ঋদ্ধিমান সাহা। ছবি: রয়টার্স
এই মুহূর্তে ঘটনাচক্রে শিলিগুড়ির পাপালি ওরফে বিশ্ব ক্রিকেটের সেরা উইকেটকিপার ঋদ্ধিমান সাহার আমি প্রতিবেশী। অনেকেই বলে থাকেন, ক্রিকেট খেলায় উইকেটরক্ষা একটা ধন্যবাদহীন কাজ। কিন্তু একজন প্রাক্তন উইকেটকিপার হিসেবে সেটা আমি মনে করি না। কারণ কোনও কাজ যদি উপভোগ করা যায়, তা হলে সেই কাজকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। ঠিক এই কারণেই ঋদ্ধিমান তাঁর উইকেটকিপিংকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যেতে পেরেছে।
শুরুতেই পাঠকদের মনে করিয়ে দিতে চাই, ঋদ্ধি কিন্তু দল থেকে বাদ পড়েনি। চোটের জন্য গত বছরের জানুয়ারি মাস থেকে দলের বাইরে ছিল। সুস্থ হয়ে নিজের জায়গায় ফিরেছে। এতেই স্পষ্ট ঋদ্ধির উপরে তাঁর অধিনায়ক বিরাট কোহালির আস্থা কতটা। ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহালি আজ বলে দিয়েছেন টেস্ট ক্রিকেটে ঋদ্ধিমানই বিশ্বের সেরা উইকেটকিপার। শুধু বিরাট নয়, আমিও মনে করি লাল বলের ক্রিকেটে এই মুহূর্তে ঋদ্ধিই সেরা কিপার।
কেন ঋদ্ধি এক নম্বরে? ক্রিকেট খেলায় তিন-চারটে বিষয় উইকেটকরক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেমন মনঃসংযোগ, ফিটনেস, ‘বল সেন্স’ ও অনুমানক্ষমতা। ঋদ্ধিমানের মধ্যে এই চারটি গুণের প্রতিটিই রয়েছে। হয়তো ঋদ্ধিমানের কিপিংয়ে ফারুখ ইঞ্জিনিয়ারের মতো দেখনদারি নেই। কিন্তু ঋদ্ধি অত্যন্ত কার্যকরী। কারণ, উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়ে ঋদ্ধির কখনও খারাপ দিন বা খারাপ ম্যাচ বলে আজ পর্যন্ত কিছু আসেনি। ধারাবাহিকতাই ওর অস্ত্র।
জানা নেই, কোন অজ্ঞাত কারণে সদ্য সমাপ্ত ক্যারিবিয়ান সফরে ঋদ্ধিকে নিয়ে গিয়ে খেলানো হল না। হয়তো গত বছরে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়ে ঋষভ পন্থের জোড়া শতরানের চাপে খেলা হয়নি ওর। তা সত্ত্বেও আমি বলব টেস্ট ক্রিকেটে ঋদ্ধিমান উইকেটকিপার হিসেবে অসাধারণ। চাপের মুখে বা যে উইকেটে বল বেশি ঘুরছে সেখানেও ঋদ্ধির বল তালুবন্দি করার দক্ষতা অনবদ্য। ভারতীয় স্পিনারদের মধ্যে আর অশ্বিনের বলে বৈচিত্র প্রবল। তাঁর বলেও নিখুঁত ভাবে উইকেটরক্ষা করতে পারে ঋদ্ধি।
খেলোয়াড় জীবনে আমদাবাদে একবার বোর্ড সভাপতি একাদশের হয়ে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলতে গিয়েছিলাম। সেই ম্যাচে অ্যালান নট বিশ্রাম নিয়েছিলেন। নট ছিলেন আমার আদর্শ। কথা বলে জেনেছিলাম, ফিটনেসকে কী অসম্ভব গুরুত্ব দেন তিনি। কেন ফিটনেস নিয়ে এত চর্চা করেন? উত্তরে নট সে দিন বলেছিলেন, ‘‘আমার ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেলছে বব টেলর।’’ সেই টেলর পরবর্তীকালে ইংল্যান্ডের হয়ে খেলেন। টেলরের প্রসঙ্গ আনলাম এই কারণেই যে ঋদ্ধির সঙ্গে বব টেলরের খেলার মিল পাই আমি। বব যখন ডান দিক বা বাঁ দিক থেকে বল ধরত, তখন মনে হত বল নিখুঁত ভাবে ওর দস্তানায় গিয়ে বসে যাচ্ছে। কোনও শব্দ হত না। নিখুঁত ‘হ্যান্ড প্লেসিং’। যা ঋদ্ধি কিপিং করার সময় দেখতে পাই।
ঋদ্ধির মনঃসংযোগও দুর্দান্ত। ঘূর্ণি উইকেটে অফস্পিনার বল করলে বাঁ পা রাখতে হবে অফস্টাম্পের একটু বাইরে। কারণ অফস্পিনারের বল অনেক সময় ব্যাট-প্যাডের মাঝখান দিয়ে ঢুকে পড়ে। তখনও দেখি অনুমানক্ষমতা ও ‘হ্যান্ড প্লেসিং’ করে দুর্দান্ত উইকেটরক্ষা করছে ঋদ্ধি। ওর ‘বল সেন্স’ দারুণ। তাই উইকেটের প্রকৃতি ও বাউন্সও চকিতে বুঝতে পারে। এটা ওর সহজাত দক্ষতা। বাঙালি হিসেবে আজ সত্যিই গর্ব হচ্ছে। কারণ, এই প্রথম কোনও ভারতীয় অধিনায়ক বললেন, একজন বাঙালি উইকেটকিপার বিশ্বের সেরা। যা আমার কাছে পদ্ম সম্মানের চেয়েও মূল্যবান।