সমকামীদের ম্যাচের আগে গ্রেসেস ও বার্মিংহাম ইউনিকর্নস ক্লাবের সদস্যরা। ছবি - টুইটার
সমকামীদের ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজন করে ইতিহাস গড়ল ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড। ২৩ মে বার্মিংহামের ওইয়েলি হিল ওভালের মাঠে ৪০ ওভারের এই ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল লন্ডনের ক্লাব গ্রেসেস ও বার্মিংহাম ইউনিকর্নস। সমকামীদের এই ম্যাচ শুধু ইংল্যান্ডে নয়, বিশ্বের বুকে এই প্রথম আয়োজিত হল। একদল সমকামীদের স্বীকৃতি দিল ইসিবি।
ইংল্যান্ডের বুকে গ্রেসেস হল সমকামীদের প্রথম ক্রিকেট ক্লাব। ১৯৯৬ সালে এই ক্লাব স্থাপিত হয়। তারপর এই ক্লাবকে দেখে আরও অনেক ক্লাব গড়ে উঠেছে। ক্লাবের চেয়ারম্যান লিও সিকনের বলছেন, “আমাদের ক্লাব শুধু ইংল্যান্ড নয় গোটা দুনিয়ার কাছে উদাহরণ তৈরি করল। ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজন করে আমরা প্রমাণ করলাম যে এই খেলা জানলেই আপনি প্যাড বেঁধে ব্যাট নিয়ে মাঠে নেমে যেতে পারবেন। আপনি কোন ধর্ম, কোন লিঙ্গ সেটা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। একই সঙ্গে ক্রিকেট খেলে আমরা সামাজিক বার্তা দেওয়ার চেষ্টাও করছি।”
গ্রেসেস দলের অধিনায়ক মণীশ মোদী আবার ভারতীয় বংশোদ্ভূত। গুজরাতের এক ক্রিকেট পাগল পরিবারে জন্ম হলেও পরে তাঁর পূর্বপুরুষ বিলেতে চলে আসেন। ইংল্যান্ডে বেড়ে ওঠা মণীশ একটা সময় পেশাদার ক্রিকেট খেলতে শুরু করে দেন। কিন্তু সমকামী হওয়ার জন্য তাঁকে বাধ্য হয়ে মাঝপথে থামতে হয়। তিনি বলছেন, “জীবনে সবচেয়ে ভালবাসার জিনিস হল ক্রিকেট। কিন্তু সমকামী হওয়ার জন্য আমাকে অনেক অপমান হজম করতে হয়েছে। সবাই লিঙ্গের ভিত্তিতে আমাকে বিচার করেছে। কেউ আমার ক্রিকেট বোধকে পাত্তা দেয়নি। তবে অবশেষে আমাদের জয় হল। অনেক বঞ্চনার পর আমরা যেন স্বাধীনতা পেলাম।”
ল্যাচলান স্মিথ অনেক দিন ধরে ক্রিকেট খেলেন। তবে সমকামী হওয়ার জন্য এই খেলার প্রতি তাঁর ভালবাসা নিজের এলাকায় সীমাবদ্ধ ছিল। সেই ল্যাচলান স্মিথ বলছেন, “স্রেফ ক্রিকেটের প্রতি ভালবাসার জন্য গত বছর বার্মিংহাম ইউনিকর্নস ক্লাব গড়লাম। যদিও আমি এই ক্লাব গড়লেও এলাকার অনেক সমকামী বন্ধু আমাকে সাহায্য করেছে। তাই এগারো জনকে নিয়ে মাঠে নামতে বেগ পেতে হয়নি।”
ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) এমন উদ্যোগ নিয়ে গর্ব বোধ করছে। সেটা জনসংযোগ উপদেষ্টা হেনরি কোয়েনের কথায় পরিষ্কার। তিনি বলছেন, “গ্রেসেস ও বার্মিংহাম ইউনিকর্নস ক্লাবের এই উদ্যোগ শোনার পর খুব আনন্দ পেয়েছিলাম। আমাদের দেশ প্রথম বিশ্বের হলেও সমকাম নিয়ে এখনও অনেকের নাক সিটকানো ব্যাপার রয়েছে। কিন্তু সমকামী মানুষদের দিকটাও তো ভেবে দেখতে হবে। তাই ইসিবি ওদের পাশে দাঁড়াল। আশা করি ভবিষ্যতে সমকামীদের ক্রিকেট ক্লাবের সংখ্যা আরও বাড়বে।”
ষোড়শ শতাব্দীর শেষদিকে ইংল্যান্ডে ক্রিকেটের জন্ম হয়েছিল। যদিও ১৮৩৬ সালের ৩রা অগস্ট, হ্যাম্পটন কোর্ট গ্রিনে রয়্যাল অ্যামেচার সোসাইটির সদস্যদের মধ্যে খেলা ক্রিকেটের প্রথম ম্যাচ হিসেবে স্বীকৃত। আর এ বার কাকতলীয় ভাবে সেই দেশেই একদল সমকামী বাইশ গজের যুদ্ধে নামলেন। স্বীকৃতি দিল ইসিবি।