শোয়েবকে আপারকাটে গ্যালারিতে ফেলছেন সচিন। ২০০৩ বিশ্বকাপের স্মরণীয় মুহূর্ত। — ফাইল চিত্র।
১৬ বছর আগের বিশ্বকাপে ভারতের কাছে হারের ক্ষত এখনও শুকোয়নি পাকিস্তানের প্রাক্তন পেসার শোয়েব আখতারের। তৎকালীন পাক অধিনায়ক ওয়াকার ইউনিসের দুর্বল নেতৃত্বের জন্য সে বার হার মানতে হয়েছিল বলে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে জানান ‘রাওয়ালপিণ্ডি এক্সপ্রেস’। ম্যাচের আগের দিন বাঁ পায়ের হাঁটুতে চার-পাঁচটা ইঞ্জেকশন নিয়ে খেলতে নেমেছিলেন তিনি। খবরের ভিতরের এই খবরও ফাঁস করেছেন শোয়েব।
সেঞ্চুরিয়নে অনুষ্ঠিত ভারত-পাক ম্যাচে ২৭৩ রান করেও ‘টিম ইন্ডিয়া’কে হারাতে পারেনি পাকিস্তান। অথচ পাকিস্তানের বোলিং আক্রমণ সে বার দুরন্ত ছিল। ইউটিউব চ্যানেলে শোয়েব বলেন, ‘‘২০০৩ বিশ্বকাপের ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ ছিল আমার ক্রিকেট কেরিয়ারের সব চেয়ে হতাশাজনক ম্যাচ। আমরা ২৭৩ রান করেও ওইদিন ভারতকে থামাতে পারিনি।’’
ম্যাচের আগেরদিন রাতে ‘রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেস’ ব্যাথা কমার চার-পাঁচটি ইঞ্জেকশন নিয়ে ছিলেন বাঁ হাঁটুতে। শোয়েব বলেন, ‘‘ইঞ্জেকশনের জন্য বাঁ পায়ের হাঁটুতে জল জমে গিয়েছিল। আমার হাঁটুতে কোনও অনুভূতিই ছিল না।’’
আরও পড়ুন: ৩৭০ বিলোপকে কটাক্ষ করে আফ্রিদির টুইট, পাল্টা তোপ গম্ভীরের
আরও পড়ুন: আজ দলে এতগুলি পরিবর্তন? দেখে নিন সিরিজের শেষ ম্যাচে ভারতের সম্ভাব্য একাদশ
পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ের শেষে ড্রেসিং রুমের কথাও জানিয়েছেন শোয়েব। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের ইনিংসের শেষে দলের সতীর্থদের বলেছিলাম, আমরা ৩০-৪০ রান কম করেছি। আমার কথা শুনে দলের বাকিরা চেঁচিয়ে উঠেছিল। সবাই বলেছিল, ২৭৩ রানও যদি জেতার জন্য যথেষ্ট না হয়, তা হলে কত রান দরকার। অনেকেই বলেছিল, আমরা ভারতকে আউট করে দিতে পারব। আমি জানতাম পিচ ব্যাটিং সহায়ক। দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যাটসম্যানরা সুবিধা পাবে।’’
ব্যাট করতে নেমে ভারতের দুই ওপেনার সচিন তেন্ডুলকর ও বীরেন্দ্র সহবাগ ঝড় তোলেন। শোয়েবকে আপারকাটে ‘মাস্টার ব্লাস্টার’-এর হাঁকানো ছক্কা স্মরণীয় হয়ে আছে ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের স্মৃতিতে। শোয়েব বলছেন, ‘‘আমরা যখন বল করতে নেমেছিলাম, তখন আমার বাঁ পায়ে কোনও অনুভূতিই ছিল না। ঠিকমতো দৌড়তে পারছিলাম না। সচিন আর সহবাগ শুরু থেকেই মারছিল। সচিন আমাকে খুব সহজেই খেলে দিচ্ছিল। এমনকি পয়েন্টের উপর দিয়ে আমাকে ছক্কাও মারে।’’
শোয়েব মার খাচ্ছেন দেখে অধিনায়ক ওয়াকার ইউনিস তাঁকে আক্রমণ থেকে সরিয়ে নেন। পরে আবার শোয়েবকে আক্রমণে আনেন ওয়াকার। তখন অবশ্য অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। ওয়াকার যখন পরে আক্রমণে আনেন শোয়েবকে, তখন শর্ট বল করছিলেন তিনি। ওরকমই একটা দুরন্ত গতির শর্ট বল থেকে সচিন ব্যাট সরাতে না পেরে আউট হন। সেই ম্যাচের প্রসঙ্গ টেনে শোয়েব বলেন, ‘‘আমি ক্যাপ্টেনকে বলেছিলাম শুরু থেকেই এভাবে আমি বল করতে পারতাম। আমার ফিটনেস ঠিক ছিল না। তা ছাড়া অত্যন্ত দুর্বল নেতৃত্বের জন্য ম্যাচটা হারতে হয়েছিল।’’
শোয়েবকে আক্রমণ থেকে সরিয়ে নেওয়ায় ওরকম দুরন্ত গতিতে ধেয়ে আসা শর্ট বল আর কেউ করতে পারেননি। ফলে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা খুব সহজেই রান তোলেন। সেই হার এখনও শোয়েব মেনে নিতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘‘এটা আমার কাছে তিক্ত অভিজ্ঞতা। ১৯৯৯ ও ২০০৩ সালে আমরা ভারতকে হারিয়ে দিতে পারতাম। কিন্তু, তা আর হয়নি।’’ সেই হার এখনও কষ্ট দেয় শোয়েবকে।