বিমল কুমারের অ্যাকাডেমিতে প্রথম প্রশিক্ষণ শুরু সাইনার। পরে তিনি যোগ দেন পুল্লেলা গোপীচন্দের অ্যাকাডেমিতে। আর সেখানে যাওয়ার পরে আরও পরিণত হয়ে ওঠেন তিনি। জুনিয়র স্তর থেকেই একের পর এক পদক জিতেছেন।
শুভ জন্মদিন সাইনা ফাইল চিত্র।
এক গ্লাস করে দুধ খেয়ে একটার পর একটা ম্যাচে জিতছে ছোট্ট মেয়েটি। আর তা দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছেন সেখানে উপস্থিত প্রতিযোগীদের বাবা-মা থেকে শুরু করে কোচ। কে এই মেয়ে? কী ভাবে অবলীলায় একের পর এক প্রতিযোগীকে সে হারাচ্ছে? বিস্ময়ের সেই শুরু। হরিয়ানার হিসার থেকে আসা সেই ছোট্ট মেয়েটিই যে পরবর্তীতে ভারতীয় ব্যাডমিন্টনের মুখ হয়ে উঠবেন তা সেই মুহূর্তে কেউ ভাবতে না পারলেও ইঙ্গিত তখনই মিলেছিল। রাজ্য থেকে প্রথমে জাতীয় স্তরে ও তার পর আন্তর্জাতিক স্তরে একের পর এক পুরস্কার জিতেছেন। পেয়েছেন মেজর ধ্যানচাঁদ (তৎকালীন রাজীব) খেলরত্ন ও অর্জুন পুরস্কার। বার বার চোট-আঘাতের বিরুদ্ধে লড়াই করে ফিরে এসেছেন। বৃহস্পতিবার সেই সাইনা নেহওয়ালের ৩২তম জন্মদিন।
সাইনার বাবা হরবীর সিংহ নেহওয়ালকে কাজের সূত্রে পরিবার নিয়ে হিসার থেকে হায়দরাবাদে চলে যেতে হয়। মা উষারানি নেহওয়াল ছিলেন রাজ্যস্তরের ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়। মূলত তাঁর তাগিদেই সাইনার ব্যাডমিন্টন খেলা শুরু। ছোট থেকে ক্যারাটে শেখার জন্য শারীরিক ভাবে যথেষ্ট শক্ত ছিলেন সাইনা। কঠোর পরিশ্রম করতে পারতেন। মেয়ে যাতে ভাল খেলোয়াড় হয়ে উঠতে পারেন তার জন্য চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখেননি বাবা-মা। সব সময় মেয়েকে আগলে রাখতেন। দিন-রাত ব্যা়ডমিন্টন নিয়েই পড়ে থাকতেন ছোট্ট সাইনা।
একের পর এক পদক জিতেছেন সাইনা ফাইল চিত্র
বিমল কুমারের অ্যাকাডেমিতে প্রথম প্রশিক্ষণ শুরু সাইনার। পরে তিনি যোগ দেন পুল্লেলা গোপীচন্দের অ্যাকাডেমিতে। আর সেখানে যাওয়ার পরে আরও পরিণত হয়ে ওঠেন তিনি। জুনিয়র স্তর থেকেই একের পর এক পদক জিতেছেন। ২০০৬ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ ব্যাডমিন্টনে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হন। তখন সাইনার বয়স ছিল ১৬। ২০০৭ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে প্রথম বার অল ইংল্যান্ড খেলেন সাইনা। ২০০৮ সালে বিশ্ব জুনিয়র ব্যা়ডমিন্টন চ্যাম্পিয়ন হন।
যত দিন এগিয়েছে সাইনার পদকের সংখ্যা বেড়েছে। ২০০৯ সালে প্রথম ভারতীয় হিসেবে বিডব্লিউএফ সুপার সিরিজ জেতেন তিনি। কমনওয়েলথ গেমসে ২০১০ ও ২০১৮ সালে মোট তিনটি সোনা জেতেন সাইনা। সিনিয়র বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা না পেলেও ২০১৫ সালে রুপো ও ২০১৭ সালে ব্রোঞ্জ জেতেন।
তবে সাইনার জীবনে সেরা মুহূর্ত ২০১২ লন্ডন অলিম্পিক্সে ব্রোঞ্জ পদক জয়। সেমিফাইনালে ওয়াং ইহানের কাছে হারলেও ব্রো়ঞ্জ পদকের খেলা চলাকালীন প্রতিপক্ষ অবসৃত হওয়ায় পদক জেতেন তিনি। সাইনা প্রথম ভারতীয় ব্যাডমিন্টন তারকা যিনি অলিম্পিক্সে পদক জিতেছেন।
চোট পেয়েও বার বার কোর্টে ফিরে এসেছেন সাইনা ফাইল চিত্র
২০১৫ সালে বিশ্বের এক নম্বর মহিলা ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় হন সাইনা। তিনিই প্রথম মহিলা ও প্রকাশ পাড়ুকোনের পরে দ্বিতীয় খেলোয়াড় যিনি শীর্ষস্থান পেয়েছেন। পরে অবশ্য পিভি সিন্ধুও বিশ্বের এক নম্বর হন। অলিম্পিক্সে দু’টি পদকও জেতেন তিনি।
একের পর এক ট্রফি জিতলেও বার বার চোট আঘাতে ব্যাহত হয়েছে সাইনার কেরিয়ার। কখনও হাঁটু, কখনও গোড়ালির চোট তাঁকে কোর্টের বাইরে রেখেছে। তার প্রভাব পড়েছে খেলায়। একের পর এক প্রতিযোগিতা থেকে নাম তুলে নিতে হওয়ায় র্যাঙ্কিংয়েও পতন ঘটে সাইনার। তাঁর জায়গায় ব্যাডমিন্টনের মুখ হিসেবে উঠে আসেন সিন্ধু।
এর মধ্যেই দীর্ঘ দিনের বন্ধু ব্যাডমিন্টন তারকা পারুপল্লি কাশ্যপকে বিয়ে করেছেন সাইনা। পা দিয়েছেন রাজনীতির আঙিনাতেও। কিন্তু এখনও একই রকমের খিদে নিয়ে কোর্টে নামেন তিনি। পরিশ্রম করেন। এখনও স্বপ্ন দেখেন। লড়াই করেন। ছোট থেকে লড়াই করে সফল হয়েছেন সাইনা। তিনি জানেন লড়াইটা করেই যেতে হয়।