উইম্বলডন খেলতে এসে সানিয়া গত কয়েক বছর সাউথ ফিল্ডসে যে রকম ছোট্ট ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকে, এ বারও তাই আছে।
কিন্তু এ বার ওর ফ্ল্যাটের নম্বর ১৩!
ভারতের টেনিস ইতিহাসে প্রথম উইম্বলডন ডাবলস চ্যাম্পিয়ন মেয়েকে পরের দিন সকালে সশরীরে অভিনন্দন জানাতে সাউথ ফিল্ডে গিয়ে ব্যাপারটা আবিষ্কার করে বেশ মজা লাগল।
সানিয়াকে বলায় ও-ও হেসে উঠল। ‘‘জয় আঙ্কল, তা হলে থার্টিন আমার লাকি নম্বর বলো!’’
গতকাল এখানে রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ ডাবলস ফাইনাল শেষ হওয়ার পর মোবাইলে অভিনন্দন জানিয়েছিলাম সানিয়াকে। তখনই ওর গলায় রীতিমতো উত্তেজনা ঝরে পড়ছিল। পরের দিন সামনাসামনি বলল, ‘‘উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ঘুম ভেঙে ওঠাটা একটা অসাধারণ অনুভূতি! পাঁচ বছর বয়সে টেনিস র্যাকেট ধরা ইস্তক আমার সবচেয়ে বড় স্বপ্ন ছিল উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন হওয়া। এখন সেটা হওয়ার পরেও কেমন যেন অবিশ্বাস্য লাগছে! আসলে এটা এক অসাধারণ সম্মান।’’
একেবারে ঠিক কথা। বিশেষ করে আমাদের ভারতীয় টেনিস প্লেয়ারদের কাছে উইম্বলডনই শেষ কথা। এখানে সাফল্য পাওয়াই চূড়ান্ত কীর্তি। আমি রামনাথন কৃষ্ণনের সঙ্গে ডেভিস কাপ চ্যালেঞ্জ রাউন্ডে সর্বকালের সেরা ডাবলস জুটি অস্ট্রেলিয়ার টনি রোচ-জন নিউকোম্বকে হারিয়েছি। তবু আমার কাছে চার বার উইম্বলডন সিঙ্গলস প্রি-কোয়ার্টার খেলাটা বেশি গৌরবের।
সানিয়া উইম্বলডন ডাবলস চ্যাম্পিয়ন হয়ে ১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা পাচ্ছে। কিন্তু আমরা দু’জনেই একমত— এত টাকার চেয়েও বেশি হল প্রেস্টিজ। উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন হিসেবে শনিবারের পর থেকে আজীবন যেটা পাবে ও। আমি তো বলব, সানিয়ার উইম্বলডন জেতাটা ভারতীয় খেলাধুলোর ইতিহাসেই এক বিরাট ঘটনা।
এত বড় কীর্তির পরেও অবশ্য গত রাতে কোনও সেলিব্রেশন করেনি সানিয়া। কারণ আজই ওর পার্টনার হিঙ্গিসের মিক্সড ডাবলস ফাইনাল আছে। ম্যাচটা আবার সানিয়ার কাছে ‘ডাবল ইন্টারেস্ট’-এর। একে তাঁর পার্টনার খেলছে, সঙ্গে আবার লিয়েন্ডার পেজ। সেন্টার কোর্টে ওই ম্যাচ দেখার পর সানিয়া যাবে উইম্বলডন বল-এ। এ বারের টুর্নামেন্টের এক জন চ্যাম্পিয়ন হিসেবে। ফেডেরার, জকোভিচ, না লিয়েন্ডার— কার সঙ্গে নাচার সুযোগ পেলে সবচেয়ে বেশি খুশি হবে জানতে চাইলে মুচকি হাসল। ‘‘নাচব কি না সেটাই ঠিক করিনি এখনও।’’
লিয়েন্ডারের কথায় মনে পড়ছে, গত অলিম্পিকে মিক্সড ডাবলসে সানিয়া কার পার্টনার হবে তা নিয়ে লি-হেশের মধ্যে সে কী গোলমাল! অথচ এ বার সানিয়া এখনই পরের বছর অলিম্পিকে নামার টিকিট পেয়ে গিয়েছে। যা অবস্থা, সানিয়াই এখন ঠিক করবে রিওতে ও কাকে নিয়ে খেলবে— লিয়েন্ডার, না বোপান্না?
এখন সানিয়ার অবশ্য উইম্বলডন-ঘোর চলছে। ‘‘এক-এক সময় মনে হচ্ছে এটা আশাতীত। আমি একটা গ্রেট পার্টনার পেয়েছি, যে আমাকে কোর্টে খারাপ সময়ে টেনে তুলেছে।’’ বলে সানিয়া আরও যোগ করছে, ‘‘ফাইনালে তৃতীয় সেটে ২-৫ পিছিয়ে পড়েও ম্যাচ বার করার জন্য কিন্তু সত্যিকারের দম আর সাহসের দরকার। আর সেটা আমাদের আছে বলেই ওই সময়েও ভাবিনি, আমাদের জন্য রানার আপ ট্রফিটা রয়েছে।’’
এই না হলে চ্যাম্পিয়নের দর্শন!