সোনার মেয়ে অপূর্বির সঙ্গে রুপোজয়ী বাঙালি অয়নিকা (বাঁ দিকে)।
গত বছর জুলাইয়ে স্পেনের গ্রেনাডায় বিশ্বকাপ শুটিংয়ের আসরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মুখের ডানদিক অবশ হয়ে গিয়েছিল তাঁর। সেই প্রকাশ নাঞ্জাপ্পার রূপো জয় যেন অপূর্বি চান্ডেলার সোনা পাওয়াকেও ছাপিয়ে গেল শনিবার। কমনওয়েলথ গেমসে আর এক ভারতীয় শুটার মুম্বইবাসী বাঙালি অয়নিকা পালের রূপোও এ দিন ভারতকে পদক তালিকায় পাঁচ নম্বরে আসতে সাহায্য করল। রাতে মেয়েদের ২৫ মিটার এয়ার পিস্তল থেকে ভারতকে সোনা দিলেন রাহি সরনোবত। হাতের হাড়ে চিড় ধরার তিন মাস পর শুটিংয়ে ফিরে দেশকে সোনা এনে দিলেন যিনি।
দশ মিটার এয়ার পিস্তলে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বী ড্যানিয়েল রেপাচোলির সঙ্গে সোনার লড়াইয়ে অল্পের জন্য ছিটকে যান প্রকাশ। শনিবার ব্যারি বাডন শুটিং রেঞ্জে এলিমিনেশন স্টেজের চতুর্থ রাউন্ডেও এই ভারতীয় ছিলেন এক নম্বরে। পরের রাউন্ডে সম্ভবত মনঃসংযোগ নষ্ট হয়ে যায় তাঁর। এই রাউন্ডে প্রকাশ ১৭.৭-এর বেশি স্কোর করতে না পারায় এগিয়ে যান রেপাচোলি। তার পর আর এগোতে পারেননি তিনি। রেপাচোলি ১৯৯.৫ স্কোর নিয়ে সোনা জিতে নেন। প্রকাশকে ১৯৮.২-র স্কোর ও রূপো নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। ইংল্যান্ডের ৬০ বছর বয়সি শুটার মাইকেল গল্ট ব্রোঞ্জ জেতেন।
গত বছর জুলাইয়ে স্পেনের গ্রেনাডায় শুটিং বিশ্বকাপের আসরে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন প্রকাশ। সতীর্থরা অনেকেই লক্ষ্য করেন, ডান চোখের পাতা ফেলতে পারছেন না তিনি। সেখানকার হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হলে ডাক্তাররা জানান, ‘বেলস পালসি’-তে আক্রান্ত তিনি। মুখের ডানদিকটা অবশ হয়ে গিয়েছিল তাঁর। সুস্থ হয়ে না ওঠা পর্যন্ত শুটিং রেঞ্জেই যাওয়া বারণ ছিল প্রকাশের।
তার তিন মাস আগেই কোরিয়ার চাংওয়ানে ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন প্রকাশ। প্রতিশ্রুতিমান পুত্রের এই দুর্ঘটনায় তাঁর বাবা ও কোচ পি এন পাপ্পান ভেঙে পড়লেও প্রকাশ কিন্তু মনের জোরে ফের পিস্তল তোলেন হাতে। মাত্র দেশ মাসের মধ্যে সুস্থ হয়ে প্র্যাক্টিসে নেমে পড়েন। এবং তার পর থেকে শুধুই পরিশ্রম আর অধ্যবসায়। গত অক্টোবরে তেহরানে এশিয়ান এয়ার গান চ্যাম্পিয়নশিপে রূপোও জেতেন তিনি। এখনও তাঁকে নিয়মিত চোখে ওষুধ দিয়ে রেঞ্জে নামতে হয় বলে জানিয়েছেন তাঁর বাবা।
প্রকাশের কীর্তি থেকেই প্রেরণা নিয়ে মেয়েদের দশ মিটার এয়ার রাইফেলের লড়াইয়ে নেমেছিলেন দুই ভারতীয় অপূর্বি ও অয়নিকা। শেষ পর্যন্ত অন্য প্রতিযোগীরা পদকের দৌড় থেকে ছিটকে গিয়ে দুই বন্ধুর মধ্যেই সোনার লড়াই শুরু হয়। যাতে শেষ পর্যন্ত জয় হয় জয়পুরের মেয়ে অপূর্বির। এই ইভেন্টের বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে অয়নিকার (৮) চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও, দিনটা ছিল বিশ্বের ১৭ নম্বর অপূর্বিরই। বাছাই পর্বে তিনি শীর্ষে থাকার পর মূলপর্বে ২০৬.৭ পয়েন্ট পেয়ে সোনা জিতে নেন। অন্য দিকে বাছাই পর্বে চার নম্বরে থাকার পর অয়নিকা মূলপর্বে ২০৪.৯-এ শেষ করে রূপো জেতেন। শেষ রাউন্ড পর্যন্ত বোঝা যাচ্ছিল না কে কোন পদক পেতে পারেন।
সরনোবত (৮ পয়েন্ট) অবশ্য অনায়াসে আনিসাকে (২) হারিয়ে সোনা জেতেন।
শনিবারে ভারত
সোনা
অপূর্বি চান্ডেলা: ১০ মিটার এয়ার রাইফেল
রাহি সরনোবত: ২৫ মিটার এয়ার পিস্তল
রূপো অয়নিকা পাল: ১০ মিটার এয়ার রাইফেল
প্রকাশ নাঞ্জাপ্পা: ১০ মিটার এয়ার পিস্তল
অনিসা সইদ: ২৫ মিটার এয়ার পিস্তল
ব্রোঞ্জ
রাজবিন্দর কউর: মেয়েদের জুডো, ৭৮ কেজি
মোট পদক ১৬
(সোনা ৫, রূপো ৭, ব্রোঞ্জ ৪)