Sonu Sood

সেবক হনুমারও অনুপ্রেরণা সোনু 

এই উদ্যোগের নেপথ্যে হনুমার প্রেরণা দু’জন। অভিনেতা সোনু সুদ, যিনি করোনার সময়ে সব চেয়ে বড় মানবিক মুখ হয়ে উঠেছেন

Advertisement

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত 

শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০২১ ০৭:২২
Share:

উদ্যোগ: বন্ধুদের নিয়ে আক্রান্তদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন হনুমা। ফাইল চিত্র।

ইংল্যান্ডে কাউন্টি ক্রিকেট খেলার ফাঁকেই ভারতে করোনা আক্রান্তদের সেবার কাজ করে যাচ্ছেন হনুমা বিহারী। কী ভাবে তা সম্ভব হচ্ছে, ইংল্যান্ড থেকে ফোনে শুক্রবার বেশি রাতে সে কথা আনন্দবাজারকে জানালেন জাতীয় দলের ব্যাটসম্যান।

Advertisement

এই উদ্যোগের নেপথ্যে হনুমার প্রেরণা দু’জন। অভিনেতা সোনু সুদ, যিনি করোনার সময়ে সব চেয়ে বড় মানবিক মুখ হয়ে উঠেছেন। দ্বিতীয় জন তাঁর স্ত্রী প্রীতিরাজ ইয়েরুভা। কাউন্টি খেলতে এপ্রিল মাসে ইংল্যান্ডে আসেন হনুমা। গত মাস থেকেই করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করে ভারতে। দেশের বাইরে থেকে অসহায় হয়ে পড়তেন হনুমা। এক সন্ধেবেলায় অনুশীলন থেকে ফিরে স্ত্রীর সঙ্গে গল্প করছিলেন। হঠাৎই টুইটারে জনপ্রিয় হওয়া একটি ভিডিয়ো চালান হনুমা। দেখেন কী ভাবে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন মানবিক সোনু সুদ। তারকাদেরও এই উদ্যোগ নিতে আহ্বান জানাচ্ছেন বলিউড তারকা। সেই ভিডিয়ো দেখার পরে হনুমার স্ত্রী তাঁর স্বামীকে এই উদ্যোগ নেওয়ার প্রস্তাব দেন। হনুমা বলছিলেন, ‘‘সোনু সুদের ভিডিয়ো দেখার পর থেকেই মনে হচ্ছিল, মানুষের জন্য কিছু করি। প্রীতিও (স্ত্রী) বলছিল, এটাই সময় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। বর্তমানে কেউ আক্রান্ত হলে অন্তত ২০ হাজার টাকার উপরে খরচ হবেই। দরিদ্র পরিবার কী করে এই টাকা জোগাড় করবে?’’ যোগ করলেন, ‘‘তখনই রাজ্য ক্রিকেট দলের সতীর্থ, বন্ধু ও ভক্তদের জানাই, আমি এই উদ্যোগ নিতে চলেছি। কারা আমার পাশে থাকতে চাও?’’ মুহূর্তের মধ্যে পঞ্চাশ জনের দল গড়ে ফেলেন হনুমা। বর্তমানে তা একশো ছাড়িয়ে গিয়েছে। এঁরাই কার্যত স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করে যাচ্ছেন। নিজের রাজ্য অন্ধ্রপ্রদেশের ক্রিকেটারদের অনেকে আছেন এই দলে। ক্রিকেটারেরা নিজেদের এলাকার খবর এনে দিচ্ছেন হনুমাকে। কারও কারও থেকে আর্থিক সাহায্যও পেয়েছেন হনুমারা। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কোনও রকম সাহায্য আসেনি। ভারতীয় দলের ব্যাটসম্যানের কথায়, ‘‘বহু আর্থিক সাহায্য পেয়েছি। বন্ধুদের মধ্যে অনেকেই সাহায্য করেছে। সরকারের থেকে কিছু সাহায্য পেলে আমরা উপকৃত হব।’’

আক্রান্তদের পরিবারের অনেকের সঙ্গেই ভিডিয়ো-কলের মাধ্যমে কথা বলছেন হনুমা। সিডনিতে পায়ের মারাত্মক চোট নিয়েও হার-না-মনোভাব দেখিয়ে টেস্ট ড্র করেছিলেন। আবেগপ্রবণ হয়ে হনুমা যদিও বলছিলেন, ‘‘চোট সেরে যায়। কিন্তু আপন জনকে হারানোর যন্ত্রণা মেটে না। এক-এক সময় চোখে জল চলে আসে যখন ভাবি, শত চেষ্টার পরেও কত লোকের আপন জনের লড়াই থেমে যাচ্ছে। তখন খুবই ভেঙে পড়ি।’’ যোগ করেন, ‘‘অনেকের সঙ্গেই ভিডিয়ো কলের মাধ্যমে আমার কথা হয়। মনের জোর বাড়ানোর চেষ্টা করি। আক্রান্তদের অনেকের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। কোনও রকম প্রয়োজন হলে তাঁরা যেন আমাকে জানাতে পারেন। তাই সকালের দিকে আমাকে ফোনে পাচ্ছেন না অনেকে।’’

Advertisement

আর কয়েক দিনের মধ্যেই ভারতীয় দলের জৈব সুরক্ষিত বলয়ে প্রবেশ করতে হবে। তখন এই দায়িত্ব কে সামলাবে? একটুও না ভেবে হনুমার জবাব, ‘‘আমার স্ত্রী এই দায়িত্ব নিতে তৈরি। এখন থেকেই প্রচুর সাহায্য করছে। তখন বেশির ভাগ দায়িত্ব থাকবে ওর। খেলার সময়টা বাদ দিয়ে আমিও থাকব ওর পাশে।’’

টেস্টের বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালের দু’মাস আগে ইংল্যান্ডে পৌঁছে প্রস্তুতি নিতে পারছেন হনুমা। কাউন্টিতে সময় কাটানো সাহায্য করবে ট্রেন্ট বোল্টদের খেলার ব্যাপারে। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে নিউজ়িল্যান্ড যে কঠিন পরীক্ষার মধ্যে ফেলতে পারে, সে বিষয়ে ওয়াকিবহাল। কী ভাবে তৈরি হচ্ছেন? হনুমার জবাব, ‘‘সুইং সামলানোর সব রকমের অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছি। বোল্ট, সাউদিদের ভিডিয়ো দেখছি। ইংল্যান্ডে টেস্ট অভিষেকে ভাল করার পর থেকে সুইং খেলতে ভয় পাই না। ওয়ারউইকশায়ারের হয়ে তিন নম্বরে ব্যাট করছি। তাই নতুন বল সামলাতে হচ্ছে। আমি তৈরি পরীক্ষার জন্য!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement