ম্যাকোর অবসর, শুভেচ্ছা সচিনের

পাড়ার মাঠ থেকে ইন্ডিয়া ক্যাপ। স্বপ্নের উড়ানে সম্বল ছিল নিজের ইচ্ছেশক্তি আর কঠোর পরিশ্রম। ভারতীয় ক্রিকেট দলে সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি।

Advertisement

অরিন্দম সাহা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৬ ০৬:৫৫
Share:

পাড়ার মাঠ থেকে ইন্ডিয়া ক্যাপ। স্বপ্নের উড়ানে সম্বল ছিল নিজের ইচ্ছেশক্তি আর কঠোর পরিশ্রম। ভারতীয় ক্রিকেট দলে সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি।

Advertisement

শিবশঙ্কর পাল। নিজের জেলা কোচবিহারে অবশ্য তাঁকে সবাই ‘ম্যাকো’ বলেই চেনে। ভারতীয় ক্রিকেট দলের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ সফরেও গিয়েছিলেন ম্যাকো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অবশ্য প্রথম একাদশে জায়গা পাননি। তবে দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে চুটিয়ে বাংলা দলের হয়ে রঞ্জি ট্রফি খেলেছেন। খেলেছেন ক্লাব ক্রিকেটও।

আজ সোমবার কলকাতার ইডেনে পি সেন ট্রফির ফাইনালে শেষবারের মত খেলতে নামবেন বাংলার অন্যতম পেসার শিবশঙ্কর পাল। অবসরের মুখে ম্যাকোকে নিয়ে গর্বের সঙ্গেই জাতীয় দলের প্রথম একাদশে তাকে দেখতে না পারার আক্ষেপের কথাও বলছেন জেলার ক্রীড়াপ্রেমীদের অনেকেই।

Advertisement

শিবশঙ্কর বলছেন, ‘‘অবসরের পর জেলা তথা উত্তরবঙ্গের ক্রিকেট প্রতিভা বিকাশের জন্য কাজ করতে চাইছি। স্ত্রী দেবিশ্রী ও মেয়ে সাধ্বী-সহ পরিবারের সবাইকে বাড়তি সময় দিতে পারব।” সেই সঙ্গে ম্যাকোর সংযোজন, ‘‘অবসরের সিদ্ধান্তের কথা জেনে ইতিমধ্যে সচিন তেন্ডুলকর, অনিল কুম্বলে, রাহুল দ্রাবিড়, ভিভিএস লক্ষণ, মনোজ তিওয়ারি-সহ দেশের একঝাঁক তারকা প্রাক্তন ও বর্তমান ক্রিকেটার হোয়্যাটসঅ্যাপে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।’’ একসময়ের টিমমেটকে ক্রিকেটের মাস্টারব্লাস্টার লিখেছেন, ‘কনগ্রাটস অন আ ওয়ান্ডারফুল কেরিয়ার। এনজয় ইওর রিটায়ার্ডমেন্ট।’ ম্যাকো বলেন, ‘‘সচিন-সহ সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’’

তুফানগঞ্জ শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে শিবশঙ্করের বাড়ি। বাবা শান্তিরঞ্জন পাল ও মা গীতা পালের উৎসাহে বাড়ির উঠোনে ছোটবেলায় ক্রিকেট প্র্যাকটিস শুরু। তিন ভাইয়ের মধ্যে ছোট শিবশঙ্করকে পরিজনেরা বুড়ো নামেই ডাকেন। তুফানগঞ্জ শহরের এনএনএম হাইস্কুলে পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় ক্রিকেটে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার কঠোর লড়াই শুরু হয়। কোচবিহারের ক্লাব ক্রিকেট খেলার সুবাদে জেলার নজরে আসেন। তারপর শিলিগুড়ির বাসিন্দা ক্রীড়াবিদ চন্দন ঘোষের নজরে পড়ে মেয়র একাদশের হয়ে খেলার সুযোগ।

ব্যস! আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০০০ সালে ত্রিপুরার বিরুদ্ধে রঞ্জি অভিষেক থেকে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন টিম ইন্ডিয়ার সদস্য হিসাবে ঘরের মাঠে ও বিদেশ সফরে সুযোগপ্রাপ্তি। সেটা ২০০৭-০৮ সাল। প্রথম একাদশে সুযোগ না পেলেও মাটি কামড়ে বরাবর লড়ে গিয়েছিলেন ম্যাকো।

জেলার ‘লড়াকু’ ছেলেকে নিয়ে ‘গর্ব’-এর কথা বলছেন খোদ উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। ক্রিকেট ভক্ত রবিবাবু বলেন, “ম্যাকো আমাদের গর্ব। অহঙ্কার। ক্রিকেটের উন্নয়নে জেলায় অ্যাকাডেমি তৈরি বা অন্য পরিকল্পনা নিলে সমস্ত সহযোগিতা করব।” তুফানগঞ্জ মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার সচিব চাঁদমোহন সাহা বলেন, “শিবশঙ্করের জন্য তুফানগঞ্জের মানুষ হিসাবে আমরা গর্বিত। জাতীয়স্তরের ক্রিকেট জগতের অনেকে ওঁর জন্য তুফানগঞ্জকে জেনেছেন।”

‘গর্বের’ পাশাপাশি আক্ষেপও অবশ্য স্পষ্ট অনেকের কথাতেই। কোচবিহার থেকে কলকাতার কালীঘাট ক্লাবে ম্যাকোর সতীর্থ শান্তা ভট্টাচার্য বলেন, “উত্তরবঙ্গ থেকে ওঁর মত জোরে বোলার কাউকে দেখিনি। ভারতীয় দলের হয়ে অন্তত একটা ম্যাচ খেলার সুযোগ ওর প্রাপ্য ছিল।” কোচবিহার জেলা ক্রীড়া সংস্থার সচিব বিষ্ণুব্রত বর্মন বলেন, “একটা ম্যাচে প্রথম একাদশে সুযোগ পেলে হয়তো বা আমাদের জেলার ছেলেকে টিম ইন্ডিয়ার নিয়মিত সদস্য হিসাবে পেতে পারতাম। ভবিষ্যতে জেলার ক্রিকেট ও অন্য খেলার উন্নয়নে ম্যাকো কোনও পরামর্শ দিলে তা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।”

ম্যাকো অবশ্য এ সব বিন্দুমাত্র ভাবতেই চান না। এ দিন তিনি বলেন, “তুফানগঞ্জের মত প্রত্যন্ত এলাকা থেকে জাতীয় দলের সদস্য হিসেবে ইন্ডিয়া ক্যাপ পরার সুযোগ পেয়েছি এটাই আমার বড় প্রাপ্তি। কোনও আক্ষেপের জায়গাই নেই।’’ তাতে অবশ্য আক্ষেপ কাটছে না বন্ধুদের। ম্যাকোর বন্ধু তুফানগঞ্জের বাসিন্দা রাকেশ সাজের বলেন, “বুড়োর জন্য আমরা গর্বিত। আক্ষেপ বলতে একটাই ওই প্রথম একাদশে সুযোগ না পাওয়াটা।” শিলিগুড়ির বাসিন্দা প্রবীণ ক্রীড়াবিদ চন্দন ঘোষ অবশ্য বলেন, “সবকিছু কারও নিজের হাতে থাকেনা। অনেক সময় ভাগ্যও ফ্যাক্টর হয়ে যায়!”

ভাইয়ের ক্রিকেট কেরিয়ারের অবসরকালীন ম্যাচ দেখতে রবিবার কলকাতা রওনা হন তাঁর দাদা মিন্টু পাল। তিনি বলেন, “ভাই যা করেছে তাতেই আমরা আনন্দিত।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement