Cricket

২ রান না করার সেই তীব্র যন্ত্রণাটাই এ বার মরুশহরে শার্দুলের চ্যালেঞ্জ

শার্দুল হ্যারিস শিল্ডের ম্যাচে এক ওভারে ছ’টি ছক্কা হাঁকিয়ে রেকর্ড বইয়ের পাতায় নাম তুলে ফেলেছিলেন আগেই। কিন্তু গত বারের আইপিএল ফাইনালে মোক্ষম সময়ে তাঁর ব্যাট কথা বলেনি।

Advertisement

কৃশানু মজুমদার

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০২০ ১৫:১৭
Share:

গুরুমন্ত্র সঙ্গী করে মরুশহরে যাচ্ছেন শার্দুল। —ফাইল চিত্র।

গত বারের আইপিএল ফাইনালে তাঁর জন্যই মহেন্দ্র সিংহ ধোনির স্বপ্ন চুরমার হয়ে গিয়েছিল। শ্বাসরুদ্ধ ফাইনালে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে জেতার জন্য শেষ বলে চেন্নাই সুপার কিংসের দরকার ছিল মাত্র দু’রান।
সেই রান তিনি করতে না পারায় ধোনির দলকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে যায় রোহিত শর্মার মুম্বই। দলের প্রয়োজনে মাত্র দু’রান করতে না পারার হতাশায় ভেঙে পড়েছিলেন শার্দুল ঠাকুর।

Advertisement

অথচ এই শার্দুল হ্যারিস শিল্ডের ম্যাচে এক ওভারে ছ’টি ছক্কা হাঁকিয়ে রেকর্ড বইয়ের পাতায় নাম তুলে ফেলেছিলেন আগেই। কিন্তু গত বারের আইপিএল ফাইনালে মোক্ষম সময়ে তাঁর ব্যাট কথা বলেনি। ব্যর্থতার আরও আখ্যান রয়েছে। খেলার মাঠে একাধিক বার বিপর্যয় সঙ্গী হয়েছে শার্দুলের। ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে জীবনের প্রথম টেস্ট খেলতে নেমে মাত্র ১০ বল করার পরেই কুঁচকির চোটে মাঠ ছাড়তে হয় তাঁকে। তারও বছর খানেক আগে সচিন তেন্ডুলকরের ১০ নম্বর জার্সি পরে খেলতে নেমে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল।

কঠিনতম সময়ে শিষ্যের মাথায় স্নেহের হাত রেখে ছেলেবেলার কোচ দীনেশ লাড বলেছিলেন, “ক্রিকেট মাঠ হল লড়াইয়ের ময়দান। যত বিপর্যয়ই নেমে আসুক না কেন, হাল ছাড়লে চলবে না।’’ সেই গুরুমন্ত্রেই দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করে শার্দুল ঠাকুর আজ জায়গা করে নিয়েছেন জাতীয় দলে।
দেওয়াললিখন এখন স্পষ্ট। মরুশহরেই হচ্ছে এ বারের আইপিএল। শার্দুল রয়েছেন চেন্নাইতেই। টুর্নামেন্টের বল গড়ানোর আগে দীনেশ তাঁর শিষ্যকে পরামর্শ দিয়ে বলছেন, “মনের জোর কখনও হারাবে না। দলকে জেতানোর মতো পারফরম্যান্স তুলে ধর।” গুরুর কথায় মেগা টুর্নামেন্টের জন্য নিজেকে তৈরি করছেন ভারতীয় দলের এই বোলিং অলরাউন্ডার।

Advertisement

আরও পড়ুন: ‘৫৯ বছরে ফিট আর ৬০ পেরোলেই আনফিট!’ বোর্ডের নয়া নির্দেশে প্রশ্ন অরুণ লালের

মারাত্মক জোরে বল করার জন্য ছোট বয়সেই দীনেশ লাডের নজরে পড়েন শার্দুল। শার্দুল-আবিষ্কারের পিছনের কাহিনি বলে চলেন কোচ, “স্কুলের একটা ম্যাচ চলছিল। আমাদের স্বামী বিবেকানন্দ স্কুলের বিরুদ্ধে খেলা ছিল তারাপুর বিদ্যামন্দিরের। শার্দুল ছিল তারাপুর বিদ্যামন্দিরের ক্লাস নাইনের ছাত্র। আমাদের বিরুদ্ধে শার্দুল ৭০ রান করেছিল। আর বল হাতে পাঁচটা উইকেট নিয়েছিল। কিন্তু ম্যাচটা ওরা হেরে যায়। ওর মারাত্মক জোরে বোলিং আমার নজর কেড়ে নিয়েছিল। আমার মনে হয়েছিল, ওই অল্প বয়সে মুম্বইয়ের সব চেয়ে গতিশীল বোলার ছিল শার্দুল।’’

দুই শিষ্যের সঙ্গে দীনেশ লাড। বাঁ দিকে আতিফ। ডানে শার্দুল।

ম্যাচের শেষে শার্দুলের বাবার সঙ্গে কথা বলেন দীনেশ। মুম্বইয়ের স্বামী বিবেকানন্দ স্কুলে ভর্তি করতে বলেন শার্দুলকে। পুরনো স্মৃতি হাতড়ে দীনেশ বলেন, ‘‘পালঘরে থাকত শার্দুল। ট্রেনে করে মুম্বই আসতে ঘণ্টা তিনেক সময় লাগত। আমি তখন শার্দুলকে নিজের বাড়িতে এনে রাখি। আমার স্ত্রী প্রথমটায় রাজি হচ্ছিল না। পরে সম্মতি দেয়। অনেকেই সেই সময়ে আমাকে নিষেধ করেছিল। বলেছিল, অচেনা-অজানা একটা ছেলেকে নিজের বাড়িতে কেন রাখছ!’’

সেই সময়ে দীনেশ কারও কথা শোনেননি। বছর খানেকের বেশি শার্দুল ছিলেন গুরুর বাড়িতে। দীনেশ বলছেন, ‘‘শার্দুল যেমন দ্রুতগতির বোলার, তেমননই ব্যাটের হাতও বেশ ভাল। আমাদের স্কুলের হয়ে হ্যারিস শিল্ডের ম্যাচে রাধাকৃষ্ণণ স্কুলের বাঁ হাতি স্পিনার বিশাল ধ্রুবকে এক ওভারে ছ’টি ছক্কা মেরেছিল। সেই ম্যাচে ৭৩ বলে ১৬০ রান করেছিল শার্দুল।’’ তার পরেই শার্দুল চলে আসেন প্রচারের আলোয়। পিছনে ফিরে আর তাকাতে হয়নি।

ক্রিকেট বড় নিষ্ঠুর। আলোর দেখা যেমন মেলে। তেমনই দেখতে হয় অন্ধকার। শার্দুলকে বহু বার খারাপ সময়ের মুখোমুখি হতে হয়েছে। আর প্রতি বারই তাঁর জন্য গুরুবচন, ‘‘নিজের উপরে কখনও আস্থা হারাবে না। তোর মধ্যে প্রতিভা রয়েছে। বয়সও কম। সুযোগ আসবেই। তার জন্য নিজেকে তৈরি কর।’’
কোচের কথা মতো নাকল বল, স্লোয়ার ডেলিভারি, বাউন্সার রপ্ত করে ফেলেছেন শার্দুল। টি টোয়েন্টিতে ব্যাটসম্যানকে শান্ত রাখার এগুলোই অস্ত্র।

দীনেশ বলছেন, ‘‘ওর মাথায় কিছু জিনিস ঢুকিয়ে দিয়েছিলাম। বলেছিলাম, লাইন লেন্থ ঠিক রাখতে হবে। আর তার সঙ্গে বোলিংয়ে বৈচিত্র আনতে হবে। শার্দুল সেটাই করেছে। নিজেই কঠিন পরিশ্রম করে শিখে নিয়েছে স্লোয়ার-নাকল বল।’’

আরও পড়ুন: ‘আর কত পরীক্ষা দিতে হবে? সেরা হয়েও কেন বার বার দলের বাইরে থাকবে ঋদ্ধি?’

চোট, ধেয়ে আসা সমালোচনার ঝড়, ব্যর্থতা কাটিয়ে বার বার মাঠে ফিরে এসেছেন শার্দুল। গত বারের অভিশপ্ত আইপিএল ফাইনালের স্মৃতি দূরে ঠেলে দিয়ে এ বার দারুণ ভাবে ঘুরে দাঁড়াবেন শিষ্য। আশায় বুক বাঁধছেন গুরু। ক্রিকেট যেমন কাঁদায়, তেমনই কিন্তু হাসায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement