৫২ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন ক্রিকেটার শেন ওয়ার্ন
প্রয়াত শেন ওয়ার্ন। মাত্র ৫২ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন তিনি। মনে করা হচ্ছে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার এই প্রাক্তন ক্রিকেটারের।
ওয়ার্নের ম্যানেজমেন্ট শুক্রবার একটি বিবৃতি দিয়ে এই খবর জানায়। ওই বিবৃতিতে তারা জানায়, তাইল্যান্ডে প্রয়াত হয়েছেন তিনি। ওই বিবৃতিতে তারা লেখে, ‘নিজের ভিলাতে অচৈতন্য অবস্থায় পাওয়া যায় ওয়ার্নকে। চিকিৎসকদের সব রকম চেষ্টা সত্ত্বেও তাঁকে বাঁচানো যায়নি। পরিবার এই সময়ে গোপনীয়তা রক্ষা করার জন্য অনুরোধ করছে।’ এর বেশ কিছু এখনই জানানো হয়নি। ওয়ার্ন রেখে গেলেন তিন সন্তান ব্রুক, সামার এবং জ্যাকসনকে।
মৃত্যুর ১২ ঘণ্টা আগে অস্ট্রেলিয়ার আর এক প্রাক্তন ক্রিকেটার রডনি মার্শের প্রয়াণে টুইট করেছিলেন ওয়ার্ন। তিনিও বৃহস্পতিবার ৭৪ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হয়েছেন। সেই শোকবার্তায় ওয়ার্ন লিখেছিলেন, ‘রড মার্শ প্রয়াত হওয়ার খবর শুনে খুব খারা লাগছে। উনি ক্রিকেটের কিংবদন্তি ছিলেন। বহু তরুণ ক্রিকেটারের অনুপ্রেরণা ছিলেন। রড ক্রিকেটের যত্নকরতেন। অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডের ক্রিকেটারদের অনেক কিছু দিয়েছেন। ওঁর পরিবারকে অনেক অনেক ভালবাসা।’
গত সেপ্টেম্বরেই মজা করে বলেছিলেন, কোভিড থেকে সেরে উঠতে তিনি দিনে ১০০ সিগারেট খেতে পারেন। গত বছর কোভিড আক্রান্ত হয়েছিলেন। নিভৃতবাসে চলে যান। ফলে ইংল্যান্ডের ‘দ্য হানড্রেড’ লিগে লন্ডন স্পিরিট দলকে তাঁর কোচিং করানো হয়নি। কোভিডের দু’টি টিকাও নিয়েছিলেন তিনি।
৭০৮ টেস্ট উইকেটের মালিক তখন মজা করে বলেছিলেন, ‘‘খুব খারাপ লাগছে, যথেষ্ট গল্ফ খেলতে পারছি না। কারণ, আমার কোভিড হয়েছে। যা বুঝছি, কোভিডকে হাল্কা ভাবে নেওয়ার কোনও প্রশ্নই আসে না। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে, দিনে ১০০টা সিগারেট খেতে পারলে আমি কোভিডকে হারিয়ে দিতে পারব। কিন্তু তাতে কাজ হচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত ভেন্টিলেটরে চলে যেতে হল। দশ দিন নিভৃতবাসে থাকতে হয়েছে।’’
এখানেই শেষ নয়। কোভিডকে হারানোর জন্য আরও বিভিন্ন অদ্ভুত পন্থার কথা বলেছিলেন ওয়ার্ন। এক বার ভেবেছিলেন, পশুদের কৃমি কমানোর ওষুধ খাবেন। এক বার ভেবেছিলেন, জামা-কাপড় কাচার ব্লিচ খাবেন।
বরাবরই চমক দিতে ভালবাসতেন। মাঠের ভিতরে বল হাতে যেমন চমকে দিতেন ব্যাটারদের, তেমনই মাঠের বাইরেও চমকে দিতেন নিজের ক্যারিশ্মায়। জীবনের শেষ বেলাতেও চমকে দিয়ে গেলেন ওয়ার্ন।
বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা স্পিনার ওয়ার্নের ১৪৫টি টেস্টে উইকেট সংখ্যা ৭০৮। সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহকের তালিকায় তাঁর সামনে রয়েছেন শুধু মুথাইয়া মুরলীধরন। শ্রীলঙ্কার এই স্পিনার ১৩৩টি টেস্টে উইকেট নিয়েছেন ৮০০টি। এক দিনের ক্রিকেটে ১৯৪টি ম্যাচে ওয়ার্ন ২৯৩টি উইকেট নিয়েছেন। টেস্টে মাত্র এক রানের জন্য শতরান থেকে বঞ্চিত হন।
১৯৯৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকীপ জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। অ্যাশেজে তাঁর উইকেট সংখ্যা ১৯৫। আর কোনও বোলার অ্যাশেজে এত উইকেট নেননি।
১৯৯৩ সালে সিডনিতে ভারতের বিরুদ্ধে টেস্ট অভিষেক হয় এই লেগ স্পিনারের। তখন তাঁর ক্রিকেটীয় অভিজ্ঞতা বলতে সাতটি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ। সেই ম্যাচে রবি শাস্ত্রী, সচিন তেন্ডুলকররা তাঁকে দাঁত ফোটাতে দেননি। শাস্ত্রী ২০৬ রান করেছিলেন। সচিন ১৪৮ রানে অপরাজিত ছিলেন। ওয়ার্ন সেই ইনিংসে ৪৫ ওভার বল করে ১৫০ রান দিয়ে শুধু শাস্ত্রীর উইকেট নিয়েছিলেন।
এর পর অ্যাশেজ সিরিজে সম্পূর্ণ অন্য চেহারার ওয়ার্নকে দেখা যায়। ইংরেজরা নাস্তানাবুদ হয়ে যান তাঁকে সামলাতে। সিরিজে নিজের প্রথম বলেই মাইক গ্যাটিংকে বোল্ড করেছিলেন। সেই বলটিকে শতাব্দীর সেরা বল হিসেবে মনে করা হয়। লেগ স্টাম্পের বাইরে পড়ে বলটি শেষ পর্যন্ত গ্যাটিংয়ের অফ স্টাম্প নড়িয়ে দেয়। রাতারাতি তারকা হয়ে যান ওয়ার্ন। পরে গ্যাটিংকে ওই বলটি নিয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেছিলেন, ‘‘ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে যেতে পেরে ভাল লাগছে।’’
২০০৭ সালের অ্যাশেজে অস্ট্রেলিয়া ৫-০ ফলে ইংল্যান্ডকে হারানোর পরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানান ওয়ার্ন। তার পরেও সেই মরসুমে কাউন্টিতে খেলেছেন। তাঁর নতুন ক্রিকেট জীবন শুরু হয় আইপিএল-এর হাত ধরে। প্রথম আইপিএল-এ রাজস্থান রয়্যালসকে চ্যাম্পিয়ন করেন। পুরোপুরি ভাবে ক্রিকেটকে বিদায় জানান ২০১৩ সালে। তাঁর ক্রিকেট জীবনের শেষ ম্যাচ অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ লিগে। মেলবোর্ন স্টারসের হয়ে পার্থ স্কর্চার্সের বিরুদ্ধে সেই ম্যাচ খেলেছিলেন।
খেলা ছাড়ার পর যুক্ত হন ধারাভাষ্যে। পাশাপাশি লন্ডন স্পিরিট দলকে কোচিংও করান। খেলতে খেলতেই ২০০৪ সালে তৈরি করেন শেন ওয়ার্ন ফাউন্ডেশন। অসুস্থ, দুঃস্থ শিশুদের জন্য টাকা তোলার উদ্দেশে এই ফাউন্ডেশন তৈরি করেন।
মাঠে এবং মাঠের বাইরে বর্ণময় চরিত্রের অকাল প্রয়াণে ক্রিকেট একটু বিবর্ণ হল।