শামিরা বিদেশের মাঠেও বিপক্ষের ঘুম কেড়ে নেবে

আমার মতে, টেস্ট ক্রিকেটের জনপ্রিয়তাকে বাঁচিয়ে রাখতে গোলাপি বলে দিনরাতের এই টেস্ট একটা সফল প্রয়াস। বিশ্ব ক্রিকেটে এই মুহূর্তে অ্যাশেজ সিরিজ ও ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট-দ্বৈরথ ছাড়া গ্যালারি খুব বেশি ভরতে দেখা যায় না।

Advertisement

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৯ ০২:১০
Share:

অপ্রতিরোধ্য: শনিবার ইডেনের বাইশ গজে আগুনে বোলিং অব্যাহত।

গত এক মাস ধরে গোলাপি বলে ভারত ও বাংলাদেশের প্রথম দিনরাতের টেস্ট নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। কিন্তু প্রথম দু’দিন দিনরাতের এই টেস্ট দেখার পরে প্রশ্ন আসছে, গোলাপি বলের এই টেস্ট থেকে কী পেলাম?

Advertisement

আমার মতে, টেস্ট ক্রিকেটের জনপ্রিয়তাকে বাঁচিয়ে রাখতে গোলাপি বলে দিনরাতের এই টেস্ট একটা সফল প্রয়াস। বিশ্ব ক্রিকেটে এই মুহূর্তে অ্যাশেজ সিরিজ ও ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট-দ্বৈরথ ছাড়া গ্যালারি খুব বেশি ভরতে দেখা যায় না। সেখানে টেস্ট ক্রিকেটে গোলাপি বলের ব্যবহার প্রমাণ করছে, নতুনত্বের প্রয়োগে দর্শকদের মাঠে টেনে আনা যায়। তবে ইডেনে এই টেস্ট খুবই একপেশে হল। যদি বাংলাদেশ জোরদার একটা লড়াই ভারতের দিকে ছুড়ে দিত, তা হলে কিন্তু গোলাপি বলে একটা উপভোগ্য টেস্ট ম্যাচ হতে পারত।

এ রকম একটা বড় মঞ্চে দর্শক তারকা ক্রিকেটারের কাছ থেকে বড় ইনিংস বা দুর্দান্ত একটা বোলিং স্পেল দেখতে চায়। সেটা বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের সময়ে দেখিয়েছে ভারতের তিন পেসার ইশান্ত শর্মা, মহম্মদ শামি ও উমেশ যাদব। বিশেষ করে ইশান্ত স্বপ্নের বোলিং করেছে। তিন পেসারের মধ্যে স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতায় লাভ হয়েছে কোহালির।

Advertisement

ইশান্ত শর্মা-সহ ভারতীয় পেসারদের সকলেই উইকেট অনুযায়ী, সামনে বল করে গিয়েছে নাগাড়ে। তার পরে হঠাৎ কয়েকটা খাটো বল করে পিছনের পায়ে ব্যাটসম্যানকে নিয়ে গিয়েছে। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের সব চেয়ে বড় দুর্বলতা, ওদের পায়ের নড়াচড়া একদম নেই। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলার চেষ্টা। যার ফলে গতিময় বাউন্সি উইকেটে সমস্যায় পড়েছে মুশফিকুররা। অনেকে বলছেন বিদেশে, বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজ়িল্যান্ডে দিনরাতের টেস্ট খেলতে গেলে সমস্যায় পড়তে পারে ভারতীয়রা। আমি এই ধারণার সঙ্গে একমত নেই। এই ভারতীয় দলের রিজার্ভ বেঞ্চ অত্যন্ত শক্তিশালী। যশপ্রীত বুমরা ও ভুবনেশ্বর কুমার দলে ফিরলে বিদেশেও বিপক্ষের ঘুম কাড়বে শামিরা।

শনিবার ছিল ইডেনে ‘বিরাট কোহালি শো’। গোলাপি বলে যে বোলাররা দুর্দান্ত বল করবে তা জানা কথাই। কিন্তু সেখানে ব্যাটসম্যানেরা কতটা দাপটের সঙ্গে খেলছে, সেটা দেখার দরকার ছিল। যা দেখিয়ে দিল কোহালি। যে শতরানের ইনিংসটা খেলল তা যেমন সাবধানী, তেমন ধ্রুপদীও। বিরাটের ১৩৬ রান সংগঠিত, ধৈর্যশীল টেস্ট ইনিংস। বিপক্ষ স্পিনার তাইজুল আহমেদকে সামনের পায়ে রক্ষণশীল ভঙ্গিতে খেলে ও দেখিয়ে দিল, টেস্ট ক্রিকেটে ব্যাটসম্যানকে ধৈর্যেরও একটা পরীক্ষা দিতে হয়।

গোলাপি বলের ক্রিকেটে বল ছাড়াও একটা শিল্প। কোন বলটা খেলব আর কোন বল ছাড়বে সেটাও দেখাল কোহালি। বুঝিয়ে দিল কেন ও পৃথিবীর সেরা ব্যাটসম্যান। বলের রং যা-ই হোক না কেন বিরাট কিন্তু ইডেন টেস্ট শাসন করল ব্যাটে। আগের টেস্টে রান পায়নি। কলকাতায় যেন প্রতিজ্ঞা করেই এসেছিল, শতরান করে গোলাপি বলে ভারতের প্রথম দিনরাতের টেস্ট স্মরণীয় করে রাখবে। টেকনিকে কোনও ভুলভ্রান্তি নেই। চনমনে বিরাটকে ইডেনে পেলাম।

এ দিন বিরাটের সেরা শট ৯৫ থেকে চার মেরে যখন ৯৯ রান করল। পেস বোলারের ‘থ্রি কোয়ার্টার’ বলে ‘অন দ্য রাইজ’ শটে এই চারটা অনেক দিন মনে থাকবে। যে বলটায় ও ক্যাচ দিয়ে ফিরেছে, সেটা আরও একটু জোরে মারলে ছয় হয়ে যেতে পারত। তবে তাইজুল ক্যাচটা দারুণ ধরেছে।

শাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল না থাকায় বাংলাদেশ শক্তিহীন হয়ে পড়েছিল। তার প্রতিফলন দেখা গিয়েছে। কিন্তু এর মধ্যেও বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসে নজর কাড়ল মুশফিকুর রহিম (ন.আ ৫৯) ও মাহমুদুল্লার (৩৯ রানে আহত হয়ে অবসৃত) মরিয়া লড়াই। বাংলাদেশে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বেশ উন্নতি করেছে। টেস্টে সেই উন্নতি করতে ওদের সময় লাগবে। আশা করছি দ্রুত ভুল শুধরে

নেবে ওরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement