সফল: ২০৫ কেজি ওজন তুলে সেরার পুরস্কার সৃষ্টির। নিজস্ব চিত্র
মা সোনা জেতার জন্য বারবেল হাতে একের পর এক ভারী ওজন তুলছেন আর লখনউয়ে ভিডিয়ো কলে তা দেখছে চার বছরের ছেলে।
বৃহস্পতিবার চমকপ্রদ এই দৃশ্যের সাক্ষী থাকল ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্র। জাতীয় ভারোত্তোলনে মেয়েদের ৮১ কেজি বিভাগে কাঙ্খিত সোনা জেতার পর মঞ্চে আবেগ চেপে রাখতে না পেরে কেঁদেই ফেললেন একত্রিশ বছরের সৃষ্টি সিংহ। তারপর দ্রুত দৌড়ে গেলেন ছেলে শ্রেয়াস্তের সঙ্গে ফেনে কথা বলতে।
বিজয় মঞ্চ থেকে সোনার পদক নিয়ে নামার পর সৃষ্টি বললেন, ‘‘ছেলে বড় হয়ে যাতে বলতে পারে তার মা কিছু করেছে, এ জন্যই খেলা ছেড়ে দেওয়ার পাঁচ বছর পরে আবার অনুশীলন শুরু করেছিলাম। লক্ষ্য ছিল সোনা। কালই লখনউ ফিরে যাব। ছেলের গলায় পরিয়ে দেব এটা। কত দিন ওকে দেখিনি।’’ বলতে বলতে ঢুকে যান ডোপ পরীক্ষার ঘরে।
বাবা বিন্ধ্যাচল সিংহ এক সময় কুস্তি করতেন। এখন স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান। দাদা সন্দীপ সিংহ ভারোত্তোলক ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই তাই বারবেল তুলতে চলে আসতেন দাদার সঙ্গে। কমনওয়েলথ গেমস, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ও জাতীয় পর্যায়ে সোনা-রুপো পেয়েছেন অনেক। বিয়ের পরও নিয়মিত নেমেছেন প্রতিযোগিতায়। কিন্তু গর্ভবতী হওয়ার পর খেলা ছেড়ে দেন ২০১৩ সালে। পাঁচ বছর বারবেল হাতেই তোলেননি। ছেলে মানুষ করছেন। ছেলের দু’বছর বয়স হওয়ার পর ফের শুরু করেন অনুশীলন। বলছিলেন, ‘‘গত ছয় মাস বাড়ি যাইনি। ছিলাম প্রস্তুতি শিবিরে। প্রতিদিন মনে হত বাড়ি ফিরে যাই। সোনার দরকার নেই। ছেলেকে মানুষ করি। বারবার ছেলের সঙ্গে কথা বলে মনকে শান্ত করতাম। পরিশ্রমের ফল পেলাম। আমার কষ্ট করা সার্থক।’’ সোনা জেতার পর রেল কর্মী সৃষ্টি সুযোগ পেতে চলেছেন কাজাখস্তানে এশীয় চ্যাম্পিয়নশিপে। সেখানে যাওয়ার আগেও তো শিবিরে থাকতে হবে? ‘‘ও তো এখন একা একা থাকতে শিখে গিয়েছে। সমস্যা হবে না।’’
সৃষ্টি অবশ্য এ দিন মেয়েদের ৮১ কেজি বিভাগে সোনা জিতলেন ২০৫ কেজি ওজন তুলে। স্ন্যাচে তোলেন ৯৩, ক্লিন অ্যান্ড জার্কে ১২২। দ্বিতীয় স্থানে চণ্ডীগড়ের বলজিন্দার কৌর। তুললেন ১৯৫ কেজি। ব্রোঞ্জ জিতলেন তামিলনাড়ুর টি দার্শিনী।
এ দিন পুরুষদের ১০২ কেজি বিভাগে স্ন্যাচ ইভেন্টে সোনা জিতে রেকর্ড গড়লেন রেলের প্রদীপ সিংহ। তুললেন ৩৪৬ কেজি। স্ন্যাচে নিজের ১৫০ কেজির রেকর্ড ভেঙে তুললেন ১৫১ কেজি। ৩২৫ কেজি তুলে রুপো জিতলেন শুভম। মেয়েদের ৭৬ কেজি বিভাগে সোনা জিতলেন চণ্ডীগড়ের দীপিকা হান্ডা। তুললেন ২১১ কেজি। রুপো জিতলেন তামিলনাড়ুর আরক্ষা আলিশ। তুললেন ২০৭ কেজি। ব্রোঞ্জ পেলেন মণিপুরের তুমিনা দেবি।