উল্লাস: সবুজ-মেরুনে অভিষেক ম্যাচেই জোড়া গোল। শুক্রবার যুবভারতীতে স্পেনের চামোরো। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
মোহনবাগান ২ • মহমেডান ০
মোহনবাগানে কি তা হলে সালভা চামোরো যুগ শুরু হয়ে গেল?
ডুরান্ড কাপের উদ্বোধনী ম্যাচে একুশ মিনিটের মধ্যেই নিজের জাত চিনিয়ে জোড়া গোল করে সেই বার্তা কি দিতে শুরু করলেন বার্সেলোনার প্রাক্তনী?
হোসে ব্যারেটো, সনি নর্দের মতো ধারাবাহিকতা সবুজ-মেরুন জার্সির নতুন এই স্প্যানিশ দেখাতে পারবেন কি না, তা সময় বলবে। তবে শুক্রবার সন্ধ্যা থেকেই প্রায় ভর্তি হয়ে যাওয়া মোহনবাগান গ্যালারিতে শুরু হয়েছে চামোরোর নামে জয়ধ্বনি।
রিয়াল মুর্সিয়ার হয়ে কোপা দেল রে-তে খেলেছেন চামোরো। তিন বছর আগে বার্সেলোনা ‘বি’ দলের হয়ে ষোলোটা ম্যাচ খেলেছেন। পর্তুগালের প্রিমিয়ার ডিভিশনেও খেলার অভিজ্ঞতা আছে। ছয় ফুটের উপর উচ্চতার এই স্প্যানিশ স্ট্রাইকার জীবনে যত গোল করেছেন, তার বেশির ভাগই হেড থেকে। এ দিনও যুবভারতীতে তাঁর দুটো গোল হেড থেকে। ম্যাচের পরে তাঁর মুখে তাই হাজার ওয়াটের আলো। বলে দিলেন, ‘‘আর একটা ভাল রাত এল জীবনে। মাদ্রিদ এবং পর্তুগালেও আমার অনেক ভাল ভাল স্মৃতি আছে। দল জিতেছে, আমি গোল পেয়েছি। আরও একটা সুন্দর স্মৃতি তৈরি হল।’’
কিবুর ছাত্ররা অবশ্য মরসুম শুরুটা করলেন স্প্যানিশ আর্মাদার কথা মনে করিয়ে দিয়ে। অন্তত প্রথমার্ধে। অনুশীলনে আগের দিন ফ্রি-কিকের যে অনুশীলন হয়েছিল, শুরুর দু’মিনিটের মধ্যেই তা কার্যকর হল। জোসিবো বেইতিয়ার ক্রস থেকে হেডে গোল করে গেলেন চামোরো। বেইতিয়ার ডান-পা খুব ভাল। ফ্রি কিক বা কর্নারে তিনি বল ফেলেন নিখুঁত জায়গায়। উনত্রিশ বছর বয়সী চামোরো পরের গোলটিও মাথা দিয়ে। আশুতোষ মেহতার ক্রস থেকে। আর ওই গোলের পরই চামোরোকে অভিবাদন জানাতে গ্যালারিতে জ্বলে উঠল হাজারে হাজারে মোবাইল আলো।
স্প্যানিশ ঝড় আটকাতে সুব্রত ভট্টাচার্য ‘আলট্রা ডিফেন্সিভ’ ফুটবল খেলার অঙ্ক করেছিলেন। ৩-৫-২ ফর্মেশনে মাঝমাঠ জমাট করে থামাতে চেয়েছিলেন কিবু-বাহিনীকে। নিজে একসময় ভারতের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার ছিলেন। কিন্তু তাঁর মতো একজন ফুটবলারও যে তাঁর দলে নেই। প্রথম ধাক্কাতেই ডুবে গেল মহমেডান। সাদা-কালো জার্সি তাই শিল্টন পালকে প্রথম বিপদে ফেলার সুযোগ পেল বিরতির এক মিনিট আগে। আর্থার কোশির শট রুখলেন মোহনবাগান গোলকিপার। পরে আরও দুটো গোলের সুযোগ পেয়েছিল মহমেডান। তবে শটে বিষ ছিল না। ফাঁকা গোলে বল ঠেলতে ব্যর্থ হলেন তীর্থঙ্কর সরকার।
জোড়া গোলে জিতলেও কিবুর দল এখনও পুরো তৈরি নয়। পুরো শহরের মতো মাঝেমধ্যেই এ দিন বৃষ্টি নেমেছে স্টেডিয়ামে। কখনও অঝোরে, কখনও ঝিরঝিরি। মোহনবাগানের খেলাও পাল্লা দিয়ে কখনও ভাল, কখনও মন্দ। শুরুর দিকে প্রচুর পাস খেলেছে কিবুর দল। সেটা যেমন চোখের আরাম দিয়েছে। অন্যদিকে চামোরো, বেইতিয়া, মোরান্তেরা কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই সাধারণ মনে হয়েছে সবুজ-মেরুনকে। যা থেকে স্পষ্ট, স্প্যানিশরা খেললেই কিবুর দল দৌড়েছে, না হলে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। প্রবল বৃষ্টির মধ্যেও সেনা ব্যান্ডের মূর্ছনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন উদ্বোধন করেন বাংলায় প্রথমবার অনুষ্ঠিত ডুরান্ডের। সেই টুনার্মেন্টের প্রথম ম্যাচ জিতে খুশি কিবু বলে দিলেন, ‘‘প্রথম ম্যাচ জিতে ভাল লাগছে। তবে সব বিভাগেই আরও উন্নতি করতে হবে। বিশেষ করে ফিটনেস।’’ পাশাপাশি তাঁর মন্তব্য, ‘‘এক দেশের চার বিদেশি দলে থাকায় সুবিধা হয়েছে। কিন্ত আমার আসল খেলোয়াড়রা হল ভারতীয়। স্প্যানিশরা তাদের
সাহায্য করবে।’’
মোহনবাগানের শুরুটা ভাল হল। চামোরো এবং বেইতিয়া— দুই বিদেশি সুগন্ধী ছড়িয়েছেন। বিদেশিরাই এখন ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দেন। সে দিক দিয়ে দেখতে গেলে কিবুর দলকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতেই পারেন তাঁর দলের সমর্থকরা।
মোহনবাগান: শিল্টন পাল, আশুতোষ মেহতা, ফ্রান মোরান্তে (ফ্রান গঞ্জালেস), শেখ সাহিল (শেখ ফৈয়াজ), গুরজিন্দর সিংহ, ধনচন্দ্র সিংহ, ননগাম্বা নাওরেম (ইমরান খান), আলেকজান্দ্রো জেসুরাজ, জোসিবো বেইতিয়া, সুরাবুদ্দিন মল্লিক,
সালভা চামোরো।
মহমেডান: শুভম রায়, কামরান ফারুক, করিম ওমোলোজা, সুমিত সাঁধু, হিরা মন্ডল (আসিফ আলি), সত্যম শর্মা, মুদা মুসে, শোভন সেন, তীর্থঙ্কর সরকার, আর্থার কোশি, আমির হোসেন।