লাঞ্চের সময়ে ইডেনে আড্ডা দিচ্ছেন সচিন,ভাজ্জি,কুম্বলে ও লক্ষ্মণ। ছবি— রয়টার্স।
ইডেনে নস্ট্যালজিয়ায় ডুব দিল ‘ফ্যাব ফোর’। সচিন তেন্ডুলকর, অনিল কুম্বলে, ভিভিএস লক্ষ্ণণ ও হরভজন সিংহ তো ভারতীয় ক্রিকেটের ‘ফ্যাবিউলাস ফোর’। সেই চার কিংবদন্তি ইডেনে উপস্থিত দর্শকদের সামনে নিখাদ আড্ডায় মেতে উঠলেন। সেই আড্ডায় সমৃদ্ধ হলেন ক্রিকেটভক্তরা।
সচিন তেন্ডুলকর শোনালেন ভাজ্জিকে নিয়ে এক অজানা গল্প। সঞ্চালক প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছিলেন ‘মাস্টার ব্লাস্টার’কে, ‘‘যখনই ভাজ্জির সঙ্গে তোমার দেখা হয়, তখনই তুমি ওকে বলে ওঠো, বলব নাকি ওই কথাটা? কী সেই কথা?’’
ভাজ্জির দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে সচিন বলে ওঠেন, ‘‘তা হলে আজ বলেই ফেলি।’’ হরভজনের মুখ তত ক্ষণে শুকিয়ে গিয়েছে। ঝুলি থেকে সচিন আবার কী বের করেন, সেই আশঙ্কায় হয়তো ছিলেন ‘টারবুনেটর’। সচিন শুরু করলেন, ‘‘১৯৯৬ সালের কথা। মোহালিতে নামার পর থেকেই সবাই বলছে, একটা বাচ্চা ছেলে ভাল অফ স্পিন করছে। সেই সঙ্গে দুসরাও করতে পারে। আমি নেটে আসতে বললাম সেই ছেলেটাকে। সেই ছেলেই আজকের ভাজ্জি। প্রতিটি ডেলিভারি করার পরে আমার কাছে ও এসে বলছিল, কী বলছেন স্যর?’’ সচিন তো দেখে শুনে অবাক।
আরও পড়ুন: শামির বাউন্সারে মাথায় চোট, ম্যাচ থেকেই ছিটকে গেলেন বাংলাদেশের লিটন ও নইম
সে দিন বারবার কেন সচিনের কাছে এগিয়ে আসছিলেন পঞ্জাবতনয়? জাতীয় দলে ভাজ্জি সুযোগ পাওয়ার পরে সচিনের কাছে সেই রহস্য ফাঁস করেন। স্মৃতির পাতা উল্টে সচিন বলেন, ‘‘আমি ভাজ্জিকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, সে দিন তুমি বারবার আমার কাছে এগিয়ে আসছিলে কেন? ভাজ্জি বলে, আপনিই তো আমাকে ডাকছিলেন মাথা নাড়িয়ে। তাই আমি এগিয়ে যাচ্ছিলাম আপনার কাছে।’’ মাথা নাড়িয়ে সচিন মাঝেমাঝেই হেলমেট ঠিক করতেন। এ দৃশ্য ভারতীয় ক্রিকেটে খুবই পরিচিত। হরভজন তাতেই মনে করেন, সচিন বুঝি মাথা নাড়িয়ে তাঁকে ডাকছেন। হেসে গড়িয়ে পড়ে ইডেন।
এই ইডেনেই ১৯৯৩ সালে হিরো কাপের ফাইনালে অনিল কুম্বলের ঘূর্ণিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ভেঙে পড়ে। ভারতের অন্যতম সেরা ম্যাচ উইনার কুম্বলে প্রসঙ্গে সচিন বলেন, ‘‘আমি তখন অনূর্ধ্ব ১৭-এর ঘরোয়া টুর্নামেন্ট খেলছি। আমাকে একজন বলল, ওই লম্বা ছেলেটার নাম অনিল কুম্বলে। ওকে ব্যাকফুটে খেললেই উইকেট নিয়ে চলে যাবে বল। হিরো কাপের ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ভুল করে অনিলকে ব্যাকফুটে খেলতে গেল আর একের পর এক উইকেট হারাল।’’
কুম্বলে টেনে আনেন হিরো কাপের সেই বিখ্যাত সেমিফাইনাল। শেষ ওভারে জেতার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার দরকার ৫ রান। সচিনের বল খেলতেই পারলেন না অ্যালান ডোনাল্ড। শেষ বলে ব্রায়ান ম্যাকমিলানকে স্ট্রাইক দেন ডোনাল্ড। ম্যাকমিলান ম্যাচ জেতাতে পারেননি দক্ষিণ আফ্রিকাকে। ফাইনালে ক্যারিবিয়ানদের বিরুদ্ধে ১২ রানে ৬ উইকেট নেন কুম্বলে। তিনি বলেন, ‘‘আমি ৬ উইকেট নিয়েছিলাম ঠিকই। কিন্তু, ব্রায়ান লারার উইকেটটা নিয়েছিল সচিনই। লারা থাকলে আমরা সমস্যায় পড়ে যেতাম।’’ সচিন তখন লাজুক মুখে হাসছেন। ইডেন সমস্বরে ধ্বনি তুলছে, ‘স্যা-চি-ন, স্যা-চি-ন’। খেলার সময়ে এই শব্দব্রহ্মই তো ভারতকে একত্রিত করেছিল।
শীতের আগমন বসন্তেরই পূর্বাভাস দেয়। ভাজ্জি-লক্ষ্মণ উপস্থিত ইডেনে অথচ ২০০১ সালের মহাকাব্যিক সেই টেস্টের প্রসঙ্গ উত্থাপ্পন হবে না! তা হয় নাকি! লক্ষ্ণণ স্মৃতি রোমন্থন করে বলেন, ‘‘সে দিন সচিন, সৌরভ ফিরে যাওয়ার পরে গ্যালারি ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল। ইডেন ভাবতেই পারেনি আমি আর রাহুল পার্টনারশিপে ৩৭৬ রান তুলব।’’ লক্ষ্মণের ২৮১, দ্রাবিড়ের ১৮০-র সঙ্গে ছিল ভাজ্জির হ্যাটট্রিক। সচিন বলেন, ‘‘ভাজ্জির ওই হ্যাটট্রিকের পরেই ম্যাচ ঘুরতে শুরু করে দেয় ভারতের দিকে।’’ মাস্টারকে থামিয়ে হরভজন বলে ওঠেন, ‘‘ভিভিএস ও রাহুল দুর্দান্ত ব্যাট করেছিল ওই টেস্টে। ওদের কৃতিত্বও তো রয়েইছে। কিন্তু, ভুললে চলবে না সেই টেস্টে সচিন তিনটি উইকেট নিয়েছিল।’’
চার কিংবদন্তির আড্ডায় ফুটে ওঠে, সেই সময়ে তাঁরা একই পরিবারের সদস্য হয়ে উঠেছিলেন। সেই কারণেই ভারতীয় ক্রিকেট সাফল্যের মুখ দেখেছিল।