পি ভি সিন্ধু।
হায়দরাবাদ সাইয়ে পুল্লেলা গোপীচন্দ অ্যাকাডেমিতে সব সময়ই তাঁর বিখ্যাত মেয়ে পি ভি সিন্ধুর অনুশীলন খুব কাছ থেকে দেখেন পি ভি রামান্না।
কখনও হাত ছুড়ে চিৎকার করেন। কখনও আবার মাথা নাড়েন মেয়ে কোনও ভুল করলে। ‘‘নিষ্ঠার সঙ্গে অনুশীলন করলেই লক্ষ্যে পৌঁছনো যায়। আমি চাই না ও অনুশীলনে একটা মুহূর্তও নষ্ট করুক,’’ বলেন রামান্না। স্ত্রী বিজয়া মেয়ের সঙ্গে গ্লাসগোয় ব্যাডমিন্টন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে গিয়েছেন। রামান্নাকে রবিবার হায়দরাবাদে বসেই দেখতে হল নজোমি ওকুহারা-র বিরুদ্ধে দুরন্ত লড়াই করে সিন্ধুর হার ।
ভলিবলে খেলতেন রামান্না। ১৯৮৬ সালে ব্রোঞ্জজয়ী ভারতীয় দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। সিন্ধুর মা বিজয়াও ভারতের হয়ে ভলিবল খেলেছেন। তবে সিন্ধুর আগ্রাসন বাবার মতোই। রামান্না বলেন, ‘‘কোর্টে আগ্রাসী হতেই হবে। নেটে আমার প্রচণ্ড দাপট ছিল। আমি চাই ব্যাডমিন্টনে সিন্ধুও একই রকম দাপট দেখাক। তাঁর মতে ব্যাটডিন্টন ও ভলিবলের মধ্যে প্রচুর মিল। রামান্না বলেন, ‘‘আমি বল মারতাম। আর সিন্ধু র্যাকেট দিয়ে আঘাত করে শাটলকে। কোর্টের মধ্যে ক্ষিপ্রতা ও আগ্রাসন দু’টো খেলাতেই একই রকম।’’ বাবার মতোই উচ্চতা সিন্ধুর। ‘‘লম্বা হওয়ার বাড়তি সুবিধে সিন্ধু পাচ্ছে। এর ফলে ও খুব সহজেই শাটলের কাছে পৌঁছে যেতে পারে,’’ হাসতে হাসতে বলছিলেন রামান্না।
বাবা-মা দু’জনে ভলিবল খেলোয়াড় হলেও সিন্ধুর কোনও আগ্রহ ছিল না তাতে। রামান্না বলছেন, ‘‘ব্যাডমিন্টনের প্রতি ওর দারুণ আগ্রহ ছিল ছোটবেলা থেকেই। আমাদের সৌভাগ্য যে প্রয়াত মেহবুব আলির মতো ব্যাডমিন্টন কোচ পেয়েছিলাম। একবার রেলওয়ে রিক্রিয়েশন ক্লাবের মাঠের কাছে উনি শিবির করেছিলেন। সিন্ধু ওখানে যেতে শুরু করার পরেই ব্যাডমিন্টনের প্রতি আগ্রহ বাড়ে। মন দিয়ে প্র্যাকটিস করতে শুরু করে।’’ এর পর সিন্ধুকে আমরা সৈয়দ মহম্মদ আরিফের কাছে ভর্তি করে দিই। রামান্না বললেন, ‘‘ব্যাডমিন্টনের প্রতি ওর আগ্রহ দেখেই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, লাল বাহাদুর শাস্ত্রী স্টেডিয়ামে সৈয়দ মহম্মদ আরিফের অ্যাকাডেমিতে ভর্তি করে দিয়েছিলাম। হায়দরাবাদকে ভারতীয় ব্যাডমিন্টনের আঁতুরঘর হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন এই আরিফ-ই। অনিরুদ্ধ, মনোজ কুমার, প্রবীণ কুমারের মতো খেলোয়াড় উনিই উপহার দেন।’’ রামান্না যোগ করলেন, ‘‘পুল্লেলা গোপীচন্দ ওঁর হাতে তৈরি। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম— ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য এটাই হচ্ছে সিন্ধুর সেরা জায়গা।’’
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্র ওপেনে কাদের দিকে থাকবে নজর
১৯৮০ সালে অল ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন প্রকাশ পাডুকোন। ২১ বছর পরে ২০০১ সালে অল ইংল্যান্ড জিতে ইতিহাস গড়েছিলেন গোপীচন্দ। সেই সময় কোনও আধুনিক পরিকাঠামোই ছিল না। গোপীচন্দের মতে, এখনকার অত্যাধুনিক পরিকাঠামো কাজে লাগিয়ে বিশ্ব ব্যাডমিন্টনে অন্যতম সেরা শক্তি হয়ে উঠতে পারে ভারত। অবসরের পর পুরোপুরি কোচিংয়ে মনোনিবেশ করেছেন গোপীচন্দ। আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত ভাবে কোচিং করিয়ে তিনি প্রথম নজর কাড়েন সাইনা নেহওয়ালের উত্থানে। আর সেখান থেকেই ভারতীয় ব্যাডমিন্টন পৌঁছে গিয়েছে অন্য উচ্চতায়।
সিন্ধুর বাবা রামান্না নিজে একজন ভলিবল খেলোয়াড় ছিলেন। তাই মেয়েকেও আধুনিক অনুশীলনের মাধ্যমেই গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। এই কারণেই সিন্ধুকে তিনি গোপীচন্দের কাছেই নিয়ে যান। সাইনার পরে গোপীচন্দ পেয়ে যান আর এক প্রতিভা সিন্ধুকে। এর পরেই দ্রুত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নজর কাড়তে শুরু করেন সিন্ধু। ২৫ কিলোমিটার দূর থেকে প্রত্যেক দিন মেয়েকে প্র্যাকটিস করাতে নিয়ে আসতেন রামান্না ও বিজয়া। গোপীচন্দের কাছে ভোর চারটের অনুশীলন শুরু হতো সিন্ধুর। শৃঙ্খলার ব্যাপারে প্রচণ্ড কড়া গোপীচন্দ।
কোর্টে সিন্ধুর যে কঠিন মানসিকতা দেখা যায়, তা গড়ে উঠেছে গোপীচন্দের জন্যই। যেমন, গত বছর রিও অলিম্পিক্সের ঠিক দু’মাস আগে কঠিন অনুশীলন পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে সিন্ধুকে চালনা করেছিলেন গোপীচন্দ। তার ফল রিও-তেই দেখা গিয়েছিল। এখানেই শেষ নয়। আগ্রাসনের মাধ্যমে বিপক্ষকে কাবু করার জন্যও সিন্ধুকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন গোপীচন্দ।