লাল-কালো ছোটখাটো গাড়িটা কী ভাবে চালাতে হয়, ড্রাইভারের সিটে বসে সেটাই বুঝতে শুরু করে দিলেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। গাড়ির ব্যাপার যেখানে, সেখানে তিনি যে সবার আগেই লাফিয়ে উঠবেন, এ আর আশ্চর্যের কী? ধোনির যখন তা বোঝা হয়ে গেল, তখন টপাটপ সেই গাড়িতে ওয়ান ডে সিরিজ জয়ের ট্রফি নিয়ে উঠে পড়লেন ভারতীয় ক্রিকেটাররা। কেউ দাঁড়িয়ে, কেউ বসে। অতটুকু গাড়িটায় কেমন সহজেই ঢুকে পড়ল পুরো টিমটা! এতেই বোঝা যায়, বিরাট কোহালিদের ক্রিকেট সংসারে এখন ‘যদি হই সুজন...’ প্রবাদটাই সবচেয়ে প্রিয়।
অধিনায়ক বিরাট কোহালির কথাতেও তারই প্রতিফলন। রবিবার রাতে সিরিজ জয়ের পুরস্কার নিতে এসে বললেন, ‘‘আমাদের মনে হয়েছিল ওয়ান ডে সিরিজটা কঠিনই হবে। কিন্তু দলের ছেলেদের কৃতিত্বের কথা ভাবুন, এই চ্যালেঞ্জটাও আমরা অনায়াসে জিতে নিলাম। যশপ্রীত অসাধারণ, স্পিনাররা অসাধারণ, হার্দিকও ভাল খেলেছে। আমরা ভাল ক্রিকেট খেলেছি।’’
শেষ ওয়ান ডে ম্যাচে রবিবার শ্রীলঙ্কার দেওয়া ২৩৯ রানের টার্গেট সাড়ে ৪৬ ওভারে চার উইকেট খুইয়ে তুলে ফেলার পরে এমন অনায়াসে সিরিজ ৫-০ করে ফেলল ভারত, যে তা নিয়ে বাড়তি উল্লাসের যেন কোনও অবকাশই রইল না। দলের এই জয়ের অভ্যাস নিয়েই বেশি কথা বলতে আগ্রহী ভারত অধিনায়ক। বললেন, ‘‘আমরা নাকি তিনটের বেশি ম্যাচ জিততে পারছি না, এই আলোচনাটা চলছিল। এখন নিশ্চয়ই সেটা বন্ধ হবে। এখন তো আমরা টানা পাঁচটা জিতে নিলাম। পাঁচটা কেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজেরটা ধরলে টানা ছ’টা হয়ে যাবে।’’ কোহালি এ বার অপেক্ষায় আছেন দেশের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে খেলার জন্য।
ভুবনেশ্বর কুমারের সুইংয়ের দাপট শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানদের হিমশিম খাওয়ানোর পরে ১১৬ বলে ১১০ রান করে অপরাজিত থেকে উপুল থরঙ্গার দলের বোলারদের নাস্তানাবুদ করে ছাড়েন বিরাট। এ ভাবেই অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে আসন্ন সিরিজেও আধিপত্য দেখাতে চান বিরাট কোহালি। বলেন, ‘‘আশা করি এই ধারাবাহিকতা অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধেও বজায় থাকবে। এ রকম খেললে ওদেরও দাপটেই হারানো যাবে হয়তো।’’
এ দিন যিনি শুরুতেই জয়ের ভিত তৈরি করে দেন পাঁচ উইকেট নিয়ে, সেই ভুবনেশ্বর কুমার বলেন, ‘‘প্রথম কয়েকটা ম্যাচে উইকেট পাইনি। কিন্তু আজ যে ভাবে বোলিং করলাম, তাতে আমি খুশি। ওরা যে স্লোয়ারে খুব একটা স্বচ্ছন্দ নয়, তা জানতাম। সেটাই কাজে লাগালাম।’’ যে উইকেটে আগের দিন ভারত ৩৭৫ রান তুলেছিল, সেই ব্যাটিং সহায়ক পিচে এমন ফুল ফুটিয়ে আরও একবার ভুবি প্রমাণ করলেন, যে কোনও পিচেই তিনি আগুন ঝরাতে পারেন। তবে নিজেকে আর প্রমাণ করার নেই বলে মনে করেন তিনি। বলেন, ‘‘আমি কারও কাছে কিছু প্রমাণ করতে চাই না। যখনই সুযোগ আসে, তখনই দলের জন্য ভাল বোলিং করতে চাই।’’
বিরাটের আর এক ভরসা যশপ্রীত বুমরার আবার আশা, ওয়ান ডে-তে তাঁর এই পারফরম্যান্সে টেস্ট দলে তাঁর আসার সম্ভাবনা বাড়ল। বলেন, ‘‘সত্যিই এ রকম হলে, এর চেয়ে ভাল আর কীই বা হতে পারে? সুযোগ পেলে নিজেকে উজাড় করে দেব। এর আগে যে বিশ্রাম পেয়েছিলাম, সেটা এই সিরিজে দারুণ কাজে লেগেছে।’’
তবে মালিঙ্গার থেকে সুইংয়ের বিদ্যা নিয়ে শ্রীলঙ্কাকে হারানোর তত্ত্বটা মানতে রাজি নন বুমরা। বলেন, ‘‘মোটেই তা নয়। মালিঙ্গার কাছ থেকে শিখে আমি শুধু ভাল বোলার হতে চেয়েছি। শ্রীলঙ্কাকে হারানোর জন্য যে মালিঙ্গার সাহায্য নিয়েছি, এটা দয়া করে বলবেন না।’’