Shafali Verma

Shafali Verma: ইংল্যান্ড সফরে সাড়া ফেলে দেওয়া শেফালির চোখে সচিন হয়ে ওঠার স্বপ্ন

১১ বছর বয়সে রোহতক থেকে আট কিলোমিটার দূরে একটি কোচিং ক্যাম্পে ভর্তি করানো হয় শেফালিকে।

Advertisement

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত 

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২১ ০৭:৫৬
Share:

নজরে: শেফালির ব্যাট ভরসা হয়ে উঠেছে এখন দলের। ফাইল চিত্র।

মেয়ে হয়ে ক্রিকেট খেলবে? পড়াশোনা করবে না? ছেলেদের মতো ওর এত শক্তি আছে নাকি? ছোটবেলা থেকে এ ধরনের প্রশ্নই সঙ্গী ছিল শেফালি বর্মার।

Advertisement

রোহতকে ক্রিকেটার হিসেবে যাত্রা শুরু করার পথ ছিল খুবই কঠিন। বাবা সঞ্জীব বর্মা চাইতেন, তাঁর ছেলের মতো মেয়েও ক্রিকেটার হিসেবে জীবন শুরু করুক। ছেলেদের সঙ্গে তাই ম্যাচ খেলতে পাঠিয়ে দিতেন মেয়েকে।

শেফালি মেয়ে বলে তাকে দলে নেওয়া হত না। ছেলেরা বলত, ওর লেগে যাবে। সঞ্জীব বর্মার তরফে কোনও আপত্তি না থাকলেও বার বার এমনই যু্ক্তিতে ফিরিয়ে দেওয়া হত শেফালিকে। বাধ্য হয়ে মেয়ের চুল ছেলেদের মতো কাটিয়ে খেলতে পাঠান তিনি। দশ বছরের শেফালির খেলা দেখে মুগ্ধ হলেও প্রতিবেশীরা প্রশংসা করতেন না। তাঁদের যুক্তি ছিল একটাই। মেয়েরা আবার ক্রিকেট খেলে নাকি?

Advertisement

১১ বছর বয়সে রোহতক থেকে আট কিলোমিটার দূরে একটি কোচিং ক্যাম্পে ভর্তি করানো হয় শেফালিকে। সেখানে ছেলেদের সঙ্গেই শুরু হয় অনুশীলন। মাত্র ১১ বছর বয়সে অনূর্ধ্ব-১৪ বিভাগের ছেলেদের সঙ্গে অনুশীলন করতেন শেফালি। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন সচিন তেন্ডুলকর হওয়ার। তাই ওপেন করতে নেমেই বিপক্ষের বোলারের উপরে চাপ সৃষ্টি করার কায়দা ক্রমশ অভ্যাসে পরিণত করেন তিনি।

অনূর্ধ্ব-১৪ বিভাগে ছেলেদের সঙ্গে একটি ম্যাচে ওপেন করতে নেমে ২৫ বলে হাফসেঞ্চুরি করেছিলেন শেফালি। সেই দিন থেকেই তাঁর ছোটবেলার কোচ অশ্বিনী কুমার বুঝতে পেরেছিলেন, ছাত্রীর দক্ষতা। আনন্দবাজারকে অশ্বিনী বলছিলেন, ‘‘এ রকম প্রতিভা আমি আগে দেখিনি। আগে কোনও ওপেনারকে শুরু থেকেই বোলারদের উপরে এ ভাবে আক্রমণ করতে দেখিনি। মেয়েদের ক্রিকেটে এ রকম আগ্রাসী মেজাজেও যে খেলা যায়, তা ওকে দেখেই বুঝতে পারি।’’ ইংল্যান্ড সফরে এ বার মন জয় করে নিয়েছেন ভারতের মেয়েরা। তা শেফালির ব্যাটিংয়ের মাধ্যমেই হোক কী হরলীন দেওলের বিস্ময় ক্যাচে। শেফালি তো টেস্ট অভিষেকেই সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। টি-টোয়েন্টিতেও ভাল খেলছেন। ইংল্যান্ডের ক্রিকেট মহলেও শোনা গিয়েছে শেফালির প্রশংসা। অনেকেই তাঁকে মেয়েদের সহবাগ বলেও চিহ্নিত করছেন। আজ, বুধবার ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ফয়সালার ম্যাচ। সঙ্গত কারণেই ভারতীয় দল তাকিয়ে রয়েছে শেফালির ব্যাটিং বিক্রমের দিকেই।

শেফালির ছোটবেলার কোচ কখনও ছাত্রীর খেলার ধরন পাল্টানোর চেষ্টা করেননি। তিনি বলছিলেন, ‘‘যদি ভেবে নেন ও একাই ম্যাচ শেষ করে আসবে, তা হলে ধাক্কা খেতে পারেন। যে কোনও ইনিংস ভাল শুরু করে দেবে ও, এই নিশ্চয়তাটা দিতে পারি। ওর খেলার ধরন আমি কখনওই পাল্টানোর চেষ্টা করিনি।’’ যোগ করেন, ‘‘ছোট থেকেই বলত, সচিন হতে চায়। সচিনের মতোই বিপক্ষের বোলারদের উপরে চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করত।’’

জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে অজয় রাত্রার কাছেই শেফালি একবার বলেছিলেন, তিনি ওপেনার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে চান। তৎকালীন ভারতীয় মেয়েদের কোচ ডব্লিউ ভি রামনকে গিয়ে রাত্রা জানিয়েছিলেন, শেফালির ইচ্ছার কথা। প্রাক্তন ভারতীয় কিপার বলছিলেন, ‘‘ও কখনওই ধরে খেলতে পারে না। তাই আমি ওকে বলেছিলাম, মেয়েদের ক্রিকেটে সহবাগ হতে হবে তোকে।’’ শেফালির মধ্যে অবশ্য সহবাগের ছায়াই দেখছেন প্রাক্তনরা। নাসের হুসেন থেকে ভিভিএস লক্ষ্মণরা একটাই কথা বলেছেন— ‘‘তুমিই মেয়েদের ক্রিকেটের সহবাগ।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement