সতীর্থদের অভিনন্দনের মাঝে দিনের নায়ক শ্রীবৎস। বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লির পালম মাঠে। ছবি: রমাকান্ত কুশওয়া।
বঙ্গ ক্রিকেটমহলে তাঁকে নিয়ে একটা কথা খুব চলে। শ্রীবৎস গোস্বামী অসম্ভব প্রতিভাবান। কিন্তু নিজ-প্রতিভার যথেষ্ট মর্যাদা তিনি দিতে পারলেন না।
বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লি কাণ্ডের পর মনে হয় না, কথাটা আর কখনও উঠবে বলে। হাফসেঞ্চুরি নয়। সেঞ্চুরি নয়। একেবারে কি না ডাবল সেঞ্চুরি করে গেলেন শ্রীবৎস গোস্বামী!
মধ্যপ্রদেশের বিরুদ্ধে শ্রীবৎস গোস্বামী অপরাজিত থেকে গেলেন ২২৫ রানে!
বঙ্গ ক্রিকেট ইতিহাসে ডাবল সেঞ্চুরি আগেও হয়েছে, পরেও হবে। সাম্প্রতিক প্রজন্মে মনোজ তিওয়ারি, লক্ষ্মীরতন শুক্ল দু’জনেই করেছেন। এবং তাঁদের কীর্তি যেমন ইতিহাস, এ দিন শ্রীবৎসের কীর্তি সে সবের চেয়ে কিছু কম নয়। কারণ— পরিস্থিতি। কারণ— প্রেক্ষাপট। নক আউট পর্বে ওঠার সামান্যতম আশাও যদি বাঁচিয়ে রাখতে হয়, মধ্যপ্রদেশের বিরুদ্ধে চলতি রঞ্জিতে বাংলাকে জিততেই হবে। আর সেখানে যে ৪৭৫-৯ তুলে প্রথম ইনিংস ডিক্লেয়ার করল বাংলা, তার প্রধান রূপকার শ্রীবৎস গোটা ইনিংসে অভিমন্যু ঈশ্বরন ছাড়া কোনও ব্যাটসম্যানকে সঙ্গী হিসেবে পেলেন না। অধিকাংশ সময় খেলতে হল বোলারদের নিয়ে।
• জবাব-টবাব নিয়ে ভাবি না। ও সবে এনার্জি খরচ করি না। কে কী বলল, ভাবল, কিছু যায় আসে না আমার। কারণ জানি, আমি এখানে কাউকে উত্তর দিতে আসিনি। —শ্রীবৎস গোস্বামী
• নিঃসন্দেহে দুর্দান্ত ব্যাটসম্যান শ্রীবৎস। এ রকম ইনিংস ও আগেও খেলেছে। আজকের ডাবল সেঞ্চুরি টিমের খুব প্রয়োজন ছিল। এটা ওর আত্মবিশ্বাসও বাড়িয়ে দেবে। —ঋদ্ধিমান সাহা
• ভয় ছিল, ২৬০ অল আউট হয়ে যাবে বাংলা। দুর্দান্ত খেলল শ্রীবৎস। নির্বাচক থাকার সময় যখন এই শ্রীবৎসকে নিয়েছিলাম, অনেকে নাক কুঁচকেছিল। —সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়
‘‘টেলএন্ডারদের কথাটাও বলব। প্রচুর ওয়ার্কলোড নিয়েছে ওরা। চেষ্টা করছিলাম, ওভারের পঞ্চম বা শেষ বলে সিঙ্গলস নিয়ে পরের ওভার প্রথম থেকে খেলতে,’’ নয়াদিল্লি থেকে ফোনে বলছিলেন শ্রীবৎস। বীরপ্রতাপের সঙ্গে তিনি ৯২ রান যোগ করেছেন। সায়ন ঘোষের সঙ্গে দশম উইকেটে যে রানটা জুড়েছেন— এক কথায় অভাবনীয়। ১১৯! যার মধ্যে ৯৫ রানই শ্রীবৎসের! শ্রীবৎস-সায়ন মিলে ৭৭ বছরের রেকর্ড ভাঙলেন। এর আগে দশম উইকেটে বাংলার হয়ে সর্বোচ্চ জুটি ছিল বি ম্যালকম এবং টিএস ভট্টাচার্যর। ১৯৩৮-’৩৯ সালে, ১১৫ রানের।
জীবনের সেরা ইনিংস?
‘‘একদম। ইনিংসটা নিজের পরিবারকে উৎসর্গ করব। চ্যালেঞ্জটা উপভোগ করছিলাম। এর আগে সাত নম্বরে ব্যাট করছিলাম আমি। এই ম্যাচেই ছ’নম্বরে গেলাম,’’ বলছিলেন শ্রীবৎস। সঙ্গে যোগ করলেন, ‘‘বেশি কিছু করতে চাইনি। যে খেলাটা খেলি, সেটাই খেলছিলাম। ঠিক করেছিলাম, যা-ই করি, মধ্যপ্রদেশ বোলারদের লাইনের বারোটা বাজিয়ে দেব।’’
প্রমাণ? ৩২৮ বলের ইনিংসে ২৫টা বাউন্ডারি। তিনটে ছক্কা। ১৯৫-এ দাঁড়িয়ে বাউন্ডারিতে ১৯৯ রানে পৌঁছে যাওয়া। কখনও ভেবেছিলেন, ডাবল সেঞ্চুরি হতে পারে? বাংলা তো ২০৭-৭ হয়ে গিয়েছিল এক সময়। ‘‘ডাবল সেঞ্চুরি নিয়ে ভাবিইনি। ১৯৯ রানে থাকার সময় হঠাৎ দেখলাম, মধ্যপ্রদেশ ক্যাপ্টেন ফিল্ড তুলে আনল। তখনই খেয়াল হল,’’ বলে দেন বাঁ-হাতি উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান।
শ্রীবৎস গোস্বামী এর পরেও নিশ্চিত নন, বৃহস্পতিবারের অপরাজিত ২২৫ তাঁর ক্রিকেট কেরিয়ারকে ঘুরিয়ে দেবে কি না। ‘‘কী জানি, বলতে পারব না। শুধু এটুকু বলব যে, আমার কাছে নিজের ২২৫ চেয়ে ৪৭৫ সংখ্যাটা অনেক দামী।’’ কিন্তু সমালোচককুল? তাঁদের তো একটা জবাব দেওয়া হল। যাঁরা বলতেন, শ্রীবৎস নিজের প্রতিভার সুবিচার করেননি। ‘‘না। জবাব-টবাব নিয়ে ভাবি না। ও সবে এনার্জি খরচ করি না। কে কী বলল, ভাবল কিছু যায় আসে না আমার। কারণ জানি, আমি এখানে কাউকে উত্তর দিতে আসিনি।’’
আপাতত একটা জিনিস চান। শুক্রবার সকালটা বাংলার পক্ষে যাক। তার পর এগনো যাবে। মধ্যপ্রদেশের প্রথম ইনিংসের একটা চলে গিয়েছে এখনই। পড়ে এখনও দু’দিন।
বাংলা এই ম্যাচ কিন্তু জিততেও পারে!
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলা ৪৭৫-৯ (শ্রীবৎস ২২৫ ন:আ:, ঈশ্বরন ৮০)
মধ্যপ্রদেশ ১৯-১ (দিন্দা ১-৪)।