নৈশালোকে ইডেনে প্র্যাকটিস চলছে ভারতের। বুধবার। নিজস্ব চিত্র।
শেষ সেশন! গোলাপি বলে টেস্টের সবচেয়ে রহস্যজনক দিক হচ্ছে এই ‘গোধূলিবেলা’র সেশন বা শেষ সেশন। তখনই ব্যাটিং ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ে। উইকেটও পড়ে সবচেয়ে বেশি। ইডেনে হতে যাওয়া গোলাপি বলের টেস্টে আবার অন্য চাপ। আগের টেস্টগুলোর তুলনায়, নন্দনকাননে শেষ সেশনের কন্ডিশন এসে পড়বে অনেক আগে!
অ্যাডিলেডে ইতিহাসের প্রথম গোলাপি বলে দিন-রাতের টেস্টে ডিনার ব্রেক হয়েছিল স্থানীয় সময় ৬.২০ মিনিটে। শেষ সেশন শুরু হয়েছিল সন্ধে সাতটায়। অস্ট্রেলিয়ায় এমনিতেই অনেক রাত পর্যন্ত সূর্যের আলো থাকে। ইংল্যান্ডেও তাই। ভারতের পশ্চিম প্রান্তে মুম্বইতেও সন্ধে নামে দেরিতে। পূর্ব ভারতের কলকাতায় আবার পুরোটাই উল্টো। এখানে অন্ধকার হয়ে আসে দ্রুত। নভেম্বরের শেষের দিকে শীতের আগমনীতে বিকেল এখানে সংক্ষিপ্ত। দুপুরের পরই কমতে থাকে আলো।
সময়সূচি অনুসারে, ইডেনে শেষ সেশন শুরু হচ্ছে সন্ধে ছ’টায়। বুধবার দেখা গেল, বিকেল চারটের আগেই জ্বালাতে হচ্ছে ফ্লাডলাইট। সূর্যাস্ত হওয়ার কথা নিয়মমাফিক আধঘণ্টা পরে, সাড়ে চারটেয়। কিন্তু বাতিস্তম্ভের আলো জ্বলতে শুরু করছে চারটের আগে থেকেই। ফলে নৈশালোকে ক্রিকেটের সময় অনেকটা বেশি হতে যাচ্ছে ইডেনে। গোলাপি বলে আগের টেস্টগুলোয় কোথাও শেষ সেশনটা খেলতে হয়েছে বৈদ্যুতিক আলোয়, কোথাও আবার গোটা একটা সেশনও ফ্লাড লাইটে খেলতে হয়নি। ইডেন হতে চলেছে ব্যতিক্রম। যা পরিস্থিতি, তাতে চায়ের বিরতি ধরে, কম করে ঘণ্টা চারেক আলোয় খেলতে হবে ক্রিকেটারদের। আর এটাই চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে।
আরও পড়ুন: এগিয়ে আল আমিন, গোলাপি বলের টেস্টে বাড়তি পেসার খেলানোর কথা ভাবছে বাংলাদেশ
বাংলাদেশের স্পিন বোলিং কোচ ড্যানিয়েল ভেট্টোরি আশঙ্কার সুরেই বললেন, “চ্যালেঞ্জ হল জ্বালানো আলোয় কতক্ষণ খেলতে হচ্ছে সেটা। এখানে সূর্য অস্ত যায় তাড়াতাড়ি। সাড়ে চারটে নাগাদ। আর তখন থেকেই গোলাপি বলে খেলার চ্যালেঞ্জ শুরু। কারণ, দিনের বেলা এটা অস্বাভাবিক আচরণ করে না। কিন্তু গোধূলিতে এর আচরণ বদলে যায়। আমার মনে হয় সেটাই এই টেস্টের আকর্ষণের জায়গা হতে চলেছে। শেষ দেড় সেশন অত্যন্ত আকর্ষণীয় হবে।” দেড় সেশন মানে তিন ঘণ্টার খেলা। মন্থর ওভাররেট থাকলে সেশনের মেয়াদ বাড়তেই পারে।
ইডেনে দ্বিতীয় সেশন শুরু হচ্ছে দুপুর তিনটে চল্লিশ থেকে। তাৎপর্যপূর্ণ হল, তার কিছু ক্ষণের মধ্যেই জ্বালতে হচ্ছে বাতিস্তম্ভের আলো। মানে কার্যত প্রায় দুটো সেশন খেলতে হবে ফ্লাড লাইট জ্বলছে এমন অবস্থায়।
আর একটা আগ্রহের বিষয় হচ্ছে এসজির তৈরি গোলাপি বল। ভারতে এর আগে কোকাবুরার তৈরি গোলাপি বলে খেলা হয়েছে। ঋদ্ধিমান সাহা, মহম্মদ শামিরা ইডেনে ক্লাব ম্যাচে সেই বলেই খেলেছেন। এসজি-র তৈরি গোলাপি বল নিয়ে তাই ধোঁয়াশা রয়েছে। ঋদ্ধিমান বলেই দিলেন, “এসজি বল কেমন আচরণ করবে তা জানা নেই।” তবে তিনিও মানছেন, “গোধূলিতে গোলাপি বলে খেলা কঠিন। ব্যাটসম্যানদের অ্যাডজাস্ট করতে হবে। পেসারদের জন্য সাহায্য মজুত থাকে। লাল বলের চেয়ে এতে বেশি মুভমেন্ট থাকেই। পরিস্থিতি অনুসারে নিজেদের মানিয়ে নিতে হবে।”
আরও পড়ুন: চার মারতে যেত আর আউট হত, ওর মানসিকতাটা বদলে ছাড়লাম, বলছেন ময়াঙ্কের কোচ
শিশিরও একটা ফ্যাক্টর হয়ে উঠবে শেষ সেশনে। স্পিনারদের কাজ কঠিন হবে। গোলাপি বল আবার রিভার্স সুইংয়ের পক্ষে একেবারেই সহায়ক নয়। তবে ঋদ্ধি আত্মবিশ্বাসী, “শামিরা যে ছন্দে রয়েছে, তাতে গোলাপি বলেও ঠিক রিভার্স করিয়ে দেবে। যে কোনও উইকেটে ও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে।” তিন দিনে প্রথম টেস্ট ইনিংসে জেতার পর শিবিরের মেজাজ এমনই হওয়ার কথা। কিন্তু গোলাপি বলে টেস্টের ব্যাপারটাই তো আলাদা। ঋদ্ধি অবশ্য তাতেও নির্বিকার, “আমরা সবাই উত্তেজিত। এই টেস্টে দেশের প্রতিনিধিত্ব করছি বলে রোমাঞ্চিত। তবে নিজেদের সহজাত খেলাই খেলতে হবে। অন্তত গোলাপি বলে টেস্ট নিয়ে আমরা কেউ কানে কানে ফিসফাস করছি না!”
বোঝা গেল, শেষ সেশন যদি টেনে-টুনে দেড় সেশন বা তারও বেশি হয়ে পড়ে, ফ্লাডলাইটের আলোয় যদি খেলতে হয় দীর্ঘ ক্ষণ, তা হলেও বিরাট কোহালির ভারত উদ্বিগ্ন হচ্ছে না। অন্তত ঋদ্ধির কথায় সেই স্পিরিটই ফুটে উঠল। এটাই তো বলে থাকেন কোচ রবি শাস্ত্রী যে টেস্ট থেকে উইকেট বা কন্ডিশনকে সরিয়েই দেখেন তাঁরা। নন্দনকাননে কিন্তু সেটারই পরীক্ষা!