কোটি কোটি টাকা খরচ করে প্রাসাদ বুক করতে পারতেন। ডেস্টিনেশন ওয়েডিংয়ের জন্য চলে যেতে পারতেন ইটালি কিংবা ফ্রান্স। কিন্তু গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ডের বাসিন্দা হওয়া সত্ত্বেও এ সবের কোনওটাই করেননি জাহির খান ও সাগরিকা ঘাটগে। বরং বাড়িতে রেজিস্ট্রার ডেকে সাদামাটা ভাবেই বিয়েটা সেরে ফেলেছিলেন তাঁরা। এমন আড়ম্বরহীন ভাবেই গত তিন বছর ধরে সংসার করে চলেছেন এই দম্পতি, তাঁদের বাড়ির অন্দরসজ্জাই যার প্রমাণ।
রিয়্যালিটি শোয়ের দৌলতে সেলেবদের বাড়ির অন্দরমহলেও এখন অবাধ যাতায়াত আম জনতার। জাহির ও সাগরিকা যদিও ব্যক্তিগত জীবন আড়ালে রাখতেই পছন্দ করেন। তবে লকডাউনে একটা দীর্ঘ সময় বাড়িতেই ছিলেন তাঁরা। সেখান থেকেই নানা ছবি ও ভিডিয়ো পোস্ট করেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। বাড়িতে বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে তাঁদের আড্ডার ছবিও সামনে এসেছে। তাতেই অন্দরসজ্জায় তাঁদের রুচিবোধ সম্পর্কে ধারণা মিলেছে।
বিয়ের আগে মুম্বইয়ের যে ফ্ল্যাটে থাকতেন, সেখানেই সাগরিকার সঙ্গে সংসার পেতেছেন জাহির। তবে নামী কোনও ইন্টেরিয়র ডিজাইনারের হাতে অন্দরসজ্জার দায়িত্ব না ছেড়ে দিয়ে, দিদি নন্দিতার সাহায্য নিয়ে অত্যন্ত ছিমছাম ভাবে ফ্ল্যাটের প্রতিটি কোণা সাজিয়েছেন সাগরিকা। ধূসর, সোনালী এবং সাদা, ফ্ল্যাটের সর্বত্র এই তিনটি রংই প্রাধান্য পেয়েছে। এর সঙ্গে কোথাও কোথাও রয়েছে ময়ুরপঙ্খীবর্ণ, যা তাঁদের আভিজাত্যের ছোঁয়া এনেছে।
মূলত কাঠের আসবাবেই বাড়ি সাজিয়েছেন সাগরিকা। লিভিং রুমের সোফাও কাঠের তৈরি। তার উপর অফ হোয়াইট রংয়ের গদি। সঙ্গে সোনালি, ময়ূরপঙ্খীবর্ণের কুশন। সোফার পাশে টেবিলের উপর রয়েছে একটি ল্যাম্পশেড। আর মধ্যিখানে রয়েছে কফি টেবিলের উপর ফুলদানি ও গ্লাস ক্যান্ডল।
এক দিকে সোফার পাশে রয়েছে সাদা রংয়ের একটি চেস্ট। তার মধ্যে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রয়েছে। চেস্টের উপরও একটি ল্যাম্প রয়েছে। অবসর সময়ে সোফায় বসে সেই আলোতেই বই পড়েন সাগরিকা। চেস্টের উপরে ফোটোফ্রেমে যুগলের একটি ছবি ফ্রেম করে রাখা হয়েছে। চেস্টের উপরে দেওয়ালে ঝোলানো রয়েছে একটি পেন্টিংও।
লিভিং রুমের একপাশে রয়েছে টেলিভিশন ও হোম থিয়েটার সেট। সোফায় বসে তাতে ম্যাচ দেখেন জাহির। কফি টেবিলের সামনে পাতা রয়েছে ধূসর রংয়ের কার্পেটও। সাগরিকা নাকি নিজেই সেটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখেন। এ ছাড়াও কাঠের তৈরি ফোল্ডিং চেয়ার রয়েছে লিভিং রুমে।
দেওয়াল নিয়েও পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছেন সাগরিকা। শোওয়ার ঘর এবং লিভিং রুমের দেওয়াল মূলত সাদা হলেও, কোনও কোনও জায়গায় দেওয়ালে কাঠের কারুকার্য করিয়েছেন। একটি দেওয়ালে আবার ফুলপাতার নকশাও রয়েছে। লাল রঙের কার্পেটে পা রাখার আগে তার সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন সাগরিকা।
লিভিং রুমের এক কোণে একটি কাঠের শেলফ রয়েছে। তাতে যাবতীয় পুরস্কার সাজিয়ে রেখেছেন জাহির ও সাগরিকা। তার পাশে দেওয়ালে অন্য মাত্রা এনে দিয়েছে অ্যাবস্ট্রাক্ট আর্টিফ্যাক্টস।
ডাইনিং হলেও সাদামাদা কাঠের টেবিলই পছন্দ করেছেন সাগরিকা। সঙ্গে সাদা-কালো ডোরাকাটা টেবিলক্লথ। তবে দেওয়ালে ঝোলানো বিরাট আকারের অ্যাবস্ট্র্যাক্ট আর্টওয়ার্ক ডাইনিং হলটিতে অন্য মাত্রা যোগ করেছে।
শোওয়ার ঘরে ঢোকার আগে দরজার দু’পাশের দেওয়ালে বেগুলি রং লাগানো হয়েছে। বিয়ের রিসেপশনে যাওয়ার আগে সেখানে দাঁড়িয়ে ছবি তোলেন জাহির ও সাগরিকা। পরে বিবাহবার্ষিকীতে সেই ছবি পোস্ট করেই সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান। দেওয়ালের ওই বেগুনি রংই ছবিটিকে রাজকীয় করে তুলেছিল।
ঘরে রাখার জন্যও ধূসর রংয়ের আলমারি পছন্দ করেছেন সাগরিকা। তার নীচে রয়েছে সাদা রংয়ের বর্ডার। আলমারির সামনে দাঁড়িয়েও ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন তিনি।
শোওয়ার ঘরটিও ছিমছামই রেখেছেন সাগরিকা। গাঢ় খয়েরি রংয়ের কাঠের তৈরি খাট বেছে নিয়েছেন তিনি। বিছানার চাদর, বালিশের কভার এবং ব্ল্যাঙ্কেট সবই সাদা।
খাওয়া-দাওয়া থেকে জামাকাপড়, জাহিরের সব কাজেই নজর সাগরিকার। এমনকি আলমারি পরিষ্কার করার দায়িত্বও তাঁর। ছবি তুলে তার প্রমাণ দিয়েছেন জাহির।
এমনিতে তাঁদের ফ্ল্যাট বেশ খোলামেলাই। তার মধ্যেই সাগরিকার আলোর বাছাই নজর কেড়েছে। পেল্লাই আকারের ঝাড়বাতির তুলনায় আধুনিক ঝাড়বাতিই পছন্দ তাঁর। লিভিং রুম, ডাইনিং রুম থেকে ঘর— সর্বত্রই সেই আলো রয়েছে। তা ছাড়াও ল্যাম্পশেড তো রয়েইছে। এ ছাড়াও মোমবাতির উপর যে তাঁর দুর্বলতা রয়েছে, ঘরের যত্রতত্র নজর রাখলেই তার প্রমাণ মিলবে।