নির্বাচিত: খেলার মাঝে রিচা। ছবি: তাপস ঘোষ
চন্দননগর ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের ব্যবস্থাপনায় রবিবার মানকুণ্ডু স্পোর্টিং ক্লাবের মাঠে সিএবি পরিচালিত চ্যালেঞ্জার ট্রফির খেলা চলছিল। দুপুরে খবরটা যখন এল, তখন রান তাড়া করতে নামার তোড়জোড় করছে রিচা ঘোষের দল। খবর ছড়াতেই উচ্ছ্বাসে ভাসল গোটা মাঠ। মেয়েদের সিনিয়র টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ভারতীয় দলে নির্বাচিত হয়েছে রিচা।
ষোলো বছরের মেয়েটিকে একে একে অভিনন্দন জানাতে শুরু করলেন মাঠে উপস্থিত সকলে। সতীর্থ থেকে কোচ-কর্মকর্তা, চন্দননগর ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের কর্তারাও। সপ্রতিভ বঙ্গকন্যা জানিয়ে দেয়, সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে চেষ্টার কসুর করবে না সে। তাঁর কথায়, ‘‘আমি ভীষণ খুশি। চেষ্টা করব নিজের সেরাটা দেওয়ার।’’
অষ্ট্রেলিয়ায় আসন্ন সিনিয়র টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য এ দিন দল বাছাই করে বিসিসিআই। মেয়ে সেই দলে জায়গা পাওয়ায় আবেগ ধরে রাখতে পারছিলেন না শিলিগুড়ির সুভাষপল্লি হাতি মোড়ের বাসিন্দা মানবেন্দ্র ঘোষ। তাঁর কথায়, ‘‘আশা ছিল, মেয়ে জাতীয় দলে খেলবে। এত তাড়াতাড়ি সুযোগ মিলবে, ভাবিনি। দেশের হয়ে ভাল খেলাটাই আসল।’’ মেয়ের ছেলেবেলার কোচ থেকে বর্তমান প্রশিক্ষক, সিএবির কর্মকর্তা— সবাইকেই মেয়ের সাফল্যের শরিক করতে চান মানবেন্দ্র।
মানবেন্দ্র ছোটখাটো ব্যবসা করেন। তিনি জেলা পর্যায়ে ক্রিকেট খেলতেন। তাঁর দুই মেয়ের মধ্যে ছোট রিচা ছেলেবেলা থেকেই তাঁর হাত ধরে মাঠে যেত। তখনই তার ক্রিকেটে আগ্রহ জন্মায়। যদিও মহানন্দ গোড়ায় চাননি মেয়ে ক্রিকেট খেলুক। রিচা অবশ্য ক্রিকেটকেই বেছে নেয়। সাড়ে চার বছর বয়সেই তার ব্যাট-বলে হাতেখড়ি। বাবা তাকে শিলিগুড়ির বাঘাযতীন ক্রিকেট কোচিং সেন্টারে ভর্তি করিয়ে দেন। ক্রমে জেলা পর্যায়ের গণ্ডী পেরিয়ে বাংলা দলে সুযোগ করে নেয় সে। ডানহাতি এই অলরাউন্ডার এখন বাংলা দলের অন্যতম ভরসা। মিডল অর্ডারে ব্যাট করে। উইকেটকিপিং করে। ডানহাতি মিডিয়াম পেস বলও করতে পারে। গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিক ভাবে ভাল পারফর্ম করে চলেছে সচিন তেন্ডুলকরের এই অন্ধ ভক্ত।
এ দিন অবশ্য চ্যালেঞ্জার ট্রফিতে ভাল উইকেটকিপিং করলেও ব্যাট হাতে সাফল্য পায়নি রিচা। ১১ বলে ৭ রান করেই সে আউট হয়ে যায়। তুলে সুইপ মারতে গিয়ে সহজ ক্যাচ দিয়ে বসে। তবে, দলের সতীর্থ থেকে কোচ— সকলেই একমত, যে কোনও ম্যাচ একা হাতে বের করে দিতে পারে রিচা। ঝুলন গোস্বামীর পরে রিচাকেই রাজ্যের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার বলে চিহ্নিত করেছেন বাংলা মহিলা দলের কোচ শিবশঙ্কর বসু।
এ দিন তিনি মাঠেই ছিলেন। শিবশঙ্কর বলেন, ‘‘রিচার প্লাস পয়েন্ট হল, ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং বা উইকেটকিপিং— ক্রিকেটের সব বিভাগেই ও স্বচ্ছন্দ। ব্যাট হাতে বড় শট মারতে পারে। যে কোনও ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। মাটিতে পা রেখে চলতে পারলে মেয়েটা অনেক দূর যাবে।’’ সিএবি-র অ্যাপেক্স কাউন্সিলের সদস্য তথা প্রাক্তন জাতীয় ক্রিকেটার গার্গী বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘রিচার ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ দুর্দান্ত। ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলে। এই বয়সেই ভীষণ ম্যাচিওরিটি দেখাচ্ছে।’’
রিচা মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। তবে, সেই পরীক্ষার সময় বিশ্বকাপ চলবে। তাইএ বার তার মাধ্যমিক দেওয়া হবে না। তা নিয়ে অবশ্য ভাবছে না হাসিখুশি ষোড়শী। তার লক্ষ্য একটাই— অজিদের দেশে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।