T20 World Cup 2024

রোহিত-কোহলি একসঙ্গে দলে ফিরলেন, খেললেন, বিশ্বজয় করলেন, অবসরও নিলেন জবাব দিয়েই

রোহিত, কোহলিদের দলের তরী বার বার তীরে এসে ডুবেছে। দু’বার টেস্ট বিশ্বকাপ ফাইনাল, এক বার করে এক দিনের এবং টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালে হারতে হয়েছে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০২৪ ১৩:৪৮
Share:

(বাঁ দিকে) রোহিত শর্মা এবং বিরাট কোহলি। —ফাইল চিত্র।

বিশ্বজয়ের রাতে ভারতীয় ক্রিকেটে পালাবদলের ইঙ্গিত। কোচ রাহুল দ্রাবিড় আর দায়িত্বে থাকবেন না। ২০ ওভারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা করে দিলেন রোহিত শর্মা এবং বিরাট কোহলি। তরুণতম ক্রিকেটের ভারতীয় দলকে আরও তরুণ হওয়ার সুযোগ করে দিলেন ৩৫ এবং ৩৭ বছরের দুই ক্রিকেটার।

Advertisement

সমসাময়িক সময়ে ভারত তো বটেই, বিশ্ব ক্রিকেটের সেরা ব্যাটারদের দু’জন একসঙ্গে সরে গেলেন। দেশকে শীর্ষস্থানে অধিষ্ঠিত করে বিশ্রামের পথে পা বাড়লেন ভারতীয় ক্রিকেটের দুই মহারথী। অধিনায়ক এবং প্রাক্তন অধিনায়ক। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রোহিতের অভিষেক ২০০৭ সালে। ২০ ওভারের ক্রিকেটেই। পরের বছর কোহলির যাত্রা শুরু হয়েছিল এক দিনের ক্রিকেট দিয়ে। সেই অর্থে ১৬ বছর একসঙ্গে দু’জনে ২২ গজে লড়াই করেছেন দেশের হয়ে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে থামলেনও একসঙ্গে। শুধুই কি থামলেন? না। তরুণ ক্রিকেটারদের কাঁধে চাপিয়ে দিলেন এক মস্ত দায়িত্ব। কারণ, শিখরে পৌঁছনো কঠিন। তার থেকে অনেক বেশি কঠিন শিখরে শিকড় সম্প্রসারণ।

সচিন তেন্ডুলকর, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, রাহুল দ্রাবিড়, বীরেন্দ্র সহবাগ, ভিভিএস লক্ষ্মণ উত্তর ভারতীয় ব্যাটিং লাইন আপে শূন্যতা আসতে দেননি রোহিত এবং কোহলি। দলের প্রয়োজনে ক্রমশ চওড়া হয়েছে তাঁদের ব্যাট। সাদা বলের ক্রিকেটে রোহিত আর লাল বলের ক্রিকেটে কোহলি শাসন করেছেন ক্রিকেট বিশ্বকে। তাঁদের দক্ষতায় নতমস্তকে শাসিত হয়েছেন তামাম বিশ্বের তাবড় বোলারেরা। যশপ্রীত বুমরা, মহম্মদ শামি, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, ভুবনেশ্বর কুমারদের মতো বোলারদের কপাল ভাল। ২২ গজে সামলাতে হয়নি রোহিত বা কোহলিকে। নিজেদের দিনে তাঁদের আসলে সামলানো যায় না। সেরা ফর্মে থাকা কোহলি বা রোহিতকে সামলানোর মতো বোলার নেই। এত বছরেও কাউকে পাওয়া গেল না! হয়তো হয় না।

Advertisement

২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য ছিলেন রোহিত। ২০১১ সালে এক দিনের বিশ্বকাপ জয়ী দলে ছিলেন কোহলি। ২০১৩ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ী দলে ছিলেন দু’জনেই। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির নেতৃত্বে ভারতীয় ক্রিকেটের সেই দাপটের সময়ের সাক্ষী দু’জনেই। অথচ রোহিত বা কোহলির দলের তরী বার বার তীরে এসে ডুবেছে। দু’বার টেস্ট বিশ্বকাপ ফাইনাল, এক বার করে এক দিনের এবং টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালে হারতে হয়েছে। বড় প্রতিযোগিতায় ধারাবাহিক ব্যর্থতা রোহিত, কোহলির ব্যক্তিগত দক্ষতার সঙ্গে বড্ড বেমানান ছিল। তবু মানিয়ে চলতে হয়েছে তাঁদের। পেশাদার খেলোয়াড়দের মানিয়ে চলতে হয়। যেমন লিয়োনেল মেসি, নোভাক জোকোভিচদেরও একটা সময় পর্যন্ত মানিয়ে চলতে হয়েছে।

রোহিত-কোহলি শুধু ২২ গজের জুটি নয়। ভারতীয় সাজঘরের জুটিও। এক জন জীবনের সবচেয়ে খারাপ ফর্মে থাকলেও অন্য জনকে দিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করানো যায় না। দু’জনেই মনে করেন, আর এক জনের অফ ফর্ম বলে কিছু হয় না। অধিনায়ক কোহলি যেমন রোহিতকে ছাড়া তাঁর দল ভাবতে পারতেন না, শর্মারও তেমন বন্ধুর উপর বিরাট আস্থা। একে অন্যের সমালোচকদের কথা শোনাতে দু’বার ভাবেননি।

রোহিত, কোহলির টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলাটাই যেন বড় প্রতিযোগিতায় ধারাবাহিক ব্যর্থতার জবাব দেওয়ার জন্য। গত জানুয়ারি মাসে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে সিরিজ়ের আগের ১৩ মাস দু’জনের কেউ একটাও আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেননি। জায়গা ছেড়ে দিয়েছেন তরুণদের জন্য। বিশ্বকাপের জন্যই বোধহয় তাঁরা আবার একসঙ্গে দেশের হয়ে ২০ ওভারের ক্রিকেট খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। লক্ষ্যটা শনিবার রাতে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। গোটা প্রতিযোগিতায় আগ্রাসী মেজজে রান করেছেন রোহিত। যে দু’দিন পারেননি, সেই দু’দিনই সামলে দিয়েছেন কোহলি। দু’জনেই রান করতে পারেননি, হয়নি। সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন রোহিত। তাঁর সব সিদ্ধান্তের পাশে থেকেছেন কোহলি।

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে কোহলির রান ৪১৮৮। রোহিতের ৪২৩১। কোহলির সর্বোচ্চ অপরাজিত ১২২। রোহিতের অপরাজিত ১২১। কোহলির ৫০ রানের বেশি ইনিংস ৩৯টি। রোহিতের ৩৭টি। পরিসংখ্যানও যেন হাত ধরাধরি করে হেঁটেছে। হাত ধরাধরি করেই থামলেন। দুই অধ্যায়ের শেষ লাইন লেখা হল বার্বাডোজ়ের ২২ গজে।

দু’জনে একসঙ্গে দলে ফিরলেন, খেললেন, বিশ্বজয় করলেন এবং অবসর নিলেন। জবাব দিয়েই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement