অনিল কুম্বলে এবং বিরাট কোহালির সম্পর্ক নিয়ে টানাপড়েনের মধ্যেই নতুন নাটকের মঞ্চ উপস্থিত। আর তা হচ্ছে, কে হতে যাচ্ছেন কোচ কুম্বলের উত্তরসূরি? দু’টো নামের কথা প্রথমেই আনন্দবাজারে লেখা হয়েছিল। কোহালিদের পছন্দ রবি শাস্ত্রীকে। ডার্ক হর্স বীরেন্দ্র সহবাগ।
বোর্ড থেকে ‘শর্টলিস্টেড’ নাম প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে সহবাগ আছেন। শাস্ত্রী নেই। তাঁকে ডিরেক্টর হিসেবে ফেরানোর ব্যাপারে খুবই আগ্রহী কোহালি-রা। ক্রিকেটারদের ভোট প্রাধান্য পেলে শাস্ত্রীর ফেরার অনুকূলেই হাওয়া। কিন্তু তিনি আবেদন করেননি। অডি-জয়ী প্রাক্তন অলরাউন্ডারের বক্তব্য হল, বারবার তাঁকে অন্তর্বর্তী দায়িত্বের জন্য ডাকা হয়েছে। তিনি এসে সংক্ষিপ্ত মেয়াদে উন্নতি ঘটিয়েছেন দলের। আর কাজ ফুরিয়ে গেলেই তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি কখনওই দেওয়া হয়নি।
এ বার তাই শাস্ত্রী বলে দিয়েছেন, তিনি নিজে আবেদন করবেন না। বোর্ড থেকে তাঁর কাছে ফোন আসতে হবে যে, আমরা চাই আপনিই দায়িত্ব নিন। একমাত্র তবেই তিনি ইন্টারভিউ দিতে আসতে পারেন। সেটা সম্ভব হবে যদি কোহালি ধনুক ভাঙা পণ করে বসে পড়েন যে, শাস্ত্রী ছাড়া তিনি আর কাউকে গ্রহণ করবেন না। ততটা মরিয়া তিনি হবেন কি না, সেটা নিয়েই এখন প্রশ্ন।
কোচ নির্বাচনের কমিটি বা কর্তারা অধিনায়কের মতামত অক্ষরে অক্ষরে শুনে নতুন কোচ বাছবেন কি না, সেটাও দেখার। এ নিয়ে পরিষ্কার বিভাজন রয়েছে। এক দল মনে করছে, অধিনায়কের মতামত শোনা উচিত। কারণ, দলটা চালাতে হবে তাঁকে এবং কোচকে মিলে। আবার আর এক দলের মত, অধিনায়ক বা ক্রিকেটারদের কথা শুনে কেন কোচ ঠিক করা হবে? ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে কি শিক্ষক ঠিক করা হয়?
উৎসাহী ক্রিকেটভক্তদের জন্য আর একটি গুরুত্বপূর্ণ আপডেট হচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত এই মুহূর্তে ভারতীয় বোর্ডের প্রধান প্রশাসক বিনোদ রাই বার্মিংহামে পৌঁছচ্ছেন। আজ, শনিবারই তাঁর এসে পড়ার কথা। তখনও অধিনায়ক কোহালির সঙ্গে তাঁর কথা হতে পারে।
যদি না আগামী কয়েক ঘণ্টায় পাক ম্যাচের মহড়ার মধ্যে কোহালি বোর্ডের শীর্ষকর্তাদের কাছে তাঁর প্রথম পছন্দ হিসেবে শাস্ত্রীর নাম জানান, দৌড়ে ফেভারিট থাকছেন বীরেন্দ্র সহবাগ। বৃহস্পতিবার রাতেই নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে যে, সহবাগকে আবেদন করতে বলা হয়েছে বলেই করেছেন। কোনও সম্ভাবনা নেই মনে হলে তিনি যে আবেদন করবেন না, ঘনিষ্ঠমহলে পরিষ্কার করে দিয়েছিলেন বীরু।
শুক্রবার খোঁজ নিয়ে জানা গেল, সহবাগের সমর্থক হিসেবে এক প্রভাবশালী বোর্ডকর্তা তো আছেনই। সঙ্গে তিন ভারতীয় কিংবদন্তিকে নিয়ে তৈরি কমিটির সমর্থনও পেতে পারেন তিনি। তিন সদস্যের এই ক্রিকেট অ্যাডভাইসরি কমিটিতে আছেন সচিন তেন্ডুলকর, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং ভি ভি এস লক্ষ্মণ। তিন জনেরই খুব প্রিয় ক্রিকেটার সহবাগ। নজফগড়ের নবাব ওয়ান ডে-তে ওপেনিং পার্টনার হিসেবে খেলেছেন সৌরভ, সচিন দু’জনের সঙ্গেই।
সহবাগের ঝুলিতে কোচ হিসেবে খুব বেশি অভিজ্ঞতা নেই। কিংগস ইলেভেন পঞ্জাবের মেন্টর ছিলেন তিনি। তবু ব্যাটসম্যান বীরুর মতো মেন্টর বীরুর খোলামেলা, ভয়ডরহীন মনোভাবকে গুরুত্ব দিতে পারে সৌরভ-সচিনদের কমিটি। শুক্রবার ইংল্যান্ডের সময় বিকেল পর্যন্ত যা পরিস্থিতি, কুম্বলে সরে যেতে বাধ্য হলে সহবাগই তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে আসার ব্যাপারে হট ফেভারিট।
সহবাগ আবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে হিন্দি কমেন্ট্রি করছেন। গত কাল ওভালে প্রথম ম্যাচের পর শুক্রবার ছিলেন বার্মিংহামেও। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড ম্যাচের ফাঁকে তিনি সাংবাদিকদের কাছে মুখ খুলতে চাননি। আবার যাঁরা কোচ নির্বাচনে মুখ্য ভূমিকা নেবে, সেই ক্রিকেট অ্যাডভাইসরি কমিটির সদস্য সৌরভও অনেক দিন পরে কমেন্ট্রিতে ফিরেছেন। তিনি এবং বীরু— প্রাক্তন সেই ওপেনিং জুটির মাঝেমধ্যেই দেখা হয়ে যাচ্ছে। একেবারেই তাঁদের মধ্যে কোচ নির্বাচন নিয়ে কথা হয়নি, বিশ্বাস করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
সহবাগকে বোর্ডের তরফেই প্রথমে বলা হয়েছিল, তিনি ইচ্ছুক কি না। সেই সময় তিনি বলেন, কোচ হতে চান না। মেন্টরের দায়িত্ব নিতে পারেন। তবে আবেদন করে প্রত্যাখ্যাত হতে চান না তিনি। আর একটা কথাও ঘনিষ্ঠমহলে বলেছিলেন সহবাগ যে, অনিল কুম্বলের প্রতি তিনি খুবই শ্রদ্ধাশীল। তাই কুম্বলেকে নিয়ে এমন একটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে তিনি নিজে দৌড়ে এসে পড়তে চান না। দেখে কুম্বলেই বা কী ভাববেন? এমনটাই মত ছিল সহবাগের।
আরও পড়ুন: মুগুরুজা বুঝিয়ে দিচ্ছে, ট্রফির দৌড়ে কে এগিয়ে
সেখান থেকে তিনি যে মত পরিবর্তন করে আবেদন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা থেকে দু’টো জিনিস পরিষ্কার। বিরাট কোনও অঘটন না ঘটলে কুম্বলের বিদায় কার্যত নিশ্চিত। বোর্ডকর্তাদের মুখেও শোনা গেল একটা কথা যে, যতই শৃঙ্খলাপরায়ণ হোন না কেন, ড্রেসিংরুমের সমর্থন হারানো কোনও কোচ কী করে দায়িত্বে থাকতে পারেন? দলের মধ্যে অশান্তির বাতাবরণ চালু রাখার পক্ষপাতী নন কেউ। গুরু গ্রেগের সময় যেমন সচিন, সৌরভ-সহ গরিষ্ঠ সংখ্যক সদস্যের আপত্তিতে কোচকে বিদায় করতে হয়েছিল, এখানেও সেটা এড়ানোর উপায় নেই বলেই ইঙ্গিত।
কুম্বলের পক্ষে থাকা কেউ কেউ যদিও শান্তির প্রয়াস পুরোপুরি ছাড়ছেন না এখনও। প্রয়োজনে কোহালির সঙ্গে কথা বলা হতে পারে বলে এঁদের দাবি। প্রয়োজনে টিমের অন্যান্য সিনিয়রদের মতামত নেওয়া হতে পারে। তাঁদের যদি কুম্বলেকে মেনে নিতে রাজি করানো যায়, তা হলে তিনি থাকবেন। তবে দলের অধিকাংশ ক্রিকেটারের কোচ নিয়ে যেরকম বিরূপ মনোভাব হয়ে রয়েছে, সেই কাজ আদৌ সহজ হবে বলে মনে হচ্ছে না। কোহালির সঙ্গে মত পার্থক্য নিয়ে এমন বিতর্কের ঝড় চলার পরে কিংবদন্তি লেগস্পিনার নিজেও থাকতে চাইবেন কি না, সংশয় থাকছে। বরং জোরাল সম্ভাবনা, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পরে কুম্বলে নিজেই সরে দাঁড়াবেন।
সৌরভ বা সচিন যদি আসরে অবতীর্ণ হয়ে এখন মিটমাট করাতে পারেন, তা হলে অন্য কথা। শুক্রবার খবর রটে যায় যে, সৌরভ নাকি কোহালিদের সঙ্গে কথা বলেছেন। যদিও তিনি নিজে এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দিলেন। ‘‘পাকিস্তান ম্যাচ রবিবার। তার আগে এ সব নিয়ে কী কথা বলতে যাব!’’ বললেন তিনি।