সন্দীপ দাস, নির্মাল মাহাতো
ছেঁড়া জুতো পরে কলকাতায় ওয়ার্ল্ড ম্যারাথনে নেমে সফল হতে পারেননি। কয়েক সপ্তাহ পরে গত রবিবার নতুন জুতো পায়ে মহানগরের পথে কলকাতা পুলিশের আয়োজিত ম্যারাথন দৌড়ে প্রথম হলেন কাশীপুরের সেই নির্মল মাহাতো। দ্বিতীয় স্থান পেয়েছেন ঝালদা ২ ব্লকের বেগুনকোদরের সন্দীপ দাস। জোড়া পদক প্রাপ্তিতে উচ্ছ্বসিত পুরুলিয়ার ক্রীড়ামহল।
গত ডিসেম্বরে উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরে আয়োজিত বেঙ্গল মাস্টার্স অ্যাথলেটিক্সে ম্যারাথনে জেলায় জোড়া পদক এসেছিল এই দু’জনের হাত ধরেই। ৩৫ বছরের ঊর্ধ্ব বিভাগে ১০ হাজার মিটার ও পাঁচ হাজার মিটারে জোড়া সোনার পদক উঠেছিল নির্মলের গলায়। আর সন্দীপ ৩০ বছরের ঊর্ধ্ব বিভাগের পাঁচ হাজার মিটারে সোনা ও দশ হাজার মিটারে রুপো জিতেছিলেন সন্দীপ।
কাশীপুরের রামবনি টোলার বাসিন্দা নির্মল আক্ষরিক অর্থেই দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারের যুবক। চাষবাসই তাঁদের সম্বল। কলকাতা থেকে সোনা নিয়ে এসেই তিনি ফের ধান ঝাড়াইয়ের কাজে নেমে পড়েছেন। নির্মল বলেন, ‘‘ছেঁড়া জুতো সারিয়ে নিয়েই ওয়ার্ল্ড ম্যারাথনে দৌড়তে গিয়েছিলাম। খুব অসুবিধা হয়েছিল। অল্প পাল্লার দৌড় হলেও ওই জুতো নিয়েই শেষ চেষ্টা করতাম। কিন্তু, ওয়ার্ল্ড ম্যারাথনের ২১ কিলোমিটারের দৌড়নো সম্ভব ছিল না।’’ তাও তিনি চতুর্থ স্থান পেয়েছিলেন।
তবে, কলকাতা পুলিশের ম্যারাথনে নামার আগে নির্মলকে নতুন জুতো তুলে দিয়ে পাশে দাঁড়ান পুরুলিয়া শহরের তরুণী আনমোল কেডিয়া। তিনি বলেন, ‘‘জুতোর জন্য তাঁর দৌড় যাতে না থামে, সে জন্য জুতো কিনে দিয়েছি। কলকাতা পুলিশের ম্যারাথনে তিনি নিজেকে ফের শীর্ষে নিয়ে গিয়েছেন, শুনে ভাল লাগছে।’’
পদকের সঙ্গে নির্মল তাকিয়ে থাকেন আর্থিক পুরস্কারের দিকে। কারণ, ওই টাকা দিয়েই তিনি পরের ম্যারাথনের ‘এন্ট্রি ফি’ জমা দেন। নির্মল বলেন, ‘‘কয়েক হাজার টাকা আর্থিক পুরস্কার এখনও পাইনি। ওই টাকা পেলে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে কলকাতাতেই একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের আয়োজিত ম্যারাথনে নাম লেখাব। দেখি কবে পুরস্কারের টাকাটা আসে।’’
সন্দীপ বলেন, ‘‘দু’জনে আবার জেলার জন্য জোড়া পদক আনায় ভাল লাগছে। তবে, দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে নির্মল যে ভাবে দৌড়চ্ছেন, সে জন্য কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়।’’