রমেশ তেন্ডুলকর নিজের ছেলের নাম রেখেছিলেন তাঁর প্রিয় মিউজিক ডিরেক্টর শচীন দেববর্মণের নামে। ছেলে সচিন রমেশ তেন্ডুলকর চেয়েছিলেন বল হাতে ব্যাটসম্যানদের চিন মিউজিক শোনাবেন। যদিও সেই ইচ্ছে বাস্তবায়িত হয়নি।
ব্যাট হাতে সচিন বহু রেকর্ড গড়েছেন, বহু রেকর্ড ভেঙেছেন। কিন্তু তাঁর স্বপ্ন ছিল ব্যাটসম্যান নয়, পেস বোলার হবেন। ১৯৮৭ সালে ডেনিস লিলি-র পেস ফাউন্ডেশন থেকে বাতিল হয়ে যান তিনি। ছোট চেহারার সচিনকে পেস বোলার নয়, ব্যাটসম্যান হওয়ার উপদেশ দেন তিনি।
পেস বোলার হতে না পারলেও তিনি হয়েছিলেন পার্ট-টাইম স্পিনার। দলের বোলাররা বিপদে পড়লে ডাক পড়ত তাঁর। পেস বোলার হয়ে ব্যাটসম্যানদের ভয় দেখাতে না পারলেও তাঁর অফব্রেকের মাঝে হঠাৎ আসা গুগলিগুলোর উত্তর ছিল না বহু ব্যাটসম্যানের কাছেই।
পার্টনারশিপ ভাঙার জন্য আজহার থেকে সৌরভ, এমনকি ধোনিও বিপদে পড়লে বল তুলে দিয়েছিলেন মাস্টার ব্লাস্টারের হাতে। সব ফরম্যাট মিলিয়ে ২০১টি আন্তর্জাতিক উইকেট আছে তাঁর ঝুলিতে। ২৪ বছরের আন্তর্জাতিক কেরিয়ারে বল হাতেও রয়েছে কিছু অনন্য কীর্তি।
মাত্র ১৬ বছর বয়সে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নামিয়ে দেওয়া ঝাঁকড়া চুলের সেই ছেলেটি, ব্যাট হাতে যে একদিন নাম করবে তা প্রথম সিরিজেই আন্দাজ পাওয়া গিয়েছিল। সেই সময়ের ভয়ঙ্কর পাকিস্তান বোলারদের বিরুদ্ধে প্রমাণ দিয়েছিলেন তাঁর কঠিন মানসিকতার। তবে বল হাতেও কিন্তু খুব বেশি দিন দমিয়ে রাখা যায়নি তাঁকে।
সচিন প্রথম উইকেট পান ১৭ বছর ২২৪ দিন বয়সে। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে তাঁর বলে খোঁচা লাগিয়ে কিরণ মোরের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান মহানামা। সঙ্গে সঙ্গে তিনি হয়ে যান কনিষ্ঠতম ভারতীয় উইকেট শিকারি। ভেঙে দেন মনিন্দর সিংহের রেকর্ড। সেই ম্যাচে ব্যাট হাতেও ৪১ বলে ৫৩ করেছিলেন মুম্বইকর।
পার্টনারশিপ ভাঙার ক্ষেত্রে তিনি যেমন দক্ষ ছিলেন, তেমনই ছিলেন শেষ ওভারে ভারতের ভরসাও। অনেক ম্যাচেই শেষ ওভারে অধিনায়করা বল তুলে দিয়েছেন সচিনের হাতে। এবং তিনিও নিরাশ করেননি। রেকর্ড গড়েছেন সেই ক্ষেত্রেও।
তিনিই একমাত্র আন্তর্জাতিক বোলার, যাঁর দখলে রয়েছে একাধিকবার শেষ ওভারে ছয় রান বা তার কম রান বাঁচিয়ে ম্যাচ জয়ের রেকর্ড। ১৯৯৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে এবং ১৯৯৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তিনি ম্যাচ জেতান বল হাতে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে শেষ ওভারে বাকি ছিল ছয় এবং সচিন দিয়েছিলেন মাত্র তিন রান। আর অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বাকি থাকা একটি উইকেট তিনি তুলে নিয়েছিলেন প্রথম বলেই।
এখনও অবধি ব্যাট হাতে তাঁর করা রানই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ। করেছেন সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি। সেই রেকর্ড ভাঙার জন্য বিপুল পরিশ্রম প্রয়োজন কোহালি, স্মিথ, রুটদের। কিন্তু বল হাতেও যে সর্বোচ্চ উইকেট নেওয়ার কীর্তি রয়েছে তাঁর।
২০০৪ সালের এশিয়া কাপ দেখল এক অন্য সচিনকে। ব্যাট হাতে ধারাবাহিক হলেও বল হাতে ছিল ধারাবাহিকতার অভাব। কিন্তু সে বারের এশিয়া কাপে ছয় ম্যাচে ১২ উইকেট নিয়ে মুছে দেন সেই অপবাদ। ১৪ উইকেট নিয়ে ইরফান পাঠানের পরেই ছিলেন সর্বাধিক উইকেট নেওয়ার তালিকায়। এবং ভারতীয় স্পিনার হিসেবে তিনি এখনও অবধি এশিয়া কাপে এক সিরিজে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি।
সচিন রমেশ তেন্ডুলকরই এক মাত্র আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেটার যাঁর ঝুলিতে রয়েছে একই সঙ্গে ১১ হাজার রান ও ৪০টি-র বেশি উইকেট। এই নজির আর কোনও অলরাউন্ডারের ঝুলিতে কিন্তু নেই।