দুরন্ত: উইম্বলডনের পরে যুক্তরাষ্ট্র ওপেনের ফাইনালে সেরিনা। ছবি: এএফপি।
এক বছর আগে ঠিক এই সময়ে তিনি হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছিলেন। মেয়ে অলিম্পিয়া জন্মানোর পরে শারীরিক সমস্যায় তাঁর জীবনসংকটে পড়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। ভাবতে পারেননি এক বছরের মধ্যেই তিনি সেই লড়াই জিতে টানা দু’নম্বর গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনালে উঠবেন। তিনি সেরিনা উইলিয়ামস।
সেমিফাইনালে অ্যানাস্তাশিয়া সেভাস্তোভাকে ৬-৩, ৬-০ উড়িয়ে দিয়ে সেরিনা শুধু রেকর্ড সাত নম্বর যুক্তরাষ্ট্র ওপেন জেতার সামনেই নয়, তাঁর সামনে ২৪ নম্বর গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়েরও হাতছানি। ‘‘হাসপাতালের শয্যায় নড়াচড়া করতে পারছিলাম না, হাঁটতে পারছিলাম না, কিছুই করার মতো অবস্থা ছিল না। তার মাত্র এক বছর পরে সে ভাবে পর্যাপ্ত প্র্যাকটিস করতে না পেরেও টানা দু’নম্বর গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনালে উঠে দারুণ লাগছে। এত দ্রুত এত দূর আসার পরে আমি জেতার জন্য মুখিয়ে রয়েছি,’’ ফাইনালে ওঠার পরে বলেন সেরিনা। ২০১৫ এবং ২০১৬ যুক্তরাষ্ট্র ওপেনে সেমিফাইনালে ছিটকে গিয়েছিলেন সেরিনা। এ বার যদি তিনি খেতাব জিততে পারেন, তা হলে ক্রিস এভার্টকে ছাপিয়ে যাবেন মেয়েদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যুক্তরাষ্ট্র ওপেন জয়ী হিসেবে। সেই লড়াইয়ে ফাইনালে সেরিনার সামনে শুধু বাধা একটাই। ২০ বছর বয়সি জাপানের বিস্ময়-কন্যা নাওমি ওসাকা। যিনি ২২ বছর পরে প্রথম জাপানি মহিলা হিসেবে কোনও গ্র্যান্ড স্ল্যামের সেমিফাইনালে ওঠার রেকর্ড গড়েছিলেন আগেই। শেষ চারে স্থানীয় তারকা ম্যাডিসন কিইজকে ৬-২, ৬-৪ হারিয়ে প্রথম জাপানি মহিলা হিসেবে গ্র্যান্ড স্ল্যামের ফাইনালে ওঠার নজির গড়েছেন।
শেষ চারে বিপক্ষ ১৩টি ব্রেক পয়েন্ট পেলেও সব ক’টিই বাঁচান ওসাকা। কী ভাবে তিনি এতগুলো ব্রেকপয়েন্ট বাঁচালেন জানতে চাইলে ওসাকা বলেন, ‘‘তখন শুধু ভাবছিলাম, সেরিনার বিরুদ্ধে আমাকে খেলতেই হবে ফাইনালে।’’ কেন এ রকম ভাবছিলেন তিনি, ব্যখ্যা করতে বললে ওসাকার চটপট উত্তর, ‘‘কী বলছেন আপনি, ওর নাম সেরিনা, তাই চেয়েছিলাম।’’
অবশ্য এর আগে সেরিনার মুখোমুখি হননি ওসাকা, এমন নয়। মার্চে মায়ামি ওপেনে তিনি সেরিনাকে হারিয়েছিলেনও। কিন্তু সেই সেরিনা আর এখনকার সেরিনা এক নন। তখন সদ্য মেয়ে হওয়ার পরে কোর্টে নেমেছিলেন মার্কিন তারকা। ছন্দে ফেরার মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
এ বার যুক্তরাষ্ট্র ওপেনে ১৭ নম্বর বাছাই সেরিনা বরং ফাইনালে ওসাকার বিরুদ্ধে নয়া কৌশল প্রয়োগ করতে চান। তাঁর সেই কৌশল ফাঁসও করে দিয়েছেন তিনি। সেরিনা বলেছেন, রজার ফেডেরারের বিখ্যাত ‘এসএবিআর’ কৌশল প্রয়োগ করতে চান তাঁর চেয়ে ১৬ বছরের জুনিয়র প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে।
কী সেই কৌশল?
২০১৫ সালে হার্ডকোর্ট মরসুমে ফেডেরারের চালু করা এই কৌশলের নাম ‘সিক্রেট অ্যাটাক বাই রজার’। বিপক্ষের সার্ভিসের সময় তাঁর অজান্তে দ্রুত নেটের কাছে উঠে এসে হাফ বলিতে রিটার্ন শট মারা। যে কৌশলে দেখা গিয়েছে ফেডেরার রিটার্ন ঠিক কোথায় রাখতে পারে প্রতিপক্ষের আন্দাজ করা ভীষণ কঠিন হয়ে যায়। ফলে সহজ পয়েন্ট তুলে নেন ফেডেরার। এ ব্যাপারে সেরিনা বলেন, ‘‘আমি এই কৌশলটা অনুশীলন করে যাচ্ছি। কোন ম্যাচে আমি কৌশলটা প্রয়োগ করব সেটা নির্ভর করছে প্রতিপক্ষের উপরে। এ রকম (ওসাকা) খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে আমি অনেক ম্যাচ আগে হেরেছি। তাই এ বার একটু অন্য রকম কিছু প্রয়োগ করার কথা মাথায় রয়েছে।’’