হোটেলে না ঢুকে সোজা অনুশীলনে কোহালিরা

চার বছর আগের সেই অভিশপ্ত ইংল্যান্ড সফরে এসে একমাত্র হ্যাম্পশায়ারেই পায়ের তলায় কিছুটা জমি খুঁজে পাচ্ছিলেন বিরাট কোহালি। যদিও ক্রিজে থিতু হওয়ার পরেও বড় স্কোরে সেটাকে পাল্টে দিতে পারেননি। গত সফরে তাঁর বিভীষিকা জেমস অ্যান্ডারসন সেই ম্যাচেও ৩৯ করার পরে তুলে নেন কোহালিকে। 

Advertisement

সুমিত ঘোষ 

সাউদাম্পটন শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৮ ০৪:৩৬
Share:

ছুটি শেষ। অনুশীলনে কোহালিরা। টুইটার

চার বছর আগের সেই অভিশপ্ত ইংল্যান্ড সফরে এসে একমাত্র হ্যাম্পশায়ারেই পায়ের তলায় কিছুটা জমি খুঁজে পাচ্ছিলেন বিরাট কোহালি। যদিও ক্রিজে থিতু হওয়ার পরেও বড় স্কোরে সেটাকে পাল্টে দিতে পারেননি। গত সফরে তাঁর বিভীষিকা জেমস অ্যান্ডারসন সেই ম্যাচেও ৩৯ করার পরে তুলে নেন কোহালিকে।

Advertisement

চলতি সিরিজে ভারত অধিনায়কের ব্যাটিং দেখে যদিও মনে হচ্ছে, সে সব ব্যর্থতার কাহিনি ঘটেছিল পুরাতন প্রস্তর যুগে। তখন কোহালি নয়, তাঁর নাম নিয়ে যেন অন্য কেউ ক্রিকেট খেলতেন। এখনকার কোহালি যে কতটা পাল্টে গিয়েছেন, তার নমুনা পাওয়া গেল সোমবারেও। একে তো দারুণ একাত্মতা আর ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়ে গোটা দল লন্ডন থেকে সোজা হ্যাম্পশায়ারের মাঠে এসে পৌঁছল। হোটেলে পর্যন্ত চেক-ইন করেননি কোহালিরা। সোজা মাঠে পৌঁছে প্র্যাক্টিস করে তবেই হোটেলে গেলেন। কেন হঠাৎ এই ছটফটানি?

জানা গেল, চার দিনের বিশ্রামের পরে টিম যখন গত কাল রাতে আবার এক জায়গায় হয়, সকলে বলে ওঠেন, আর হোটেলের ঘরে বসে থাকতে চাই না আমরা। এখান থেকে সোজা মাঠে গিয়ে প্র্যাক্টিসে নামি চলো। গোটা দলের আগ্রহ দেখে তক্ষুনি সব ব্যবস্থা করে ফেলা হয়। সাধারণত ট্র্যাভেল ডে-তে প্র্যাক্টিস করে না দল। এক শহর থেকে অন্য শহরে গিয়ে আগে হোটেলে চেক-ইন না করার ঘটনা তো এখনকার ক্রিকেটে বিরল।

Advertisement

দলের সেই খিদেকে আরও উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে গেলেন অধিনায়ক স্বয়ং। ঘণ্টা দুয়েকের উপরে নেট প্র্যাক্টিস করার পরে কয়েক জন ক্রিকেটার আলাদা গাড়ি করে চলে যাচ্ছিলেন। তাঁদের কেউ কেউ জিজ্ঞেস করলেন, বিরাট যাবে নাকি? নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা খুঁজতে গেলেন অধিনায়ককে। কিন্তু কোথায় তিনি? ড্রেসিংরুমের ভিতরে নেই। মাঠ থেকে ফিরে এসেছেন নেট সেশন করে। তা হলে কোথায় গেলেন? একটু পরে জানা গেল, অধিনায়ক নেট করে উঠেই ট্রেনার শঙ্কর বাসুকে নিয়ে ছুটেছেন জিমে। প্র্যাক্টিস রুটিন সম্পূর্ণ করে তবেই মাঠ ছাড়বেন। এই সংকল্পই তাঁকে বিরাট কোহালি করেছে, সামনে দাঁড়িয়ে দেখে নেওয়া গেল।

সাউদাম্পটনে পৌঁছে অবশ্য মনে হবে, শহরটা যতটা না কোহালির তার চেয়ে বেশি করে তাঁর স্ত্রী অনুষ্কা শর্মার। এখানে ভারত ও পাকিস্তানি মানুষের সংখ্যা বেশি। এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ে দু’দেশের অনেক পড়ুয়াও আছেন। তাঁদের সব চেয়ে প্রিয় বিনোদন বলিউড সিনেমা। অনুষ্কা শর্মাকে নিয়ে উপস্থিত হওয়া বিরাট কোহালি তাঁদের কাছে যতটা না মহাতারকা ক্রিকেটার, তার চেয়ে বেশি হয়তো ‘রব নে বনা দি জোড়ির’ বাস্তব রূপ। ট্যাক্সিতে উঠলেই শোনা যাবে ‘ইউনিটি ১০১’ রেডিয়ো স্টেশন। যেখানে সারাক্ষণ বাজছে বলিউডের হিট গান। এ দিন যেমন সাউদাম্পটন থেকে হ্যাম্পশায়ার ক্রিকেট স্টেডিয়াম— মিনিট কুড়ির ট্যাক্সি যাত্রায় শুনে নেওয়া গেল রেডিয়ো স্টেশনে বেতাবের ‘যব হম জওয়া হোঙ্গে’ বাজছে। সেটা শেষ হতেই শুরু হল মদন মোহনকে নিয়ে বিশেষ স্মৃতিচারণা। সেটা শুনতে শুনতে গুলিয়ে যাবে, ইংল্যান্ডে আছি নাকি ভারতেরই কোনও শহরে?

অনুষ্কা বিশেষ ভাবে আকৃষ্ট হতে পারেন এখানকার অন্য ইতিহাসে। ১০ এপ্রিল, ১৯১২— সাউদাম্পটন থেকেই যাত্রা শুরু হয়েছিল টাইটানিকের। কে জানত, সে আর ফিরবে না! কে জানত, যাত্রা আরম্ভের দিনেই ঘাতক হিমশৈল অপেক্ষা করে থাকবে আঘাত হানার জন্য। ভারতীয় দলের হোটেলের থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে টাইটানিক মিউজিয়াম। সেখানে গিয়ে স্মৃতির সমুদ্রে ডুব দিতে পারেন কোহালি-অনুষ্কা। ফিল্মের টাইটানিকও নিশ্চয়ই এসে পড়বে। লিয়োনার্দো দি ক্যাপ্রিয়ো এবং কেট উইন্সলেটের প্রেমকাহিনিকে মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য সব রকম পরিবেশ তৈরি থাকছে সাউদাম্পটনে।

ভারতীয় দলের এক নতুন মুখকে এই ইতিহাসের মঞ্চে দেখে তাঁর আগমনী সুর নিয়ে আরও রোমাঞ্চকর অনুভূতি হবে। তিনি পৃথ্বী শ। বলা হচ্ছে, সচিন তেন্ডুলকরের পরে এত বাজনা বাজিয়ে নাকি আর কোনও ক্রিকেটারের প্রবেশ ঘটেনি ভারতীয় দলে। এ দিন নেটে হেড কোচ রবি শাস্ত্রী দেখা গেল দুই তরুণ মুখকেই প্যাড-আপ করতে বললেন। পৃথ্বী এবং হনুমা বিহারী। এমনিতে তরুণ ক্রিকেটারদের নিয়ে শাস্ত্রী বরাবরই খুব উৎসাহিত থাকেন। এ দিন নেটে দেখা গেল ঋষভ পন্থকে বার বার ডেকে স্টান্স নিয়ে কথা বলছেন। কয়েক বার নিজে দাঁড়িয়ে শট খেলার শ্যাডো করে দেখালেন।

দূর থেকে দেখে মনে হল, জোরে বোলারদের সম্ভবত নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, পুরো শক্তিতে ওদের বল করো। পৃথ্বী এবং বিহারী সেই বোমাবর্ষণের মধ্যে নজর কেড়ে নেওয়ার মতো ব্যাটিং করে গেলেন। জানা গেল, পৃথ্বী নিয়ে প্রাথমিক রিপোর্ট বেশ ভালই। প্রথম দিন নেটে দেখে তাঁকে অনেকেরই ভাল লেগেছে। লম্বা দৌড়ের ঘোড়াই ভাবা হচ্ছে মুম্বইয়ের স্কুল ক্রিকেটে সচিন তেন্ডুলকরের রেকর্ড ভাঙা নতুন বিস্ময় প্রতিভাকে। আর টিম ইন্ডিয়ার তরফে প্রথম দিনে সুস্বাগতম জানানোর পাশাপাশি পৃথ্বীকে বুঝিয়ে দেওয়া হল, তুমি কোথায় এসে পড়েছ। রোজকার মতো ট্রেনার শঙ্কর বাসু ইয়ো ইয়ো টেস্টের জন্য ডেকে নিলেন তিন জনকে। তাঁদের এক জন পৃথ্বী শ। ক্রিকেটে নতুন ভারতের মন্ত্রই যে সেটা— তুমি যত প্রতিভাবানই হও না কেন, সবার প্রথমে ফিট ক্রিকেটার হতে হবে।

উদাহরণ চাই পৃথ্বীর? তাঁর অধিনায়ক বিরাট কোহালি তখন জিমে। নেটে দু’ঘণ্টা কাটিয়ে আসার পরে। সাউদাম্পটনে ফেরেনি টাইটানিক। চার বছর আগে জিমি অ্যান্ডারসন নামক হিমশৈলে ধাক্কা খেয়েও বিরাট ফিরেছেন। ক্রিকেটের অত্যাশ্চার্য প্রত্যাবর্তন কাহানি! যার চতুর্থ এপিসোড টাইটানিক শহরে!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement