অস্ত্রে শান। বঙ্গবিগ্রেডের দুই প্রধান সৈনিক মনোজ, লক্ষ্মী।
শত্রু শিবিরে অভাবী সংসার। ভাঁড়ারে টান। অথচ লক্ষ্মীর সংসারে ভাঁড়ার উপচে পড়ছে। চাইলেই সব পাওয়া যায়।
পর্যাপ্ত মশলা দিয়ে ভাল রান্না করতে পারবে বাংলা? না কি নিজেদের ঘরে অল্প মশলাতেই সুস্বাদু পদ বানিয়ে ফেলতে পারবে বরোদা?
আগামী চার দিনেই পাওয়া যাবে উত্তরটা। এই মরসুমে রঞ্জি ট্রফির প্রথম ম্যাচে।
লক্ষ্মীরতন শুক্লর সংসার অবশ্য নিজেদের নিয়েই বেশি ব্যস্ত। বিপক্ষের সংসারে কী হচ্ছে না হচ্ছে, তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই তাঁদের। গতবার রঞ্জি ট্রফিতে ব্যর্থতার পর এ বার যাতে ভাল কিছু করা যায়, সে জন্য হায়দরাবাদ থেকে বরোদা তুলে নিয়ে এসেছিল জাতীয় দলে ক্রমশ উজ্জ্বল হয়ে ওঠা অম্বাতি রায়ডুকে। কিন্তু রঞ্জির প্রথম ম্যাচেই তাঁকে নিয়ে বিপত্তি। কোমরে চোট। ১০-১২ দিন তো বটেই, দু’সপ্তাহও মাঠের বাইরে থাকতে হতে পারে তাঁকে। ফলে ২১ ডিসেম্বরের আগে তাঁর মাঠে নামা অসম্ভব, জানিয়ে দিলেন বরোদা কোচ তুষার আরোঠে। বললেন, “রায়ডুকে না পাওয়াটা অবশ্যই বড় ক্ষতি। বাংলা ভাল টিম। গতবারের সেমিফাইনালিস্ট। ওদের হারিয়ে পুরো পয়েন্ট নিতে পুরো দলকেই দরকার ছিল। কিন্তু যারা আছে, তারাও লড়বে।” নেই কি শুধু রায়ডু? এই তালিকায় নির্ভরযোগ্য বাঁহাতি স্পিনার ভার্গব ভট্টও। বাঁ হাতের আঙুলে চিড় ধরেছে আগেই। তা এখনও সারেনি বলে ম্যাচে নামা বারণ তাঁর। তাই তিনিও খেলতে পারবেন না।
বাংলা শিবিরে রায়ডুর খবর থাকলেও ভার্গবের না খেলার খবর ছিল না। আনন্দবাজার থেকে খবরটা পেয়ে তাঁরা বেশ অবাক। স্পিনার সৌরাশিস লাহিড়ী বললেন, “এই তো সকালেই নেটে দেখা হল। প্র্যাকটিসও করতে দেখলাম। কথাও হল ওর সঙ্গে। চোট বা না খেলা নিয়ে তো কিছু বলল না!” বিপক্ষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা নয় তো?
বাংলার কোচ অশোক মলহোত্র বললেন, “হতেই পারে। রায়ডুর না খেলার খবর আগেই পেয়েছি। এতে তো আমাদের সুবিধা হল বটেই, তবে নিজেরা ঠিকমত খেলতে পারলে তবেই সুবিধাটা পাওয়া যাবে। ভার্গবের না খেলার খবরটা জানা ছিল না। আজ তো নেটে বল করল।”
বিজয় হাজারের সেমিফাইনালে দলকে তুলতে না পারায় ইউসুফ পাঠান নাকি বরোদার নেতৃত্ব ছেড়ে দিয়েছেন আদিত্য ওয়াঘমোড়ের হাতে। তাঁর ভাই ইরফান তো রঞ্জি দলেই নেই। ইউসুফ ছাড়া তাই গত বিশ্বকাপে ভারতের বোলিং বিভাগের হাল ধরা মুনাফ পটেলের উপরই বরোদার ভাল-মন্দ নির্ভর করছে। এ সব জেনেও আগ্রাসী মেজাজে টগবগ করে ফোটার ইঙ্গিত নেই বাংলার ক্যাপ্টেন লক্ষ্মীরতন শুক্লর কথায়। বরং নিজের দল নিয়ে বেশি সতর্ক তিনি। বরোদা থেকে ফোনে বললেন, “এ সব নিয়ে একদমই ভাবছি না। বিপক্ষে কে আছে, কে নেই, আমাদের জানার দরকার নেই। শুধু নিজেদের নিয়ে ভাবছি। নিজেদের যথাসম্ভব ভাল ক্রিকেট খেলতে হবে, এটাই আমরা জানি। আর কিছু জানতে চাইও না।”
দুই স্পিনার সৌরাশিস ও ইরেশ এবং দুই পেসার দিন্দা ও বীরপ্রতাপে খেলার পরিকল্পনা শনিবার রাত পর্যন্ত ঠিক আছে। পঞ্চম বোলারের দায়িত্ব লক্ষ্মীই সামলাবেন। আর মনোজ তিওয়ারি ছাড়া শ্রীবত্স, অরিন্দম, সুদীপ, শুভজিত্, রোহনরা তো আছেনই। ব্যাট করার জন্য রিলায়্যান্স স্টেডিয়ামের উইকেটটা কেমন, তা নিয়ে মনোজ বললেন, “শক্ত উইকেট। শুরুর দিকে কাজে লাগিয়ে নিতে পারলে ভাল রান পাওয়া যাবে।” আর তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি থেকে উইকেট দেখে অফস্পিনার সৌরাশিস বলছেন, “দ্বিতীয় বা তৃতীয় দিন থেকেই উইকেটে টার্ন পাওয়া যাবে মনে হচ্ছে।” সে জন্য টসে জিতলে বাংলা হয়তো আগে ব্যাটই করতে নামবে। বাংলা শিবির থেকে তেমনই ইঙ্গিত পাওয়া গেল।
অভিমন্যু ঈশ্বরনকে প্রয়োজন নেই বলে বরোদায় নিয়ে গিয়েও এ দিন ফেরত্ পাঠিয়ে দেওয়া হল অনূর্ধ্ব ২৩-এর ম্যাচে যাতে তিনি খেলতে পারেন। কোচের বক্তব্য, “ওকে যখন এখানে দরকারই নেই, তখন আর বসে থেকে কী করবে? বসে থাকার চেয়ে অনূর্ধ্ব ২৩-এর ম্যাচ খেলা ভাল।”
বরোদা আপডেট
• বাংলার সবাই ফিট। দুই স্পিনার ও দুই পেসারে নামার পরিকল্পনা।
• দিন্দা ও বীরপ্রতাপের সঙ্গে তৃতীয় পেসার অধিনায়ক লক্ষ্মীরতন।
• দুই স্পিনার সৌরাশিস লাহিড়ী ও ইরেশ সাক্সেনা।
• সৌরভ সরকার ও শিবশঙ্কর পাল সম্ভবত এগারোর বাইরে।
• কোমরের চোটে কাবু প্রধান ব্যাটিং অস্ত্র অম্বাতি রায়ডুকে ছাড়াই মাঠে নামবে বরোদা।
• খেলবেন না নির্ভরযোগ্য বরোদার বাঁ হাতি স্পিনার ভার্গব ভট্টও।
• বাংলার বড় কাঁটা ইউসুফ পাঠান ও মুনাফ পটেল।