মিডল অর্ডারে নেমে ঝড় তুলতেন মাঠে। ক্রিকেটের পাশাপাশি বর্ণময় তাঁর ব্যক্তিগত পরিসরও। শোনা যায়, সিনেমায় অভিনয় করছিলেন বলে দলের সঙ্গে যাননি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেও। ব্যাকরণের বাইরে গিয়েই জীবনকে সাজাতে ভালবাসেন সন্দীপ পাটিল।
সন্দীপের জন্ম ১৯৫৬ সালের ৮ অগস্ট। ক্রিকেট খেলার ধারা পেয়েছিলেন বাবার কাছ থেকে। সন্দীপের বাবা মধুসূদন পাটিল ছিলেন প্রাক্তন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটার। পাশাপাশি ব্যাডমিন্টন, টেনিস এবং ফুটবলেও ছিল মধুসূদনের অনায়াস গতি।
সন্দীপ সাবেক বম্বে দলের হয়ে প্রথম রনজি ম্যাচ খেলেন ১৯৭৫-’৭৬ মরসুমে। তার কয়েক বছর পরে ১৯৮০ সালে অভিষেক জাতীয় দলে। সে বছরের জানুয়ারি মাসে প্রথম টেস্ট খেলেন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে।
ওয়ান ডে ম্যাচে প্রথম বার খেলাও ১৯৮০ সালেই। বিপক্ষ ছিল অস্ট্রেলিয়া। টেস্টে এবং ওয়ান ডে, দু’টি ফরম্যাটেই তাঁর কেরিয়ার ছিল স্বল্পস্থায়ী। টেস্টে খেলেছেন ৪ বছর। ওয়ান ডে ৬ বছর।
২৯ টেস্টে তাঁর মোট রান ১,৫৮৮। উইকেট পেয়েছেন ৯টি। ওয়ান ডে-তে তাঁর সংগ্রহ ১০০৫ রান। উইকেট শিকার ১৫টি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সঙ্গে বিদায় জানিয়েছিলেন ঘরোয়া ক্রিকেটকেও। কিন্তু পরে অবসর ভেঙে ফিরে আসেন ঘরোয়া ক্রিকেটে। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৩ অবধি ছিলেন মধ্যপ্রদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক।
জাতীয় স্তরে ‘ইন্ডিয়া এ’ দলের কোচ ছিলেন তিনি। তাঁর প্রশিক্ষণেই ২০০৩ বিশ্বকাপে কেনিয়া সকলকে চমকে দিয়ে পৌঁছেছিল সেমিফাইনাল অবধি।
বিতর্কিত ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লিগে সন্দীপ ছিলেন মুম্বই চ্যাম্পসের প্রশিক্ষক। তবে ২০০৯ সালে তিনি এই লিগ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন। বিসিসিআই-এর সঙ্গে নিজের সম্পর্কও ক্ষুণ্ণ হতে দেননি। বিসিসিআই-এর নির্বাচক কমিটির প্রধান নিযুক্ত হন ২০১২ সালে। টানা ৪ বছর তিনি ছিলেন এই দায়িত্বে।
১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ জয়ের পরে সন্দীপকে দেখা যায় সম্পূর্ণ অন্য ভূমিকায়। ‘কভি আজনবী থে’ ছবিতে তাঁকে অভিনয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়। তিনি রাজি হন। পুনম ঢিলোঁ এবং দেবশ্রী রায়, দুই নায়িকার সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করেন সন্দীপ।
আর এক ক্রিকেটার সৈয়দ কিরমানি ছবিতে ছিলেন খলনায়কের ভূমিকায়। ছবিতে পাটিল-কিরমানি অ্যাকশন দৃশ্য বাজিমাত করে দর্শকমহলে। প্রচুর সাড়া জাগিয়ে এসেও ছবিটি শেষ অবধি বক্স অফিসে ব্যর্থ হয়।
ছবির শ্যুটিং শুরু হয়েছিল ১৯৮৩ সালে। মুক্তি পেয়েছিল ২ বছর পরে। বলা হয়, এই ছবির জন্য জাতীয় দলের সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে পর্যন্ত যাননি পাটিল। কারণ হিসেবে অবশ্য চোটের কথা বলেছিলেন।
বক্স অফিসে আশানুরূপ সাফল্য না পেলেও ছবিতে দেবশ্রী রায়ের সঙ্গে সন্দীপ পাটিলের রসায়ন ছিল সুপারহিট। ক্রিকেটমহলে কান পাতলে শোনা যায়, তাঁদের সম্পর্ক শুধু অনস্ক্রিন নয়, ছিল অফস্ক্রিনও।
এই ছবির সময় বিবাহিত সন্দীপের সঙ্গে দেবশ্রীর প্রেম নিয়ে গুঞ্জন তীব্র হয়েছিল ক্রিকেট ও বিনোদন, দুই জগতেই। দেবশ্রীর সঙ্গে সম্পর্কের জেরেই নাকি বিধ্বস্ত হয় সন্দীপের দাম্পত্য় জীবন।
তবে সন্দীপ বা দেবশ্রী, কেউ তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি। তাঁদের প্রেমের কথা থেকে যায় গুঞ্জনের স্তরেই। কিছু দিন পর দু’জনে সরে আসেন সম্পর্ক থেকে।
ক্রিকেটার-ক্রিকেট প্রশাসক-অভিনেতার পাশাপাশি সন্দীপের সাংবাদিক পরিচয়ও আকর্ষণীয়। মরাঠি ভাষায় বহুল প্রচারিত ক্রীড়া পত্রিকা ‘একচ ষটকার’-এর সম্পাদক ছিলেন তিনি। সর্বোচ্চ বিক্রীত সংবাদপত্র ‘মহানগর’-এর সূত্রপাতও হয়েছিল তাঁর গ্যারাজে।
সন্দীপ এবং তাঁর স্ত্রী দীপার দুই ছেলে। চিরাগ ও প্রতীক।
বাবার থেকে অভিনয়ের ধারা পেয়েছেন চিরাগ। ‘চার্জশিট’, ‘ভাজনদার’, ‘ওয়েক আপ ইন্ডিয়া’-সহ বেশ কিছু হিন্দি ও মরাঠি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি।
কবীর খান পরিচালিত আসন্ন ছবি ‘৮৩’-তে তিনি অভিনয় করছেন তাঁর বাবা সন্দীপ পাটিলের ভূমিকাতেই। ছবিতে কপিল দেবের ভূমিকায় আছেন রণবীর সিংহ। রোমি হয়েছেন রণবীরের স্ত্রী দীপিকা পাড়ুকোন।
আর এক প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার সলিল আঙ্কোলা আত্মীয় হন পাটিলের। আঙ্কোলার মেয়ে সানার সঙ্গে বিয়ে হয়েছে সন্দীপের বড় ছেলে চিরাগের।
১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপজয়ী দলের অন্যতম সদস্য সন্দীপ পাটিল বন্যপ্রাণ নিয়েও উৎসাহী। বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের জন্য বার বার সরব হয়েছেন তিনি।
আত্মজীবনীর নাম সন্দীপ রেখেছেন ‘স্যান্ডি স্টর্ম’। তাঁর ছকভাঙা জীবনের সঙ্গে মিলিয়েই ঝোড়ো নামকরণ করেছেন জীবনের ইনিংসের।