২৯ অগস্ট কিংবদন্তি হকি খেলোয়াড় মেজর ধ্যানচাঁদের জন্মদিনে ভারতে পালন করা হয় ক্রীড়া দিবস। এই দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ফিট ইন্ডিয়া মুভমেন্ট শুরু করলেন। জেনে নেওয়া যাক ধ্যানচাঁদের সম্বন্ধে কিছু জানা-অজানা তথ্য।
মাত্র ১৬ বছর বয়সে ধ্যান সিংহ ভারতের সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। সেখানেই শুরু তাঁর হকি খেলা। সারা দিন কাজের শেষে রাতে প্র্যাকটিস করতেন তিনি। সেই জন্য তাঁর বন্ধুরা তাঁকে ‘চাঁদ’ বলে ডাকতে শুরু করেন। সেই থেকে তাঁর নাম হয়ে যায় ধ্যানচাঁদ।
১৯২২ থেকে ১৯২৬ অবধি সেনার হয়ে বিভিন্ন হকি টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত খেলতে থাকেন তিনি। ডাক আসে নিউজিল্যান্ড যাওয়া ভারতীয় সেনার হকি দলে। সেখানে ২১টি ম্যাচের মধ্যে ১৮টি জয় পায় ভারত, দু’টি ড্র হয়ে এবং একটিতে হেরে যায় তারা। ভারতে ফিরতেই তাঁকে ল্যান্স নায়েক পদে উন্নিত করা হয়।
১৯২৮ সালের আমস্টারডাম অলিম্পিক্সে ধ্যানচাঁদ ছিলেন দলের সেন্টার ফরওয়ার্ড। পাঁচ ম্যাচে ১৪টি গোল করে তিনি ছিলেন সে বারের অলিম্পিক্সের সর্বোচ্চ স্কোরার। ভারতের প্রথম অলিম্পিক্স সোনাও আসে তাঁর হাত ধরেই।
তারপরের অলিম্পিক্সে আবার সোনা জয় হকি দলের। ১৯৩২ সালে লস অ্যাঞ্জেলসের আমেরিকাকে ২৪-১ গোলে হারিয়ে রেকর্ড গড়ে ভারত। সে বার ভারতের মোট ৩৫টি গোলের মধ্যে ধ্যানচাঁদ ও তাঁর ভাই রূপ দু’জনে মিলে করেন ২৫টি গোল।
১৯৪৮ সালে ধ্যানচাঁদ ‘সিরিয়াস হকি’ থেকে সরে আসেন। তিনি শুধু মাত্র প্রদর্শনী ম্যাচে অংশগ্রহণ করতেন। শেষ ম্যাচ খেলেন রেস্ট অব ইন্ডিয়ার হয়ে বাংলার বিরুদ্ধে। ১৯৫৬ সালে ৫১ বছর বয়সে আর্মি থেকে যখন তিনি অবসর নেন তখন তিনি মেজর পদে সম্মানিত।
ধ্যানচাঁদকে পদ্মভূষণ দেওয়া হয় ১৯৫২ সালে। সেই বছর প্রকাশিত হয় তাঁর আত্মজীবনী ‘গোল’। অবসরের পর রাজস্থান হকি দলের কোচ হিসেবে দেখা যায় তাঁকে।
উত্তরপ্রদেশের ঝাঁসিতে নিজের বাড়িতে শেষ জীবন কাটে ভারতের এই কিংবদন্তি হকি প্লেয়ারের। সেই সময় অর্থকষ্ট গ্রাস করে তাঁকে। আমদাবাদে এক টুর্নামেন্টে তাঁকে না চিনতে পেরে ঢুকতে বাধা দেন কর্তৃপক্ষ।
লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। দিল্লির এইমসে ভর্তি ছিলেন। সেখানেই ১৯৭৯ সালের ৩ ডিসেম্বর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় ঝাঁসিতে। পঞ্জাব রেজিমেন্ট তাঁকে বিশেষ সেনা সম্মান দেয়।
দিল্লির জাতীয় স্টেডিয়ামটি ২০০২ সালে ধ্যানচাঁদের নামে নামাঙ্কিত করা হয়। আলিগরের মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় তাদের একটি হোস্টেলের নাম রাখে তাঁর নামে। লন্ডনের একটি আস্ট্রোটার্ফের নাম ব্রিটিশ সরকার ধ্যানচাঁদের নামে রাখে।
ক্রীড়া জগতে ভারতের সর্বোচ্চ পুরস্কার ধ্যানচাঁদ পুরস্কার। ২০০২ সাল থেকে এই পুরস্কার দেওয়া হয় সারা জীবনে ক্রীড়া জগতে অর্জিত সাফল্যের জন্য।