজন। এই আলোচনাতেই উঠে এল সচিন কী ভাবে প্রথম শোনেন হরভজনের নাম, সেই প্রসঙ্গও। ‘‘প্রথম বার আমার ভাজ্জির সঙ্গে আলাপ হয় মোহালিতে। ওখানেই ওর কথা শুনি। সকলে বলাবলি করছিল ভাজ্জি খুব ভাল স্পিনার, দারুণ দুসরা করতে পারে,’’ বলছিলেন সচিন।
কথা ওঠে দিনরাতের টেস্ট নিয়েও। লক্ষ্মণ এবং তেন্ডুলকর দু’জনেই মনে করেন সন্ধ্যায় পেসাররা বেশি সাহায্য পাবেন। এই টেস্টের প্রথম দিনের খেলায় মধ্যাহ্নভোজের সময় বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৭৩-৬। এর পরে ১০৬ রানেই শেষ হয়ে যায় মোমিনুল হকের দলের প্রথম ইনিংস। ইশান্ত শর্মা পাঁচ উইকেট, উমেশ যাদব তিনটি এবং মহম্মদ শামি নেন দুই উইকেট। সচিন বলেন, ‘‘আগে পেসাররা খুব বেশি সাহায্য পাচ্ছিল না। বল খুব একটা সুইং করছিল না। কিন্তু বলের পালিশ ওঠার পরে সুইং পাচ্ছে বোলাররা। যার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার মতো যথেষ্ট সময় পাচ্ছে না ব্যাটসম্যানেরা। আমার মনে হয় সন্ধের সময় বল অনেক বেশি
নড়াচড়া করবে।’’
পরে কার্টে (ছোট গাড়ি) ইডেন প্রদক্ষিণ করার সময়েও সচিন বলেন, ‘‘গোলাপি বলের ক্রিকেট দর্শকদের মধ্যে উন্মাদনা তৈরি করেছে। সেটা অবশ্যই ইতিবাচক দিক। সময়ের সঙ্গে এগিয়ে চলতে হবে।’’ যোগ করেন, ‘‘তবে হয়তো এখনও অনেক প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। সেটা নিয়েও পর্যালোচনা
করা দরকার।’’