মুক্তি। ইন্ডোরে প্র্যাকটিস সেরে রবিবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।
শ্রীনিবাসন বোল্ড ডালমিয়া।
আইপিএল স্কোরবোর্ডে আপাতত তাই দেখাচ্ছে।
নতুন বোর্ড প্রেসিডেন্টের দুসরায় হতচকিত হয়ে আউট প্রাক্তন ও তাঁর আইপিএল সঙ্গীরা।
খারাপ আবহাওয়ার জন্য ইডেনে নেমে অনুশীলন করার উপায় নেই জেনে সতীর্থদের সঙ্গে ইডেনের লাগোয়া পঙ্কজ গুপ্ত ইন্ডোরেই ঢুকে পড়লেন সুনীল নারিন।
এত দিন মন খুলে হাত ঘোরাতে পারেননি বোর্ডের অ্যাকশন পরীক্ষার ফতোয়ায়। সেই বোর্ডেরই দেওয়া সবুজ সঙ্কেতে আর কোনও সংকোচ নেই। রবিবার ইন্ডোরের নেটে সেই চেনা নারিনকে দেখা গেল। তিন নেটে যখন ব্যাট করছিলেন আন্দ্রে রাসেল, আজহার মেহমুদ ও রবিন উথাপ্পা, তখনই বল হাতে নিজেকে ঝালিয়ে নিলেন। মূলত উথাপ্পার নেটেই বল করেন তিনি। ইন্ডোর থেকে বেরিয়ে আসার সময়ও তাঁকে দেখা গেল বেশ খোশমেজাজে। স্বদেশীয় আন্দ্রে রাসেলের সঙ্গে গল্প করতে করতে দিব্যি ঢুকে পড়লেন ক্লাবহাউসে।
সেখানে দোতলায় তখন মঙ্গলবারের আইপিএল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নিয়ে বৈঠকে ব্যস্ত বোর্ড প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়া। কয়েক ঘণ্টা আগেই যাঁর নির্দেশে বোর্ডের কাছ থেকে আইপিএলে খেলার ছাড়পত্র পেয়েছেন ক্যারিবিয়ান স্পিনার। এবং যে সিদ্ধান্ত নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনকে এতটুকু খুশি করেনি বলেই খবর। আইপিএল সিইও সুন্দর রামন থেকে শুরু করে শ্রীনি লবির কেউই চাননি যে, নারিনকে আইপিএলে খেলার জন্য এ ভাবে সবুজ সঙ্কেত দেওয়া হোক। এটাও মনে করা হচ্ছে যে, বোর্ডে যদি এখন অন্য জমানা থাকত তা হলে নারিনকে মোটেই এই ছাড়পত্র দেওয়া হত না।
এত দিন অনেকে অভিযোগ করছিলেন যে, জগমোহন ডালমিয়া বোর্ড প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর কিছুই করছেন না। এখন পর্যন্ত কোনও কমিটি গঠন করা হয়নি। এমনকী আইপিএল চেয়ারম্যানও তিনি ঠিক করেননি। কিন্তু সুনীল নারিনকে ছাড়পত্র দিয়ে এ দিন একটা জোরালো সিদ্ধান্ত নিলেন ডালমিয়া। আসলে যেন একটা বিবৃতিই দিলেন, তিনি নিজের এবং নিজেরই থাকবেন।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ টি-টোয়েন্টি থেকে নিষিদ্ধ হওয়ার পর বিশ্বকাপে খেলেননি নারিন। সেই সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোর্ড যা করে দেখাতে পারেনি, কেকেআর এ বার সেটাই করে দেখাল। নারিনকে বিশ্বকাপে খেলাতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু কেকেআর সিইও বেঙ্কি মাইসোরের নিরলস চেষ্টায় আইপিএলে নারিনের খেলা সম্ভব হল। এ দিন নারিনের ছাড়পত্রের খবর পেয়ে মাইসোর টুইট করেন, ‘‘খুব স্বস্তি পেলাম। বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট ও সচিব এবং (বোলিং রিভিউ) কমিটিকে ইতিবাচক ফলের জন্য ধন্যবাদ।’’
নারিনকে এক সময় ইংল্যান্ডে পাঠানো হয় তাঁর অ্যাকশন শোধরানোর জন্য। সেখানে নারিনের তিন রকম ডেলিভারি ছ’টা করে করানো হয়। মোট ১৮টা। যার মধ্যে মাত্র দু’টো ডেলিভারি সন্দেহ সীমার কাছাকাছি ছিল। তার পরই সেই পরীক্ষার রিপোর্ট আইসিসি-তে পাঠানো হয়, যা দেখে বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থাও তাঁকে ছাড়পত্র দেয়।
রবিবার বোর্ডের এই সিদ্ধান্ত জানার পর কেকেআর কর্তা থেকে নারিনের সতীর্থরা সবাই খুশি। শাহরুখ খান যেমন এই খবর পেয়ে টুইট করলেন, ‘‘...আর আমার ছেলেরা পূর্ণ শক্তি নিয়ে নামবে। কেকেআর দল এখন তৈরি এবং নিজেদের উজাড় করে দেওয়ার জন্য মরিয়া। তোমাদের ভালবাসি ছেলেরা... ৮ তারিখ দেখা হবে।’’ নাইট শিবিরের খবর, তিনি মঙ্গলবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে না থাকলেও বুধবার ইডেনে প্রথম ম্যাচে আসবেন।
আগেই নাকি কেকেআর শিবিরে সুখবরটা এসে গিয়েছিল। কিন্তু সরকারি ভাবে এই সিদ্ধান্ত বোর্ড সচিব অনুরাগ ঠাকুর ঘোষণা করেন রবিবার দুপুরে। যাতে পরিষ্কার উল্লেখ করা হয়, ‘‘এস বেঙ্কটরাঘবন, জাভাগল শ্রীনাথ এবং এভি জয়প্রকাশের বোলিং রিভিউ কমিটি সুনীল নারিনের অ্যাকশন পরীক্ষা করে পরামর্শ দিয়েছে আইসিসির অনুমোদিত সীমার মধ্যে থেকেই বল করছেন নারিন। সন্দেহজনক অ্যাকশনের জন্য সতর্কিত বোলারদের তালিকা থেকে তাঁর নাম বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছে ওই কমিটি।’’
সাকিব আল হাসানও রবিবার ইডেনে এসে বললেন, ‘‘নারিন যত দিন এই দলে খেলেছে, খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। তাই আমাদের কাছে এটা অবশ্যই খুশির খবর।’’ শিবিরে স্বস্তির ছবিটা সাকিবের এই কথাতেই স্পষ্ট।