টেনিসের ‘ব্যাড বয়’ থেকে মহানায়ক

খাঁটি পাওয়ার টেনিসকে ফিরিয়ে আনল চিলিচ

মারিন চিলিচের যুক্তরাষ্ট্র ওপেন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মাধ্যমে আমার মতে দু’টো বার্তা টেনিস-বিশ্ব পেল। এক) টেনিসের বিগ ফোর, মানে ফেডেরার, নাদাল, জকোভিচ আর মারের বাইরে কেউ যে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিততে পারে, সেই অসমসাহসটা বাকি সব টেনিস প্লেয়ার অর্জন করল। অন্তত এটিপি র্যাঙ্কিংয়ে প্রথম কুড়ির মধ্যে থাকা বিশ্ব টেনিসের টপ ব্র্যাকেট তো সোমবার রাত থেকে ভাবা শুরু করতেই পারে যে, চিলিচ পেরেছে, আমিই বা পারব না কেন!

Advertisement

জয়দীপ মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:৫৭
Share:

স্বপ্ন সত্যি-স্বপ্নের মৃত্যু।

মারিন চিলিচের যুক্তরাষ্ট্র ওপেন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মাধ্যমে আমার মতে দু’টো বার্তা টেনিস-বিশ্ব পেল।

Advertisement

এক) টেনিসের বিগ ফোর, মানে ফেডেরার, নাদাল, জকোভিচ আর মারের বাইরে কেউ যে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিততে পারে, সেই অসমসাহসটা বাকি সব টেনিস প্লেয়ার অর্জন করল। অন্তত এটিপি র্যাঙ্কিংয়ে প্রথম কুড়ির মধ্যে থাকা বিশ্ব টেনিসের টপ ব্র্যাকেট তো সোমবার রাত থেকে ভাবা শুরু করতেই পারে যে, চিলিচ পেরেছে, আমিই বা পারব না কেন!

দুই) আর্থার অ্যাশের সিন্থেটিক কোর্টে ফাইনালে জাপানের দশম বাছাই কেই নিশিকোরিকে দু’ঘণ্টার ভেতর ৬-৩, ৬-৩, ৬-৩ হারিয়ে বিশ্বের ১৬ নম্বর ক্রোট চিলিচ যেন টেনিসের সর্বোচ্চ মঞ্চে ফের খাঁটি পাওয়ার গেমের পতাকা ওড়াল।

Advertisement

মধ্যরাতে টিভি দেখে মনে হল, পাঁচ ফুট দশ ইঞ্চি, ৬৮ কেজির জাপানি ম্যাচটায় সাড়ে ছ’ফুট, ৮২ কেজির প্রতিপক্ষের মূলত শক্তির কাছেই বশ্যতা স্বীকার করল। চিলিচ ওর কামানের গোলার মতো সার্ভ আর ব্যাকহ্যান্ড স্ট্রোকে শুধু ফাইনালই নয়, কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে টানা তিনটে মহাম্যাচ স্ট্রেট সেটে জিতল। যেখানে ওর হাতে বধ হওয়া মহাতারকাদের লিস্টে রজার ফেডেরার নামে একটা লোকও আছে। আর গত রাতে তো নিশিকোরির মাত্র দু’টো ‘এস’-এর পাশে চিলিচের ১৭টা ‘এস’ সার্ভিস আর উইনার মারার হিসেবে তার ৩৮-১৯ এগিয়ে থাকাতেই স্পষ্ট, চব্বিশ বছরের ক্রোটের কাছে কী ভাবে পাওয়ার গেমে পরাস্ত হয়েছে ইতিহাস গড়তে চলা জাপানি টেনিস তারকা।


ফ্লাশিং মেডোয় চিলিচ-নিশিকোরি।

জুনিয়র লেভেলে চিলিচ ওর সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে প্রতিভাবান টেনিস প্লেয়ার ছিল। টিনএজে চেন্নাই ওপেন জিতেছিল সেই বছর পাঁচেক আগে আমাদের সোমদেব দেববর্মনকে ফাইনালে হারিয়ে। মাত্র কুড়ি বছরে বিশ্বের প্রথম দশে চলে এসেছিল। কিন্তু মারাদোনার মতোই দুর্ভাগ্যবশত নিষিদ্ধ ড্রাগ সেবনে ডোপ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ে পেশাদার সার্কিট থেকে সাসপেন্ড হয়ে যায়। গত বছর জার্মানিতে একটা এটিপি টুর্নামেন্টের সময় ডোপ পরীক্ষায় ধরা পড়েছিল চিলিচ। আইটিএফ ওকে প্রথমে দু’বছর সাসপেন্ড করেছিল। কিন্তু ও আগাগোড়া নিশ্চিত ছিল, যে গ্লুকোজ বড়ি খাওয়ার দায়ে ওর বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ ড্রাগ সেবনের অভিযোগ উঠেছিল, সেটা ও ন্যায্য ওষুধের দোকান থেকেই কিনেছিল। এবং সেটা প্রমাণও করে দেয়। যার জন্য সাসপেনশন কমে মাত্র তিন মাস হয়। এবং ওই সময়ই গোরানকে নিজের নতুন কোচ করে চিলিচ প্রচণ্ড পরিশ্রম করে আজকের এই চিলিচ হয়ে উঠেছে।

শুনলাম ও সাংবাদিকদের বলেছে, গোরান ওর মধ্যে টেনিস খেলাটার আনন্দ আবার ফিরিয়ে এনেছে। টেনিসের মজা আবার ও উপভোগ করছে। একদম ঠিক কথা। কোনও স্পোর্টসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে কোনও প্লেয়ার যখন সেই খেলাটাকে উপভোগ করে তখন তাকে হারানো প্রায় দুঃসাধ্য।

যুক্তরাষ্ট্র ওপেনে চিলিচের বেলায় এ বার সেটাই ঘটেছে!

ছবি: এএফপি

মারিন-মন্ত্রে

• ১৯ গ্র্যান্ড স্ল্যাম পর টেনিসের ফ্যাব ফোর-এর (ফেডেরার-নাদাল-জকোভিচ-মারে) বাইরে প্রথম কেউ চ্যাম্পিয়ন।

• গত বছর যুক্তরাষ্ট্র ওপেন খেলেনইনি, ডোপিংয়ের দায়ে সাসপেন্ড থাকায়।

• ১ দশক বাদে এটিপি র্যাঙ্কিংয়ে প্রথম দশের বাইরে থাকা কেউ গ্র্যান্ড স্ল্যাম চ্যাম্পিয়ন।

• ১৩ বছর আগে গোরান ইভানিসেভিচের পর একমাত্র ক্রোট গ্র্যান্ড স্ল্যাম চ্যাম্পিয়ন।

• গোরানই বর্তমানে মারিন চিলিচের কোচ।

• ৪ বছর পর এটিপি র্যাঙ্কিংয়ে প্রথম দশে প্রত্যাবর্তন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement