বিস্ফোরক: আফ্রিদির আত্মজীবনী নিয়ে ঝড় উঠেছে। ফাইল চিত্র
আত্মজীবনী ‘গেম চেঞ্জার’-এ একের পর এক বোমা ফাটাচ্ছেন প্রাক্তন পাক অধিনায়ক শাহিদ আফ্রিদি। তাঁর নিজের ঠিক বয়স, গৌতম গম্ভীর ও জাভেদ মিয়াঁদাদ সম্পর্কে মূল্যায়নের পরে এ বার ম্যাচ গড়াপেটা কাণ্ড নিয়েও ঝড় তুলেছে আফ্রিদির আত্মজীবনী।
যে বইতে তিনি লিখেছেন, ২০১০ সালে পাক ক্রিকেটে ‘স্পট ফিক্সিং’ কাণ্ডের অনেক আগেই তিনি ধরতে পেরেছিলেন ক্রিকেটার ও জুয়াড়িদের মধ্যে এসএমএস আদানপ্রদান চলছে। যা প্রমাণ-সহ তৎকালীন পাকিস্তান কোচ ওয়াকার ইউনিসকে জানানো সত্ত্বেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
২০১০ সালে ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড ‘নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ স্টিং অপারেশন চালিয়ে প্রথম ফাঁস করে অধিনায়ক সলমন বাট-সহ তিন পাক ক্রিকেটার ‘স্পট ফিক্সিং’ কাণ্ডে জড়িয়ে। আফ্রিদির দাবি, এই ঘটনার অনেক আগেই তিনি জানতেন জুয়াড়ি মজহর মজিদ ও পাক দলের কয়েকজন ক্রিকেটারের মধ্যে এসএমএস আদানপ্রদান চলছে।
কেন তাঁর কথা তখন শোনা হয়নি? আত্মজীবনীতে আফ্রিদি লিখেছেন, ‘‘টিম ম্যানেজমেন্ট তখন কোনও গুরুত্ব দেয়নি বিষয়টিকে। চূড়ান্ত বিভ্রান্ত হয়ে ধীরে চলার নীতি নিয়েছিল। হয়তো, টিম ম্যানেজমেন্ট বিষয়টি শুনে খুব ভয় পেয়ে থাকতে পারে। নয়তো, ওই ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত সলমন বাট, মহম্মদ আমির, মহম্মদ আসিফের উপর বেশি নির্ভর করছিল ভবিষ্যতের জন্য। সত্যি কারণটা কী, তা জানা নেই।’’
কী ভাবে আফ্রিদি পাক ক্রিকেটের এই কেলেঙ্কারি আগাম জানতে পেরেছিলেন? আফ্রিদি জানিয়েছেন, ২০১০ সালের জুন মাসে শ্রীলঙ্কায় এশিয়া কাপ হয়েছিল। সেখানেই জানতে পারেন, জুয়াড়ি মজহর মজিদ ও সলমন বাটের মধ্যে নিয়মিত এসএমএস আদানপ্রদান হচ্ছে। সেই মোবাইল বার্তা তিনি দেখেছিলেন বলেও দাবি আফ্রিদির। তা কী ভাবে সম্ভব হয়েছিল, সেই ব্যাখ্যাও আফ্রিদি দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘‘মজিদ ও সলমনের এসএমএস দেখতে পেয়েছিলাম শ্রীলঙ্কার সমুদ্র সৈকতে একটি বাচ্চা ও মোবাইল ফোন সারান, এমন এক ব্যক্তির সৌজন্যে।’’
পাকিস্তানের প্রাক্তন অধিনায়ক লিখেছেন, ‘‘মজহর মজিদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সেই সময় শ্রীলঙ্কার এক সমুদ্র সৈকতে ঘুরছিল। মজিদের মোবাইল ফোন ওর ছেলের হাত থেকে জলে পড়ে যায়। মজিদ ইংল্যান্ডে ফিরে গিয়ে সেই ফোন একটি দোকানে সারাতে দেয়। বেশ কয়েক দিন ফোনটি সেখানে ছিল। ওই দোকানের মালিক আবার আমার এক বন্ধুর বন্ধু। মজিদের ফোনটি সারাতে গিয়েই প্রথম ওই এসএমএসগুলো দেখে ফেলেছিল দোকানের মালিক। যা আমার বন্ধুর কানে আসে। সেখান থেকেই বিষয়টি আমি জানতে পারি। এ ছাড়াও আরও কয়েক জন এই ঘটনা জানতে পেরে যায়।’’ তবে আফ্রিদি ছাড়া কারা এই ঘটনা আগাম জানতে পেরেছিলেন, সে ব্যাপারে কিছু বলেননি এই প্রাক্তন পাক ক্রিকেটার।
আফ্রিদি বলেছেন, ‘‘মোবাইল বার্তা বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার পরেই কোনও এক সূত্রে হয়তো জেনেছিলেন ‘নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড’-এর সাংবাদিকেরা।’’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘‘বিষয়টি গুরুতর বুঝতে পেরেই তার পরে পুরো ঘটনা প্রমাণ-সহ দলের সে সময়ের কোচ ওয়াকার ইউনিসকে বলি। কিন্তু সে বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে উপর মহলে জানাননি। হয়তো ওয়াকার ভেবেছিলেন, বিষয়টা যে ভাবে দেখানো হচ্ছে, ততটা গুরুতর নয়। কিন্তু এটা যে কী ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলতে চলেছে পাক ক্রিকেটে তা কয়েক দিন পরে গোটা ক্রিকেট বিশ্ব বুঝতে পেরেছিল।’’
আফ্রিদি আরও লিখেছেন, ‘‘এর পরে আমি দলের ম্যানেজার ইয়াওয়ার সৈয়দকে সব জানাই। তাঁর কাছে আবেদন করি, ক্রিকেটাররা যেন মজহরের সঙ্গে সরাসরি দেখা করতে বা ফোনে যোগাযোগ না রাখতে পারে, সেটা দেখতে। সৈয়দ কোনও ব্যবস্থা না নিলে আমি তাঁকে এসএমএসগুলোর প্রিন্টআউট দেখিয়েছিলাম। আশ্চর্যজনক ভাবে সৈয়দ সে দিন খুব নিস্পৃহ ভাবে বলেছিলেন, আমরা কী করতে পারি? কিছুই না।’’
আফ্রিদি আত্মজীবনীতে উল্লেখ করেছেন, ‘‘এর পরেই বিষয়টি জেনে ফেলে ‘নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড’-এর সাংবাদিকেরা। তার পরে ইংল্যান্ডে খেলতে গিয়ে ব্যক্তিগত ভাবে দলের সবাইকে মজিদের সঙ্গে যোগাযোগ না রাখতে বলি। কিন্তু তাতে কোনও কাজ হয়নি। লর্ডসে প্রথম টেস্টে কিছু একটা দলের মধ্যে চলছে তা আন্দাজ করেই হতাশ হয়ে চতুর্থ দিন খেলার মাঝে অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিই সলমন বাটকে।’’