কোহালিয়ানা: দুর্দান্ত সেঞ্চুরি বিরাট কোহালির। তাঁর রাজকীয় ব্যাটিংয়ে দলও জয়ের সামনে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
ইডেনে ভারতের প্রথম দিনরাতের টেস্টে ভারত অধিনায়কের সেঞ্চুরি উপভোগ করলেন দুই প্রাক্তন অধিনায়ক। প্রেসিডেন্ট’স বক্সের সামনের রোয়ে বসেছিলেন দিলীপ বেঙ্গসরকর। তাঁর পাশেই দেশের অন্যতম সেরা অধিনায়ক ও বর্তমান বোর্ড প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। পাশাপাশি বসে ইডেনে বিরাট-শাসন উপভোগ করলেন তাঁরা।
৭১তম ওভারের প্রথম বল কোহালির ব্যাট ছুঁয়ে চলে গিয়েছিল বাউন্ডারিতে। চারটি রান পেলেও সেই শট নজর কাড়েনি প্রাক্তন অধিনায়কদের। সেই ওভারের দ্বিতীয় বলে কোহালির অন-ড্রাইভ দেখে বেঙ্গসরকর বলে উঠলেন, ‘‘অপূর্ব শট!’’ পাশের চেয়ারে বসে থাকা সৌরভও বলে দিলেন, ‘‘অসাধারণ।’’ ওভারের তৃতীয় বলটি কোহালি ফের পাঠিয়ে দিলেন মিড উইকেট অঞ্চলে। বেঙ্গসরকরের উচ্ছ্বাস, ‘‘অসাধারণ ক্রিকেটার।’’
কোহালির শাসনে মোহিত বেঙ্গসরকর বললেন, ‘‘যে কোনও দলের বিরুদ্ধে দাপটের সঙ্গে ব্যাট করে বিরাট। ওর এই মনোভাবই প্রচণ্ড উপভোগ করি। হার-না-মানা মানসিকতা, মনের জোর এগুলোই ক্রিকেটার হিসেবে ওকে অনেক এগিয়ে দিচ্ছে।’’ যোগ করেন, ‘‘কোনও ভারতীয় অধিনায়ককে দেশ ও বিদেশের মাটিতে শাসন করতে দেখলে খুব আনন্দ হয়। প্রত্যেক দিন, প্রত্যেক মুহূর্তে নিজেকে প্রমাণ করে যাচ্ছে ও।’’
এ ভাবে চলতে থাকলে বিশ্বের যে কোনও রেকর্ড কি ভেঙে দিতে পারেন বিরাট? বেঙ্গসরকরের উত্তর, ‘‘তা বলা যায় না। তবে চাইব, এ ভাবেই যেন আগামী সিরিজগুলোয় নিজের ছন্দ বজায় রাখতে পারে বিরাট।’’
ভারতীয় ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের মধ্যে অনেকেই মনে করেন, দিনরাতের টেস্টই ভবিষ্যৎ। টেস্ট ক্রিকেটকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য গোলাপি বলে খেলা নিয়মিত করা উচিত। বেঙ্গসরকরের কী মত? প্রাক্তন অধিনায়কের বিশ্লেষণ, ‘‘দিনরাতের টেস্টকে একমাত্র ভবিষ্যৎ বলা যাচ্ছে না। তবে অন্যতম বিকল্প অবশ্যই হতে পারে। টেস্ট ম্যাচে মাঠ ভর্তি দর্শক দেখলে সত্যি খুব ভাল লাগে। গোলাপি বলের ক্রিকেটকে ভাল পরীক্ষা বলা যেতে পারে।’’ যোগ করেন, ‘‘দিনরাতের টেস্ট নিয়মিত করার পরিকল্পনা থাকলে প্রত্যেক সিরিজে একটা-দুটো ম্যাচ করা উচিত। না হলে পরিস্থিতির সঙ্গে ক্রিকেটারদের মানিয়ে নেওয়া কঠিন।’’
বাংলাদেশের পারফরম্যান্সে হতাশ বেঙ্গসরকর। বলছিলেন, ‘‘ওরা তৈরিই নয়। অনেক সময় লাগবে। অভিজ্ঞতা না থাকলে টেস্টে মানিয়ে নেওয়া কঠিন।’’
হসপিটালিটি বক্স থেকে বেঙ্গসরকর চলে যাওয়ার পরে একাই বসেছিলেন সাইমন টফেল। নিজের লেখা বই প্রচারের জন্য প্রাক্তন আন্তর্জাতিক আম্পায়ার এখন ভারতে। টফেল নিজেও গোলাপি বলের ম্যাচে আম্পায়ারিং করেছেন। আন্তর্জাতিক স্তরের কোনও ম্যাচ না হলেও তিনি জানেন, এই বলের আচরণ কী রকম। বলছিলেন, ‘‘ভাল টেকনিক না হলে গোলাপি বলে সাফল্য পাওয়া যায় না। বিরাটের টেকনিক অন্যদের চেয়ে অনেক ভাল। তাই এই বলের বিরুদ্ধেও অনায়াসে সেঞ্চুরি করেছে।’’
নৈশালোক অথবা গোধূলিতে গোলাপি বলে আম্পায়াররা কী ধরনের সমস্যার মোকাবিলা করেন? টফেলের উত্তর, ‘‘মানিয়ে নেওয়াই আসল। আম্পায়ারেরাও আলোর সঙ্গে নিজেদের লেন্স পরিবর্তন করে। সকালে এক ধরনের লেন্স পরে আম্পায়ারিং করলে রাতে তা পরিবর্তন করতেই হয়। বলের রংয়ের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয় নিজেদের লেন্স।’’