—ফাইল চিত্র
সকালে ট্রেডমিলে হাঁটার সময় আচমকাই বুকে-হাতে ব্যথা, সঙ্গে অস্বস্তি বোধ করায় আর সময় নষ্ট করেননি। দক্ষিণ কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে ও চিকিৎসকের সঙ্গে নিজেই যোগাযোগ করেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। এর পরেই সোজা চলে যান সেই হাসপাতালে। সেই সময় তাঁর নাড়ির গতি ৭০ এবং রক্তচাপ ১৩০/৮০ ছিল। এর পরেই সৌরভের ইসিজি ও ইকোকার্ডিয়োগ্রাফি করেন চিকিৎসকেরা। দেখা যায়, তিনি মৃদু হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।
সময় নষ্ট না করে ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়কের তড়িঘড়ি হাসপাতালে চলে আসা বুদ্ধিমানের কাজ হয়েছে বলেই জানাচ্ছেন হৃদ্রোগ চিকিৎসকেরা। কারণ, তাঁদের মতে, হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরের দুই থেকে তিন ঘণ্টা ‘গোল্ডেন আওয়ার’। আর সেই সময়ের মধ্যে প্রকৃত চিকিৎসা শুরু করলে বড়সড় বিপদ এড়ানো সম্ভব হয়। কার্ডিয়োথোরাসিক সার্জন কুণাল সরকারের কথায়, ‘‘সৌরভের ক্ষেত্রে যেটা শুনেছি, ওঁর ডান দিকের ধমনীতে রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ঠিক সময়ের মধ্যে সেই ধমনী খুলে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। বেশি সময় ধরে সেটি বন্ধ থাকলে বড় ঝুঁকির সম্ভাবনা ছিল।’’ চিকিৎসকেরা জানান, হাসপাতালে সৌরভের অ্যাঞ্জিয়োগ্রাফি করে দেখা যায়, তাঁর হৃদ্পিণ্ডে তিনটি ধমনীতে ‘ব্লক’ রয়েছে। তার মধ্যে ডান দিকের ধমনীতে প্রায় ৯০ শতাংশ ‘ব্লক’ রয়েছে। বাকি দু’টিতে প্রায় ৭০ শতাংশ ‘ব্লক’ রয়েছে। তখনই অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টি করে ডান দিকের ধমনীতে একটি স্টেন্ট বসানো হয়। সৌরভের চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্য আফতাব খান বলেন, ‘‘লোকাল অ্যানেস্থেশিয়া দিয়ে স্টেন্ট বসানো হয়েছে। উনি সচেতন রয়েছেন। কথাবার্তাও বলছেন।’’ মেডিক্যাল বোর্ডের আর এক সদস্য হৃদ্রোগ চিকিৎসক সরোজ মণ্ডল বলেন, ‘‘অন্য যে দু’টি ধমনীতে কম-বেশি সমস্যা রয়েছে, তা নিয়ে বোর্ড পরে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবে।’’ রাতে সৌরভকে হালকা খাবার দেওয়া হয়েছে।
চিকিৎসকদের মতে, ধূমপান, অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ, হাই কোলেস্টেরল, অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ ডায়াবিটিস, স্থূলতা, অত্যধিক জাঙ্ক ফুড, ঘুম কম হওয়া, অত্যধিক স্ট্রেসের কারণে সাধারণত হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু ধূমপান না করা, নিয়মিত শরীরচর্চা, নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করার পরেও সৌরভ কেন হৃদ্রোগে আক্রান্ত হলেন, তা ভাবার বিষয় বলেই মনে করছেন চিকিৎসকেরা। কুণালবাবুর মতে, ‘‘ওই সমস্ত কারণ নেই বলে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই, তা ভাবা ঠিক হবে না। কারণ, পারিবারিক হৃদ্রোগ সমস্যার ইতিহাস আর স্ট্রেসও কারণ হতে পারে।’’ জানা গিয়েছে, সৌরভের বাবা চণ্ডী গঙ্গোপাধ্যায়েরও হৃদ্যন্ত্রে বাইপাস সার্জারি করাতে হয়েছিল। ফলে এত শরীরচর্চা সত্ত্বেও জিনগত কারণে তিনিও হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন।
হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশিতে ডান দিকের ধমনী দিয়ে
২৫-৩০ শতাংশ এবং বাঁ দিকের ধমনী দিয়ে ৭০-৭৫ শতাংশ রক্ত সরবরাহ হয়।
আরও পড়ুন: সৌরভের করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ, ফের ‘স্টেন্ট’ বসানো নিয়ে সিদ্ধান্ত রবিবার
আরও পড়ুন: মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল আইএসএলের ফিরতি ডার্বি ম্যাচ ১৯ ফেব্রুয়ারি
হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ ধীমান কাহালির কথায়, ‘‘সৌরভের ক্ষেত্রে জিনগত কারণ এবং অত্যধিক মানসিক স্ট্রেস রয়েছে বলে বোঝা যাচ্ছে। এ-ও জানা যাচ্ছে, তিনি কখনও হৃদ্যন্ত্রের সুস্থতা পরীক্ষা করাননি।’’ তাঁর মতে, নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তত ট্রেডমিল পরীক্ষা করে আগাম সতর্কতা নেওয়া প্রয়োজন। ধীমানবাবু বলেন, ‘‘অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টি করে ধমনীতে স্টেন্ট বসিয়ে প্রায় ৯৮-৯৯ শতাংশ খোলা সম্ভব হয়। কিন্তু ধরা যাক, কেউ জেলা থেকে কলকাতায় আসছেন। সে জন্য অন্তত তিন ঘণ্টা সময় লাগবে। তখন ওষুধ দিয়ে বন্ধ ধমনী ৬২-৬৩ শতাংশ খোলা সম্ভব হয়। তার পরে ওই রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে অ্যাঞ্জিয়োগ্রাফি করতে হবে।’’