পাকিস্তানিদের হৃদয় ছোট নয়, জানিয়েছেন ইনজামাম। ছবি টুইটার থেকে নেওয়া।
দানিশ কানেরিয়ার দাবি উড়িয়ে দিলেন পাকিস্তানের প্রাক্তন অধিনায়ক ইনজামাম উল হক। বললেন, পাকিস্তানের ক্রিকেটে ধর্মের নামে ভেদাভেদের কোনও জায়গা নেই। একইসঙ্গে ভারতীয় ক্রিকেটারদের সঙ্গে পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের সম্পর্কও যে দারুণ ছিল সেই সময়, তা-ও জানিয়েছেন তিনি। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের তাঁর জন্য খাবার আনতেন বলেও মন্তব্য করেছেন ইনজি।
নিজের ইউটিউব চ্যানেলে ইনজামাম বলেছেন, “দানিশকে নিয়ে এই বিতর্কের ব্যাপারে শুনেছি। অভিযোগ করা হয়েছে, দানিশের ব্যাপারে খেলোয়াড়দের কারও কারও ভাবনা ঠিকঠাক ছিল না। বা, তারা একসঙ্গে খেত না, বাইরে একসঙ্গে যেত না। কিন্তু আমি কখনও এমন কিছু অনুভব করিনি। আর দানিশ আমার নেতৃত্বেই বেশি খেলেছে। মুসলিম নয় বলে কেউ ওর সঙ্গে বাজে ব্যবহার করেছে বলে মনে করি না। আমাদের দলে এমন একটা ঘটনার কথাও মনে পড়ছে না।”
ইনজামাম আরও বলেছেন, “মুসলিম নয়, এমন ক্রিকেটারদের মধ্যে ইউসুফ ছিল দলে। কিন্তু এখন ও মুসলিম। ওর নাম এখন মহম্মদ ইউসুফ। যখন ও ইউসুফ ইওহানা ছিল, তখনও মুসলিম নয় বলে ওর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হয়নি। আবার ধর্ম বদলানোর পরও তা হয়নি। তেমন কিছু হলে ও নিশ্চয়ই ধর্মান্তরিত হত না।”
পাকিস্তানিদের হৃদয় ছোট নয় বলে দাবি করে ইনজামাম বলেছেন, “এমন কেউ করতে পারে, এটা বিশ্বাস করছি না। আমাদের হৃদয় এত ছোট নয় যে কাউকে গ্রহণ করতে পারব না। পাকিস্তানিদের হৃদয় ব়ড় বলেই বিশ্বাস করি। আমরা যে কাউকে আমরা হৃদয়ে স্থান দিতে পারি। ২০০৪ সালে পাকিস্তানে ১৫ বছর পর এসেছিল ভারত। দুই হাত বাড়িয়ে আমরা স্বাগত জানিয়েছিলাম ভারতকে। খাওয়াদাওয়া, কেনাকাটা, কোথাও যাওয়া, কোনও কিছুর জন্যই টাকা নেওয়া হয়নি। এক বছর পর আমরা ভারতে গিয়েছিলাম। দুই ক্ষেত্রেই অধিনায়ক ছিলাম আমি। আর ভারতে গিয়ে আমরা একই রকম আন্তরিকতা আর ভালবাসা পেয়েছিলাম। ভারতীয়রা ঘরের দরজা খুলে দিয়ে অতিথি হিসেবে থাকার জন্য ডেকেছিল। রান্না করে খাইয়েছিল। কেনাকাটার টাকাও নেয়নি। দুই দেশের জনতার মধ্যে দুর্দান্ত ভালবাসা রয়েছে। তাই মনে হয় না যে অন্য কিছু হতে পারে বলে। আমাদের হৃদয় এত ছোট নয়।”
ইনজি আরও বলেছেন, “২০০৫ সালে ভারত সফরে আসার আগে কলকাতায় এক ফোটোশুটে গিয়েছিলাম। ভারতের পক্ষ থেকে ছিল সৌরভ। তার আগে ও একটা রেস্তোরা খুলেছিল। যার উদ্বোধনে সচিনের সঙ্গে গিয়েছিলাম। সেই রেস্তোরা থেকে আমার জন্য খাবার নিয়ে আসত। শারজায় যখন খেলতে যেতাম, তখন দুই দল এক হোটেলেই থাকতাম। দুই দলের ক্রিকেটারদের দেখতাম একসঙ্গে বসে ঠাট্টা-ইয়ার্কি করতে, খাওয়া-দাওয়া সারতে। দুই দলেই এমন কিছু আমার চোখে পড়েনি।”
পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশারফের সঙ্গে আলাপচারিতার বর্ণনাও দিয়েছেন ইনজি। বলেছেন, “প্রেসিডেন্ট একবার আমাকে নিমন্ত্রণ করেছিলেন। পুরো দল সেখানে ছিল। উনি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন যে, নমাজ পড়া বা দাড়ি রাখা বা না-রাখার ভিত্তিতে দল গ়ড়ি কি না। আমি শুনেই হেসে ফেলি। বলি যে, ধর্ম, রাজনীতি আর খেলার আলাদা আলাদা জায়গা আছে। দুটোকে গুলিয়ে ফেললে চলবে না। আর আমি সেটা মানিও না।”