সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
হাসপাতাল থেকে আগামিকাল, বুধবার ছুটি পেতে পারেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তবে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার চার দিন পরে ছুটি পেলেও তা সাময়িক হবে বলেই জানা গিয়েছে। হৃদ্রোগের চিকিৎসার দ্বিতীয় পর্ব সম্পূর্ণ করার জন্য কয়েক দিনের মধ্যেই আবার হাসপাতালে ফিরতে হবে ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেট অধিনায়ককে।
কী হবে সেই দ্বিতীয় পর্বে? জানা গিয়েছে, সৌরভের ডান দিকের ধমনীতে একটি স্টেন্ট বসানো হয়েছে। কিন্তু তাঁর বাঁ দিকের ধমনীতেও দু’টি ব্লকেজ রয়েছে। ঠিক হয়েছে, কোনও রকম ঝুঁকি না-নিয়ে আরও দু’টি স্টেন্ট বসানো হবে। সৌরভের জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্য, হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ সরোজ মণ্ডল বলেন, ‘‘দেশ ও বিদেশের হৃদ্রোগ চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনা করে যৌথ ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সৌরভের অন্য দু’টি ধমনীতে অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টিই করতে হবে, বাইপাস নয়। তবে সেটা কবে করা হবে, এখনই তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।’’
সৌরভকে দেখতে আজ, মঙ্গলবার বেঙ্গালুরু থেকে চার্টার্ড ফ্লাইটে কলকাতা আসছেন হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ দেবী শেঠি। তিনি দেখার পরে বাকি দু’টি অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টির দিন ঠিক হবে। সম্ভবত, বুধবার ছুটি পাওয়ার দু’সপ্তাহের মধ্যে ফের হাসপাতালে ভর্তি করে সেই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করা হবে। তবে সৌরভ-ভক্তদের জন্য সুখবর হল, হৃদ্রোগের ঝটকা কাটিয়ে তাঁর শারীরিক অবস্থার অনেকটাই উন্নতি ঘটেছে। তাঁর বুকে যন্ত্রণা বা অস্বস্তির ভাবও এখন নেই। ফল, ছানা, দুধ দিয়ে প্রাতরাশ সেরেছেন। দুপুরের খাদ্য-তালিকায় ছিল ভাত-মাছের ঝোল। এ দিন পরিবারের সদস্য এবং বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে হালকা মেজাজে গল্পও করেছেন সৌরভ। বোর্ড সচিব তথা অমিত শাহের পুত্র জয় শাহ এবং প্রাক্তন বোর্ড প্রধান ও বিজেপি মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর তাঁকে দেখতে এসেছিলেন। তাঁদের সঙ্গে হেসেই কথা বলেছেন। তবে রাজনীতি বা ক্রিকেট প্রশাসন সংক্রান্ত কোনও বিষয় ওঠেনি বলেই জানা গিয়েছে। অনেকের মতে, সৌরভকে এখন সবার আগে চাপমুক্ত থাকতে হবে। ডাক্তারদেরও পরামর্শ, আপাতত কোনও রকম কাজের চিন্তা বা কিছু নিয়ে ভাবতে বসা থেকে বিরত থাকতে হবে তাঁকে।
আরও পড়ুন: অদূর ভবিষ্যতেও মহমেডানের সমস্যা মিটছে না
সৌরভের চিকিৎসার ধরন এখন কী হতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা করতে সোমবার বাইরের কয়েক জন হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে বৈঠকে বসে হাসপাতালের তৈরি করা ৯ জন চিকিৎসকের মেডিক্যাল বোর্ড। বৈঠকে জ়ুম মারফত যোগ দেন দেবী শেঠি এবং বিশিষ্ট হার্ট সার্জন রমাকান্ত পান্ডা। ফোনে সবিস্তার আলোচনা করা হয় ইন্টারভেনশনাল কার্ডিয়োলজিস্ট স্যামুয়েল ম্যাথুর সঙ্গে।
মুম্বইয়ের যশলোক হাসপাতালের হৃদ্রোগ চিকিৎসক অশ্বিন মেহতা এবং নিউ ইয়র্কের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের হৃদ্রোগ চিকিৎসক শামিন কে শর্মা ইতিমধ্যেই যে সব মতামত জানিয়েছেন, সেগুলি নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। জানা গিয়েছে, বাকি দু’টি স্টেন্ট বসানোর প্রক্রিয়া বর্তমান হাসপাতালেই হবে, না কি অন্য কোথাও, দেবী শেঠি সৌরভকে পরীক্ষা করার পরে তা ঠিক করা হবে। যদিও এই মুহূর্তে তাঁকে রাজ্যের বাইরে কোথাও বা বিদেশে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে না। একে তো কোভিড-আতঙ্ক চলছে, তার উপরে এখনই উড়ান-যাত্রায় ঝুঁকি থাকতে পারে বলেও মনে করছেন তাঁর পরিবারের সদস্য এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা। ইংল্যান্ডে সৌরভের অনেক পরিচিত চিকিৎসক রয়েছেন। তাঁর বাবার বাইপাস সার্জারিও ইংল্যান্ডে করিয়েছিলেন সৌরভ। কিন্তু এখন সেখানে নতুন করে করোনা-সংক্রমণ ছড়ানোয় ইংল্যান্ডে যাওয়ার কথা ভাবতে পারছেন না কেউ।
এ দিকে, সৌরভকে দেখার জন্য ভিড় উপচে পড়ছে আলিপুরের হাসপাতালে। চিকিৎসক সৌতিক পান্ডা বলেন, ‘‘সৌরভ নিজেই দর্শনার্থী (ভিজ়িটর) নিয়ন্ত্রণ করতে অনুরোধ করেছিলেন। উনিই ঠিক করে দিচ্ছেন, কাদের সঙ্গে দেখা করবেন।’’ অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়াই চলে আসা দর্শনার্থীদের জন্য হাসপাতালের একতলায় খোলা হয়েছে ‘সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় লাউঞ্জ’। সেখানে তাঁদের সৌরভের শারীরিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানাচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা সৌরভের পরিবারের লোকজন।