কৃতী: মুসকান্নেসা। নিজস্ব চিত্র
রাইফেল শুটিংয়ে জেলা, রাজ্য এবং জাতীয় পর্যায়ে সাফল্য পেয়ে এখন আরও একটি জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছে মুসকান্নেসা। এটা জিতলেই কেল্লা ফতে। এশিয়াডে যাওয়ার ছাড়পত্র পাবে সে।
পাঁচলার গঙ্গাধরপুর বিদ্যামন্দিরের ছাত্রী মুসকান এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে। তার বাড়ি জগৎবল্লভপুরের পাতিহালে। স্কুলের এনসিসি-র সদস্য হিসাবেই সে একের পর এক প্রতিযোগিতায় সাফল্য পেয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতির সঙ্গে সঙ্গে পরবর্তী জাতীয় প্রতিযোগিতার জন্য রাইফেল শুটিংয়ের প্রশিক্ষণও নিচ্ছে।
গঙ্গাধরপুর বিদ্যামন্দির, এনসিসি-র ৪১ নম্বর ব্যাটালিয়নের অধীন। এই ব্যাটালিয়নের অধীনে আছে শুধুমাত্র হাওড়ার জেলার স্কুলগুলি। ৪১ নম্বর ব্যাটালিয়ন আবার এনসিসি-র কলকাতা গ্রুপ হেড কোয়ার্টার (সি)-এর অধীন। কলকাতা গ্রুপ হেড কোয়ার্টার এনসিসি-র পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিম ডাইরেক্টরেটের অধীন। মুসকান, ৪১ নম্বর ব্যাটালিয়ন, কলকাতা গ্রুপ হেড কোয়ার্টার (সি) এবং ডাইরেক্টরেট ভিত্তিক প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়ে সাফল্য পায়। তারপরে গত সেপ্টেম্বর মাসে সে দিল্লিতে এনসিসি-র জাতীয় প্রতিযোগিতায় যোগ দেয় ডাইরেক্টরেট-এর প্রতিনিধি হিসাবে। সেখানেও মেলে সাফল্য। এরপরই তার যোগ দেওয়ার কথা বেঙ্গালুরুর জাতীয় প্রতিযোগিতায়।
এ পর্যন্ত মুসকান যে সাফল্য পেয়েছে তা সীমাবদ্ধ ছিল শুধুমাত্র এনসিসি-র মধ্যে। কিন্তু বেঙ্গালুরুতে যে জাতীয় প্রতিযোগিতা হবে তাতে যোগ দেবেন এনসিসি-সহ দেশের অন্যান্য সংস্থার হয়ে প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিযোগিরা। তাতে সাফল্য পেলেই মুসকান এশিয়াডে এনসিসি-র হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার ছাড়পত্র পাবে।
মুসকানের প্রশিক্ষক তথা এনসিসির ৪১ নম্বর ব্যাটালিয়নের অফিসার অম্লান পাত্র বলেন, ‘‘বেঙ্গালুরুতে যদি মুসকান জেতে তা হলে এশিয়াডে তার যোগ দেওয়া এবং তার জন্য প্রশিক্ষণের জন্য সব খরচ দেবে এনসিসি। ওর প্রতিভা আছে। সেই কারণে আমরা ওকে বিশেষ ভাবে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি।’’
পড়াশোনার ফাঁকে মুসকান সপ্তাহে দু’দিন করে চলে আসে গঙ্গাধরপুর বিদ্যামন্দিরের মাঠে। সেখানে চলে তার প্রশিক্ষণ। একেবারে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে মুসকানের বাবা খোন্দকার মহম্মদ মুস্তাক পেশায় রাজমিস্ত্রি। মুসকান পঞ্চম শ্রেণি থেকেই গঙ্গাধরপুর বিদ্যামন্দিরের ছাত্রী। এনসিসি-তে যোগ দিয়েছে অষ্টম শ্রেণি থেকে। প্রথম থেকেই তার মধ্যে রাইফেল শুটিংয়ের দক্ষতা ছিল নজরকাড়া। ফলে তাকে সে বিষয়েই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় বলে জানান অম্লানবাবু।
রাইফেল শুটিংয়ের দু’টি বিভাগ আছে। একটি হল— নির্দিষ্ট বৃত্তের মধ্যে একাধিক বস্তুতে লক্ষ্যভেদ করা। দ্বিতীয়টি হল নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মানব শরীরের একাধিক নির্দিষ্ট অংশে লক্ষ্যভেদ করা। মুসকান দু’টি বিভাগেই সফল হয়েছে। তার বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার। সব সময় ট্রেকার বা বাস পাওয়া যায় না বলে মুসকান সাইকেলে চড়েই প্রশিক্ষণে আসে। তার কথায়, ‘‘এশিয়াডে যাওয়ার আগে আমার শেষ পর্যায়ের প্রতিযোগিতা হবে বেঙ্গালুরুতে। সেখানে আমাকে সফল হতেই হবে। না হলে এশিয়াডে যেতে পারব না।’’
মুসকানের বাবা বলেন, ‘‘মেয়ের জন্য গর্ব হয়। ওকে আমি সব সময় উৎসাহ দিই।’’ তাকে আরও যারা উৎসাহ দেন তাঁরা হলেন গঙ্গাধরপুর বিদ্যামন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষানুরাগী সন্তোষ দাস এবং ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক শঙ্কর খাঁড়া। সন্তোষবাবু বলেন, ‘‘ওর যে কোনও প্রয়োজনেই আমরা পাশে থাকার চেষ্টা করি। ও আমাদের গর্ব।’’
তবে পড়াশোনাকেও গুরুত্ব দেয় মুসকান। তার কথায়, ‘‘৫০ শতাংশ নম্বর পেয়ে স্নাতক হলে আমি সরাসরি ভারতীয় সেনাবাহিনীতে ঢুকতে পারব। আমার লক্ষ্য সেনা অফিসার হওয়া।’’