Salim Durani

‘মৃত্যু’র দু’দিন পরে সেলিম দুরানির জন্মদিন পালন!

বুধবার সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছিল মৃত্যুর সংবাদ। চাঞ্চল্য পড়ে গিয়েছিল ক্রিকেটমহলে। পরে অবশ্য উঠে আসে সত্যি ঘটনা।

Advertisement

সৌরাংশু দেবনাথ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২০ ১৬:০৫
Share:

ক্রিকেটপ্রেমীদের হৃদয়ে অমলিন সেলিম দুরানির এই ছবিই। —নিজস্ব চিত্র।

মৃত্যুর দু’দিন পরে সশরীরে জন্মদিন পালন!

Advertisement

এমন অদ্ভূতুড়ে কাণ্ডই ঘটল সেলিম দুরানিকে নিয়ে। কাবুলে জন্মানো একমাত্র ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেটার ‘প্রিন্স সেলিম’ নামেই পরিচিত। ফেলে আসা ক্রিকেটজীবনে যেমন খেয়ালখুশি মতো হাঁকাতেন ছক্কা, ৮৬ বছরের জন্মদিনেও দেখা গেল সেই মেজাজে। মৃত্যুর ভুয়ো খবরকেই যেন পাঠিয়ে দিলেন জীবনের বাইরে, সোজা গ্যালারিতে।

বুধবারই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছিল মৃত্যুর সংবাদ। চাঞ্চল্য পড়ে গিয়েছিল ক্রিকেটমহলে। পরে অবশ্য উঠে আসে সত্যি ঘটনা। সেলিম দুরানি স্বয়ং ফেসবুকে জানিয়ে দেন যে তিনি জীবিতই। আর শুক্রবার আশপাশের এলাকায় খাদ্য সামগ্রী বিতরণের মাধ্যমে জন্মদিন পালনও করলেন। বাড়িতে তাঁর ইন্টারভিউয়ের জন্য ভিড়ও করল মিডিয়া।

Advertisement

আরও পড়ুন: কাটল বাধা, সোমবারই অস্ট্রেলিয়া উড়ে যাচ্ছেন ফিট রোহিত

যদিও জন্মদিন পালনের মতো মনের অবস্থা নেই পরিবারের। গত ১৫ বছর ধরে ভাগ্নী ফাজিয়া লালার সঙ্গে জামনগরের বাড়িতে থাকতেন সেলিম দুরানি। ভাগ্নীই দেখাশুনা করতেন। সদ্য, গত মাসে প্রয়াত হয়েছেন প্রিয় ভাগ্নী। শোকের আবহ রয়েছে। এই অবস্থায় জন্মদিনে হইচই একেবারেই চাননি প্রবীণ ক্রিকেটার। আর তাই চ্যারিটিতে মন দেওয়া হয়েছে। আশপাশের বাড়ি, কাছাকাছি মহল্লায় খাদ্যদ্রব্য দেওয়ার মধ্যে দিয়েই তাই প্রধানত পালিত হল জন্মদিন।

আনন্দবাজার ডিজিটালকে স্বয়ং সেলিম দুরানি বললেন, “এই বয়সে আর কীসের জন্মদিন! সেলিব্রেট করার জন্য তো পকেটে পয়সা থাকা জরুরি!” বলেই হেসে উঠলেন। যদিও তা বেরিয়ে পড়া যন্ত্রণা চাপা দেওয়ার চেষ্টা হিসেবেই কানে বাজল। বোঝা গেল শুধু মানসিক কষ্টই সঙ্গী নয়। আর্থিক স্বচ্ছলতার অভাবও প্রতিফলিত কথায়। যতই তা হাসির মোড়কে মুড়ে দেওয়া হোক না কেন।

সামনে কেক, শুক্রবার জামনগরের বাড়িতে মিডিয়ার মুখোমুখি সেলিম দুরানি। —নিজস্ব চিত্র।

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্রোহ করছে শরীর। কানে পরিষ্কার শুনতে পান না। বুঝতেও লাগে সময়। জন্মদিনে ফেসবুকে ভক্তরা পোস্ট করছেন ছবি, আসছে একের পর এক শুভেচ্ছা, বাড়িতে হাজির মিডিয়া— কেমন লাগছে এক সময় বলিউডি পারভিন ববির বিপরীতে ‘চরিত্র’ সিনেমার নায়কের? মোবাইলের অন্য প্রান্ত থেকে ভেসে এল, “আচ্ছা লাগ রহা হ্যায়। খুব ভাল লাগছে। থ্যাঙ্ক ইউ ভেরি মাচ।” অল্প কথায় সারতে পারলেই যেন স্বস্তি।

বয়সের থাবা পড়েছে স্মৃতিতেও। ১৯৩৪ সালের ১১ ডিসেম্বর কাবুলে জন্ম হয়েছিল তাঁর। সেলিমকে নিয়ে পরিবার যখন করাচি চলে আসে তখন তাঁর বয়স মাত্র ৮ মাস। হিসেব মতো, ৮৬ পূর্ণ হল তাঁর। অথচ, বললেন, এটা তাঁর ৮৩ বছরের জন্মদিন!

এবং এই বয়সেও ধরে রেখেছেন স্পোর্টসম্যান স্পিরিট। ভাগ্নে ইরফান শেখের কাছে জানা গেল, নিজের মৃত্যু সংবাদ প্রচারিত হওয়ার কথাও গ্রহণ করছেন নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে। ইরফান বললেন, “ওটা ছিল একটা গুজব। যা ভাইরাল হয়ে উঠেছিল। আর এটা ওঁর কানেও এসেছিল। উনিই ফেসবুকে পোস্ট করেন, স্থানীয় মিডিয়ার সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। সবাইকে জানান যে ঠিক আছেন। আসলে উনি খুব দয়ালু স্বভাবের। লোকজনের ভুল-ত্রুটি মাফ করে দেন অনায়াসে। ফলে, এই খবরটাও সহজ ভাবে নিয়েছিলেন।”

মৃত্যুর গুজবে সেলিম দুরানির প্রতিক্রিয়া।

বর্ণময় ক্রিকেট জীবন তাঁর। ১৯৬০ সালে মুম্বইয়ে টেস্ট অভিষেক। ১৯৬১-৬২ মরসুমে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়ে অবদান ছিল বাঁ-হাতি স্পিনারের। শেষ ২ টেস্টে নিয়েছিলেন ১৮ উইকেট। ১৯৭১ সালে পোর্ট অফ স্পেনে ভারতের জয়েও রেখেছিলেন অবদান। ফিরিয়েছিলেন ক্লাইভ লয়েড ও গ্যারি সোবার্সকে। পরের বছর মধ্যাঞ্চলকে দলীপ ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন করিয়েছিলেন অলরাউন্ড দক্ষতায়। পশ্চিমাঞ্চলের বিরুদ্ধে ফাইনালে বল হাতে নিয়েছিলেন ৯ উইকেট। আর ব্যাট হাতে রান তাড়ায় নেতৃত্ব দিয়ে অপরাজিত থেকেছিলেন ৮৩ রানে। চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছিল, এটা দলীপ ট্রফি, নাকি দুরানি ট্রফি!

আরও পড়ুন: অজিদের থেকে ভারতীয়দের কাছে লকডাউন অনেক কঠিন ছিল, দাবি শাস্ত্রীর

টেস্ট দলে একবার তাঁকে বাদ দেওয়ায় স্লোগান উঠেছিল, ‘নো দুরানি, নো টেস্ট’। ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে পরের টেস্টে তাঁকে ডাকতে বাধ্য হয়েছিলেন নির্বাচকরা। এমনই ছিল জনপ্রিয়তা। আর ছিল গ্ল্যামার। জনতার দাবিমতো ৬-৭ বার ছয় মারার কথা অতীতে বলেছিলেন নিজেই। যা তাঁকে করে তুলেছিল বিখ্যাত। তবে তার অনেক আগে, ছয়ের দশকের গোড়াতেই প্রথম ভারতীয় ক্রিকেটার হিসেবে পেয়েছিলেন অর্জুন সম্মান। ২৯ টেস্টে এক সেঞ্চুরি সহ ১২০২ রান আর ৭৫ উইকেটের পরিসংখ্যানে তাই তাঁকে মাপা শুধু কঠিনই নয়, আদতে অসম্ভবই। ক্রিকেট-চেতনায় প্রভাব ফেলার ব্যাপারটাই যে পরিসংখ্যানে অনুপস্থিত!

ক্রিকেটের সঙ্গে অন্তরের সেই যোগাযোগ এখনও অমলিন। টিভিতে দেখেন ক্রিকেট। ভালবাসেন বিরাট কোহালির ব্যাটিং। অস্ট্রেলিয়া সফর যদিও ব্যতিক্রম। পারিবারিক শোকে খেলা দেখতে ইচ্ছা হয়নি এখনও। ভাগ্নীর মৃত্যু বড্ড ধাক্কা দিয়েছে। টিভিতে ব্যাট-বলের লড়াই দেখার ইচ্ছেই এই মুহূর্তে গিয়েছে হারিয়ে। প্রিয় ক্রিকেটকেও তাই আপাতত দূরে সরিয়ে দিয়েছেন জনতার আদরের প্রিন্স সেলিম!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement