ত্রিমুখী ঐতিহাসিক তাৎপর্য একটু একটু করে ফুটে উঠছিল দেবীপক্ষের ইডেন টেস্টে! আর ফুটে উঠে ম্যাচটাকে নীরব মাহাত্ম্যও দিচ্ছিল।
ভারতের মাঠে আড়াইশোতম টেস্ট!
পঞ্চাশ বছর বাদে ইডেনে ভারত-নিউজিল্যান্ড।
উৎসাহীরা যোগ করছিলেন আরও একটা প্রেক্ষিত। জিতলে টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে আবার এক নম্বরের মগ়ডালে ওঠা যাবে।
বুধবার দুপুরের পর ইডেন ঘিরে ক্রিকেটীয় আলোচনা ঠিক সে ভাবেই উড়ে গিয়েছে দেশের উত্তরাঞ্চলে যে ভাবে কলকাতার অনেক ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ে চট্টগ্রাম উপকূলে। টেস্ট ম্যাচ আপাতত একটাই! যেখানে না খেলছে ভারত, না নিউজিল্যান্ড। আর সেটা মহালয়া নয়, মহাপঞ্চমীর দিন।
সুপ্রিম কোর্ট সে দিনই বর্তমান ভারতীয় বোর্ড কর্তাদের সরানোর ব্যাপারে তাদের রায় দিয়ে দেবে। ইডেন পিচ দেখে পুলকিত না হওয়া বিরাট কোহালি বলে-টলে ঘাস তুলতে পারবেন কি না, তা নিয়ে একমাত্র তাঁর টিমের উৎসাহ রয়েছে। ক্রিকেট জনতার ভাবনার সিলেবাসেই নেই। তারা ধরে নিয়েছে লোঢা প্যানেলের সংস্কার না মানার অপরাধে মহাপঞ্চমীতেই সর্বোচ্চ আদালত সরিয়ে দেবে বোর্ড প্রেসিডেন্ট আর সচিবকে। সরবেন বাকি কর্তারাও। কারণ লোঢা প্যানেল তাদের সর্বশেষ স্টেটাস রিপোর্টে পরিষ্কার বলেছে, বোর্ড অফিশিয়ালরা তাদের প্রস্তাবিত সংস্কার তো মানছেনই না, উল্টে নানা রকম বিপরীতমুখী বিবৃতি আর কাজকর্মের মাধ্যমে আদালত অবমাননা করে চলেছেন। এর পর বিসিসিআইয়ের তীব্রতম সমালোচনা করে বিচারপতিরা বলেছেন, ৬ অক্টোবর তাঁরা চূড়ান্ত রায় দেবেন। বোর্ডকে তার আগে যা করার করতে হবে।
মহালয়ার দিন মুম্বইয়ে বোর্ডের বিশেষ সাধারণ সভা। বোর্ড কর্তাদের হয় সে দিন গণ পদত্যাগ করতে হবে, নয় যুদ্ধের মেজাজে থেকে আদালতের ছাঁটাই ভোগ করতে হবে। যে রাস্তাতেই তাঁরা যান, পঞ্চমীর দিন থেকে অনুরাগ ঠাকুর-অজয় শিরকেরা বোর্ড কর্তা হিসেবে অতীত কাল।
বোর্ডে এঁদের অনুগামীরা এখনও বলে চলেছেন, সংসদে স্পোর্টস বিল এনে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তকে ঘুরিয়ে দেওয়া সম্ভব। সরকার যেখানে সঙ্গে রয়েছে, সেখানে তারাই পারবে এই রায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। স্পোর্টস বিল মুক্তির জন্য এঁদের প্রধান এবং শেষ আশা।
নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকদের অবশ্য মনে হচ্ছে, দিল্লি দূর অস্ত। একটা বিল তৈরি, সেটা সংসদে দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থনে পাশ করানো— এগুলো মোটেও সহজ নয়। অশ্বিনের স্পিনে আবার নিউজিল্যান্ড নাচবের চেয়েও অনেক নিশ্চিত ভাবে বলা যায়, ভারতীয় ক্রিকেটে নতুন যুগের সূর্যোদয় ঘটছে আগামী বৃহস্পতিবার।
আর সেই সূর্যোদয়ে কি বিশিষ্ট হয়ে দেখা দেবেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়? এক মহাষ্টমীতে অবসরের বিষণ্ণ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিলেন। মহাপঞ্চমীতে বোর্ড পরিচালনার জন্য আদালত যদি সাময়িক ভাবে তাদের পছন্দের নিরপেক্ষ প্রশাসক নিযুক্ত করে দেয়, সে দিনই হয়তো সৌরভের ক্ষমতায় আসার বীজ বপন হয়ে যাবে। ইডেন টেস্টের আসল জল্পনা ম্যাচ ঘিরে নয়। ম্যাচ আয়োজনকারী প্রেসিডেন্টকে ঘিরে।
নতুন বোর্ডের কী হতে পারেন তিনি? প্রেসিডেন্ট? না সচিব?